‘ফারাবিকে ধরে কি হবে, সে ঘটনাস্থলে ছিলই না’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ অভিজিৎ রায় হত্যার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ফারাবী শফিউর রহমানকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ‘লোক দেখানো’ বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের বাবা ড. অজয় রায়।
শুক্রবার সকালে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির ক্যামেরায় এ অভিযোগ জানান অভিজিতের বাবা।
ড. অজয় বলেন, ‘ফারাবিকে ধরে কি হবে? সে একজন উস্কানিদাতা হতে পারে। সে তো ঘটনাস্থলে ছিলই না। আমি চাই আসল হত্যাকারীকে যে দুইজন মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে গেছে। এদের চিহ্নিত করতে এতক্ষণ লাগে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশের উচিত ছিল সাথে সাথে মোটর গাড়ি নিয়ে তাদের অনুসরণ করা। প্রত্যক্ষদর্শীরাই বলেছে, পুলিশ তাদের পেছনে ধাওয়া করে নাই।’
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড নিযে পুলিশ সন্তোষজনক ভূমিকা না রাখলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. অজয় ছেলের খুনের বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু এফবিআই যুক্ত হয়েছে এরা হয়তো এত তাড়াতাড়ি ছাড়বে না, এরা শেষ দেখে যাবে।’
এদিকে শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা পরিদর্শন করে অভিজিৎ নিহত হওয়ার জায়গার ছবি তুলে নিয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর চার সদস্য।
তারা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখেও ছবি তোলেন।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় দুর্বৃত্তদের চাপাতি হামলার শিকার হয়ে মারা যান অভিজিৎ রায় (৪২)।
ওই সময় অভিজিতের সাথে থাকা তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও (৩৫) আক্রান্ত হন। তার মাথায় চাপাতির চারটি আঘাত লাগে এবং তার বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ ঘটনায় গত ২ মার্চ যাত্রাবাড়ীর বাসস্ট্যান্ড থেকে ফারাবি শফিউর রহমানকে অভিজিৎ হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
পরে ফারাবিকে অভিজিৎ হত্যা মামলা তদন্তে দায়িত্ব প্রাপ্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়। মঙ্গলবার তাকে ১০ দিনের রিমাণ্ডে নিয়েছে ডিবি।
ফারাবিকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবিটি সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশি বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবী থানাধীন পলাশনগরের ৫৬/৩ নম্বর নিজ বাড়ির সামনে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার ওরফে ‘থাবা বাবাকে’ কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
রাজিবকে হত্যার পর ফারাবী তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘যেই ইমাম থাবা বাবার জন্য জানাজা পড়াবে সেই ইমামকেও হত্যা করা হবে। জানাজার নাময হচ্ছে মুসলমানদের জন্য। কোন নাস্তিক মুরতাদ যে সারা জীবন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে গালিগালাজ করেছে তার কখনো জানাজা হতে পারে না। থাবা বাবার লাশ ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানায় বাঘের খাদ্য হিসাবে দেয়া হোক। এই বাংলার মাটি কোন নাস্তিক মুরতাদ যে সারা জীবন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে তার লাশ তার গর্ভে আশ্রয় দিবে না।’
পরে এ স্ট্যাটাস-মন্তব্যকে কেন্দ্র করে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে দাবি করা হয়, ফারাবী রাজীব হত্যার জন্য জড়িত।
উপর্যুপরি এ দাবির প্রেক্ষিতে ওই বছরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে ফারাবীকে একটি মেস থেকে গ্রেফতার করে হাটহাজারী থানা পুলিশ।
পরে ফারাবীকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফারাবীর কাছ থেকে রাজীব হত্যাকাণ্ডের বিশেষ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
অভিজিতের মৃত্যুর পরও সামাজিক মাধ্যম, গণমাধ্যম ও অভিজিতের স্বজন-সমর্থকরা ফারাবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছেন।
এখানেও ঘুরে ফিরে অভিজিতের ব্যাপারে ফারাবীর একটি ফেসবুক-মন্তব্য সামনে আনা হয়েছে।
৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ফারাবী ‘মান্নান রাহী’ নামে এক ব্যক্তি ট্যাগ করে মন্তব্য করেন, ‘অভিজিৎ রায় আমেরিকায় থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে।’
এই স্ট্যাটাসটিকে কেন্দ্র করেই ফারাবীকে অভিজিৎ হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন খুনী মনে করা হচ্ছে। তবে ফারাবীর অতীত ঘেটে তার মানসিক অসুস্থতার তথ্য পাওয়া গেছে।