কনস্টেবল পেটানো সেই ওসি মরিয়া
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ কুলাউড়ায় কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল শরাফত আলীকে (৪৫) পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ৭ দিনের মধ্যে দেয়ার কথা থাকলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ রয়েছে, কনস্টেবলকে পেটানো ওসি জাহাঙ্গীর আলম ঘটনা তদন্তের প্রতিবেদন নিজের পক্ষে নিতে নানা ফন্দি-ফিকির করছেন। এছাড়া ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে আহত কনস্টেবলকে বাধ্যতামূলক ১৫ দিনের ছুটিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
কুলাউড়া রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি ঘটনার পর রেলওয়ের চট্টগ্রাম (এসআরপি) নজরুল ইসলাম ঘটনাটি তদন্ত করতে রেল পুলিশের (আখাউড়া সার্কেল) ইন্সপেক্টর নাছিরুল ইসলামকে নির্দেশ দেন। পরদিন তিনি সরেজমিনে কুলাউড়া রেলওয়ে থানায় উপস্থিত হয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তদন্তকারী ওই পুলিশ কর্মকর্তা অভিযুক্ত ওসি জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তার পক্ষে রিপোর্ট জমা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া তদন্ত শুরুর পর ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও ১৫ দিন হতে চললেও এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি তিনি।
এদিকে ঘটনার পর এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় রেলওয়ে থানা পুলিশের একাধিক পুলিশ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার দুপুরে নির্যাতনের শিকার কনস্টেবল শরাফত আলীর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি কাছে কন্নাজড়িতকণ্ঠে অভিযোগ করেন, ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই্ তাকে ১৫ দিনের ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে শেরপুরে বাড়িতে আছেন।
তিনি আরও বলেন, দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় পিটা খেলাম কিন্তু অর্থের বিনিময়ে ঘটনার মূল রহস্য পাল্টে গেলো বলে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। এতো বড় ঘটনার পরও তদন্ত কর্মকর্তারা কোনো সঠিক রিপোর্ট না দেয়া ও তার চাকরি চলে যাচ্ছে এমন খবরও শুনে মানষিক চাপে ভুগতেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সবকিছু বলতেছি, কিন্তু পত্রিকায় আমার এমন মন্তব্য ওসি স্যার দেখলে সমস্যা হবে।’ এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চান তিনি।
এদিকে নির্যাতিত পুলিশ কনস্টেবল শরাফত আলীর পক্ষে এক সাংবাদিককে মোঠোফোনে ওসির মারধরের ঘটনাটি সঠিক বলার দায়ে একই থানার পুলিশ কনস্টেবল মো. আবুল হোসেনকে ওসি জাহাঙ্গীর সম্প্রতি ময়মনসিংহ জেলায় বদলি করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদন না দেয়ার ব্যাপারে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর নাছিরুল ইসলাম প্রতিবেদন জমা না দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এছাড়া ওসি জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন প্রভাবিত করার ব্যাপারে অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক ভাই এখন আমি ঝামেলায় আছি পরে ফোন দিবেন।’ এ বলে লাইন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া রেলওয়ে থানার (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের মোঠফোনে জানতে চাইলে বলেন, ‘একটা ঘটনা হয়েছে, এ বিষয়টা নিয়ে এতো লেখালেখি করে কোনো লাভ হবে না।’ তদন্ত প্রতিবেদন তার পক্ষেই থাকবে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে কুলাউড়া রেলওয়ে প্লাটফরমে কাউন্টারের সামনে দায়িত্বরত অবস্থায় রেলওয়ে পুলিশ কনস্টেবল শরাফত আলীকে বেধড়ক পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠান ওসি জাহাঙ্গীর আলম। পরে এ সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরে ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।