পেট্রোলবোমা থেকে রক্ষার প্রযুক্তি উদ্ভাবন
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ রাজনৈতিক সহিংসতায় ব্যবহার হচ্ছে পেট্রোলবোমা। উচ্চমানের দাহ্য পদার্থ থাকায় নাশকতাকারীরা নাশকতায় ব্যবহার করছে এটি। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে শিশুসহ নানা বয়েসী মানুষ। পুড়ে যাচ্ছে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। ফলে পেট্রোলবোমা আতঙ্কে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকছেন অনেকেই। সমসাময়িক এ সমস্যার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) তরুণ বিজ্ঞানী ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন এবার পেট্রোলবোমার আগুন থেকে গাড়ির যাত্রীদের রক্ষার নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। ফলে পেট্রোলবোমার আগুনে আর কোনো যাত্রীকে দগ্ধ হয়ে পঙ্গু বা আকালে মৃত্যুবরণ করতে হবে না।
বারির চত্বরে সাংবাদিকদের সামনে ইয়ামিন তার উদ্ভাবিত ওই প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক ও প্রয়োগ পদ্ধতি তুলে ধরেন। পরে তিনি ব্রি’র চত্বরে খোলা মাঠে জানালার একটি ফ্রেমের পেছেনে বিশেষ পর্দা টানিয়ে নিজে পেট্রোলবোমা ছুঁড়ে তা পরীক্ষা করে দেখান।
এসময় বারি’র মহাপরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম মণ্ডল, পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, পরিচালক সেবা ও সরবরাহ, ড. মো. রওশন আলী, মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান, ড. মো. মিয়ার উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইয়ামিন বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রতিদিনই পেট্রোলবোমার আগুনে ঝলসে প্রাণ হারাচ্ছে অথবা পঙ্গু হচ্ছে সাধারণ জনগণ। বিশেষ করে গণপরিবহনের সাধারণ যাত্রীরা। পেট্রোলবোমার আগুন থেকে জীবন ও পরিবহন সুরক্ষিত রাখার কোনো সহজ এবং কম মূল্যের লাগসই প্রযুক্তি দেশে বর্তমানে নেই। এ চিন্তা থেকেই সাধারণের জীবন রক্ষার্থে মানবতার স্বার্থে একাট সহজ কার্যকরী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পেট্রোলবোমার আঘাত ও আগুন সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এতে আগুন যানবাহনের ভিতর ছড়াতে পারবে না। ফলে যাত্রীরা পেট্রোলবোমার ক্ষতি থেকে সহজেই রক্ষা পাবে। এ প্রযুক্তি একটি বড় বাসে ব্যবহারের জন্য খরচ হবে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
পদ্ধতি:
গাড়ির জানালায় ব্যবহারের কাঁচকে স্বচ্ছ স্কচটেপ দিয়ে লেমিনেশনকরন:
যানবাহনের জানালার কাঁচের দু’পাশই ৩ ইঞ্চি চওড়া স্বচ্ছ স্কচটেপ দিয়ে লেমিনেশন করে নিতে হবে যা পেট্রোলবোমার নিক্ষেপ করলে জানালার কাঁচ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ভেতরে ছিটকে পড়া এবং পেট্রোল ও আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধ করবে। এখানে নিক্ষিপ্ত পেট্রোলবোমার ক্ষতি ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব।
জানালার ভেতর দিকে বিশেষ পর্দার ব্যবহার:
বিশেষ পর্দা তৈরি করণ: হার্ডওয়ারের দোকানে কাঠে বার্নিশ করার জন্য যে পাতলা জালি কাপড় পাওয়া যায় তার উপরে চক পাউডার, সঙ্গে স্টেশনারির দোকান থেকে কেনা আঠা বা গাম (স্বচ্ছ) ও পানি মিশিয়ে তৈরি করা কাই দিয়ে প্রলেপ দিতে হবে। পরে রোদে শুকিয়ে ওই কাইয়ের প্রলেপযুক্ত কাপড় পর্দা হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। (কাইয়ের মিশ্রণটি তৈরির জন্য এক কেজি চক পাউডারের সঙ্গে এক লিটার পানি ও ২৫০ গ্রাম আঠা বা গাম প্রয়োজন হবে। আর পরিমান বেশি প্রয়োজন হলে ওই অনুপাত ঠিক রেখে মিশ্রণটি তৈরি করে নেয়া যাবে।)
বিশেষ পর্দাটি অতিউচ্চ শোষণক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ার কারণে নিক্ষিপ্ত পেট্রোলবোমার পেট্রোল বা অকটেন দ্রুত শুষে নেবে ও তেল কম ছড়িয়ে পড়বে। বোমার কিছু অংশ বাসের জানালার কাঁচ ভেঙে ভেতরে ঢুকলেও তা পর্দাটি আগুন জ্বলতে ও তেল ছিটকে যেতে বাধা দেবে। চক পাউডার (কার্বনেট) আগুনের তাপে কিছু জ্বলে সাময়িক কার্বন-মনো-অক্সাইড ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে আগুনের দাহ্য ক্ষমতা কমিয়ে ও আগুন দ্রুত নিভিয়ে ফেলে। এ বিশেষ পর্দাটি দাহ্য নয় এবং অন্যকে জ্বলতেও বাধার সৃষ্টি করে।
এ দু’টি পদ্ধতি এক সঙ্গে বাস মালিকরা যানবাহনে ব্যবহার করলে যাত্রীদের জীবন এবং যানবাহন পেট্রোলবোমার আগুন থেকে রক্ষ করা যাবে। গাড়ির মালিক, চালক ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এ প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরা গেলে অনায়াসে, কম খরচে গাড়ির যাত্রীদের প্রেট্রোল বোমার হাত থেকে অকাল মৃত্যু ও দ্বগ্ধ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
এর আগে ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন সমুদ্র বা নদীতে অনাকাঙ্ক্ষিত তেল শোষণের প্রযুক্তি, পানিতে ডুবে যাওয়া জাহাজ, নৌকা বা অন্যকোনো বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ের প্রযুক্তি, মাটির আর্দ্রতা নির্ণয়ের প্রযুক্তি, এক টাকায় ফরমালিন পরীক্ষার প্রযুক্তি ও শাক-সব্জি, ফলমূল টাটকা রাখার মাটির ফ্রিজ উদ্ভাবন করেছিলেন।
মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘বারির এ তরুণ বিজ্ঞানীর উদ্ভাবনী শক্তি অনেক বেশি। যখনই কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখনই তিনি সমসাময়িক ওই সমস্যার সমাধানে কাজ শুরু করেন এবং একটা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ফেলেন। সেটা কৃষি ক্ষেত্রেই হোক আর কৃষি বহির্ভূত বিষয় হউক। আমি আশা করি আগামীতে তাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। ফলে দেশ ও জাতি আরো উপকৃত হবে।’