সিলেটে আড়ংয়ে পেট্রোল বোমা ॥ অটোরিকশায় ককটেল, আহত শিশুসহ ৬
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ বড় শপিং মল আড়ং। ভর দুপুরে হামলা হয়। পেট্রল নিক্ষেপ করে পোড়ানো হয় গাড়ি। এ ঘটনার আধাঘন্টার মাথায় ককটেল নিক্ষেপ করা হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। যাত্রী ছিল কোলের শিশুও। ককটেল বিস্ফোরিত হয়ে ২ শিশু, চালক আহত হয়েছে। বিরোধী দলের কর্মসূচিতে এতদিন ককটেল ফাঁকা জায়গায় নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে এমনটি দেখা গেছে। গতকাল থেকে আতঙ্ক ছড়ানোর ককটেল বিদ্ধ করছে মানুষকেও। সন্ত্রস্ত্র হচ্ছে শিশুরাও। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় নগরীর নয়াসড়কের জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউস ‘আড়ং’এ ককটেল হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হামলাকারীরা প্রথমে ‘আড়ং’ লক্ষ্য করে ২ টি ককটেল ছুড়েছে। এতে ককটেলগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। ক্ষতি হয় ‘আড়ং’ এর দুতলার সামনের একটি গ্লাস। ওই সময় দুর্বৃত্তরা একটি নোয়া গাড়িতে আগুন দেয়। রড় দিয়ে ভেঙে ফেলে একটি প্রাইভেট কার ও একটি সিএনজি আটোরিকশার গ্লাস। তবে এতে এক তরুণী ও গাড়ীচালক আহত হয়েছে। পৃথক ককটেল হামলায় ২ শিশুসহ মোট ৬ জন আহত হন।
আড়ং এর সিকিউরিটি মো. মাসুক মিয়া জানান, আড়ং’র সামনের প্রধান ফটকে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন, সোয়া ১২টার দিকে একজন কাল করে লম্বা লোক তার মুখে হালকা খুচাখুচা দাড়ি সাথে ৫/৬ জনকে নিয়ে মাসুককে গেট ছাড়তে বলে। মাসুম গেট ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে, কাল যুবক হাতের রড দিয়ে মাসুককে আঘাত করতে চাইলে সে সরে যায়। রডের আঘাত তার শরীরে না লেগে গ্যাটে পরে। পরে দ্রুত ৩ জন যুবক আড়ং’এর গেটখুলে ঢুকেই ১টি ককটেল আড়ং লক্ষ করে মারে। সাথেসাথে বিস্ফারণ কটে। এরপরই তারা আর একটি ককটেল মারে সেটিও বিস্ফোরণ ঘটে। ক্রেতারা ভয়ে দিকবেদিক ছুটাছুটি শুরু করেন। ওই সময় একটি নোয়া গাড়িতে তারা পেট্রল ঢেলে আগুন এবং একটি প্রাইভেটকার ও সিএনজি ভাঙচুর করে দ্রুত বাহিরে চলে যায়। তিনি বলেন, বাহিরে তাদের আর লোক ছিল। হামলাকারী ৩জন বাইরে যাওয়ার সাথে সাথে আরো ৩ জন ৩টি মোটর সাইলেল করে তাদেরকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
সিনিয়র সিকিউরিটি মঈন উদ্দিন জানান, যখন হামলাকারীরা সামনের গেট ছেড়ে ভেতরে ঢুকে যাবে; তখন তিনি আড়ং’র সামনের সাটার বন্ধ করে দেন। তখন হামলাকারীরা তাকে অক্ষত ভাষায় গালি দেয়। তারা গাড়িতে আগুন দিয়ে এবং ভাঙচুর কারার পরই চলে যায়। সাথেসাথে মঈন উদ্দিন অগ্নি নির্বাপকযন্ত্র দিয়ে নোহা গাড়িটির আগুন নিভিয়ে ফেলেন। খবর পেয়ে র্যাব-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলে জানান তিনি।
আড়ংয়ের সুপারভাইজার হাসান জানান, হামলায় প্রতিষ্ঠানের সামনের একটি গ্লাসের ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানের কোনো জিনিস পুড়েনি। তিনি বলেন, অল্পের জন্য প্রতিষ্ঠান রক্ষা পেয়েছে। ক্রেতারা আতঙ্কিত হয়ে চলে গেছেন। ঘটনার পর গতকাল প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই হামলার পর গতকালের জন্য আড়ং’র বিক্রি বন্ধ ছিল বলে জানান তিনি।
এদিকে, রাত ৮টায় নগরীর জিন্দাবাজর লতিফ সেন্টারের সামনে ১টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুবৃৃত্তরা। এসময় কামাল আহমদ নামের এক নির্মান শ্রমিক গুরুতর আহত হন। তাকে সাথেসাথে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মিরের ময়দানে ককটেল হামলায় ১৮ মাস বয়সী একটি শিশুসহ দুই শিশু আহত হয়েছে। তারা হল হাফিজুর (১৮ মাস) ও নাফিসা (৮)। তারা পরস্পর ভাই-বোন বলে জানা গেছে। সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জের মাহবুবুর রহমান লায়েকের সন্তান হাফিজুর ও নাফিসা। তারা ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি রয়েছে। এ ঘটনায় তাদেরকে বহনকারী সিএনজি অটোরিকশা চালক শহীদ আহমদও আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১টার দিকে নগরীর মিরের ময়দানে বাংলাদেশ বেতারের পাশে বিকট শব্দে পর পর দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় অভিভাবকদের সাথে সিএনজি অটোরিকশায় যাত্রা পথে ওই দুই শিশু আহত হয়। তাৎক্ষনিকভাবে তাদেরকে ওসমানী হাসপাতালের ইমার্জেন্সী বিভাগে নেয়া হয়। পরে শিশু দুটিকে শিশু সার্জারি বিভাগে ভতি করা হয়।
নগরীর খাসদবীর এলাকার মদনী জামে মসজিদের সামনে ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের সামনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। বেলা ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খাসদবীর মদনী জামে মসজিদের সামনে ডিউটিরত ছিলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এসময় তিনটি মোটর সাইকেলে কয়েকজন যুবক এসে তাদের সামনে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে পুলিশ সদস্যরা তৎপর হওয়ার আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় কোন হতাহতের খবর প্ওায়া যায়নি।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রহমত উল্লাহ জানান, সিলেট আড়ং’এ হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ও মিরেরময়দানের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করবে। তিনি বলেন, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
বিচ্ছিন্ন ওই কয়েকটি ঘটনা ছাড়া সিলেটে ২০ দলীয় জোটের ফের ৭২ ঘন্টার দ্বিতীয় দিনের হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত হয়। নগরীতে রিকশা, অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা সব সময় চলাচল করছে। নগরীর বড় বড় বিপনীবিতানগুলো সকালের দিকে বন্ধ থাকলেও সন্ধ্যার আগে বেশ কিছু বিপনীবিতার খোলা হয়েছে। দুপুরের পরপরই কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল থেকে বিভিন্নস্থানে দূরপাল্লার যান ছেড়ে যায়। আর ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক ছিল।