বেতন পেলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তা কর্মচারীরা, স্বস্তি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাঝে অবশেষে ফিরেছে স্বস্তি। বেতন পেয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পেয়ে থাকেন। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসের বেতন তারা পেয়েছেন গতকাল। তাও সম্ভব হয়েছে স্থানীয় সরকারের একটি চিঠির কারণে। কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জানান, স্থানীয় সরকার যদি সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে আর্থিক লেনদেনের ক্ষমতা না দিতেন তাহলে কবে তাদের বেতন কবে হতো তা সঠিক ভলা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে অনেকেই সময়মত দিতে পারেননি বাসাভাড়া আর দোকান বাকি।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, কর্পোরেশনের মেয়র নিয়ে জটিলতার কারণে কোনো চেক স্বাক্ষর হচ্ছিলনা সিটি কর্পোরেশনে। যার কারণে বেতনও হচ্ছিলনা প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারির। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কারাগারে যাওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদ নিয়ে মেয়র প্যানেলের প্রথম ও দ্বিতীয় সদস্যের দ্বন্দ্ব মাথাছাড়া দিয়ে ওঠে। আরিফুল হক ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেন মেয়র প্যানেলের দ্বিতীয় সদস্য অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরীকে। আর স্থানীয় সরকারের এক আদেশে মেয়র প্যানেলের প্রথম সদস্য রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে অনুরোধ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে অস্থির হয়ে ওঠে সিটি কর্পোরেশন। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরণের চেকের স্বাক্ষর। আটকা পড়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সংস্কার কাজের বিল। জানুয়ারি মাসের বেতন সময়মত পাওয়া না পাওয়া নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। সিটি কর্পোরেশনের ৫০ থেকে ৬০ টি গাড়ির ডিজেল পেট্রলেরও বিল বন্ধ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম যখন তখনই রোববার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সিটির প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতার বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এনামুল হাবীবকে। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরই আগে কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতনের চেক স্বাক্ষর করেন। গতকাল পর্যন্ত কর্পোরেশনের ১১৩৩ জন কর্মকর্তা কর্মচারির বেতন নিশ্চিত হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. লোকমান আহমদ জানান, ইতোমধ্যে ৪৫০ জন নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারি, ৩০০ লেভার ও ১৬৯ জন সুইপারের বেতন হয়েছে। গতকাল ২১৪ জন মাষ্টাররোলের কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতনের স্বাক্ষর করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কর্মকর্তা জানান, যদি গত রোববার প্রধান নির্বাহীকে দায়িত্ব দেয়া না হত তাহলে নগরীর অবর্জনাও পরিস্কার করানো সম্ভব হতনা। কারণ হিসেবে তিনি ওই কর্মকর্তা জানান, গাড়ি চলাতে ডিজেল প্রয়োজন আর তা কর্পোরেশনে বিল করে নিতে হয়। এত দিন কোনো বিল হচ্ছিল না।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব জানান, , ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে জটিলতা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এবং মন্ত্রনালয়ের পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তিনি সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিরা বেতন পেয়েছেন। বাকি যে সকল কাজ থেমে আছে তাও পর্যায়ক্রমে করা হবে।
প্রসঙ্গত, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় গত ২৭ ডিসেম্বর ধরে কারাবান্দি। ইতোমধ্যে তাকে সিটি করপোরেশন আইনে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে; কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে প্যানেল মেয়র হিসেবে কে দায়িত্ব পালন করবেন তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। এ নিয়ে প্রথম থেকেই চলছে জটিলতা। শেষপর্যন্ত বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। হাইকোর্ট এ ব্যাপারে একটি স্থিতাবস্থা দিয়েছে।
আরিফুল হক চৌধুরী আদালতে আত্মসমপর্ণের আগে সিসিক মেয়র প্যানেলের দ্বিতীয় সদস্য কাউন্সিলর সালেহ আহমদ চৌধুরীকে তার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের অফিস আদেশ দিয়ে যান। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ মেয়র প্যানেলের প্রথম সদস্য রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিলে জটিলতা সৃষ্টি হয়।