এরপরও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন রেশমা

reshmaসুরমা টাইমস ডেস্কঃ ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় চিকিৎসাধীন রেশমা বেগম (৩০) বার বার তাঁরে সাড়ে তিন বছরের মেয়ে শিশু মার্জানকে কোলে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হওয়ার পর তার আকুতি-বোমা মাইর‌্যা ওরা আমার হাত পুড়াইছে। মাইয়্যারে কোলে নিতে পারি না। ফুটফুটে শিশুকন্যা ও স্বামী মাহবুব আলমের সঙ্গে গত ২০ জানুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে যাচ্ছিলেন গ্রামের বাড়ি বরিশালের কলাপাড়া। রাজধানীর খিলগাঁও থানার দক্ষিণ গোড়ানে রয়েছে তাদের সাজানো সংসার। মাহবুব প্রাইভেটকার চালান। রেশমা সামাল দেন সংসার। ১৪ বছরের ছেলে আবদুর রহমানকে বোনের বাসায় রেখে রওনা দেন তারা গ্রামের বাড়ির দিকে। জরুরি পারিবারিক কাজে যাচ্ছিলেন।
ওই দিন হরতাল-অবরোধের আতঙ্ক নিয়েই সায়েদাবাদ থেকে আবদুল্লাহ পরিবহনের বাসে চড়েন রেশমা-মাহবুব। তবে বরিশাল পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি তাদের। কিন্তু রাত সাড়ে ১২টার দিকে বরিশাল শহর পার হওয়ার পরই নেমে আসে দুর্ভোগ। এ সময় বাসের বা পাশে পড়তে থাকে একের পর এক পেট্রলবোমা। জানালার পাশে বসে থাকা রেশমার বাঁ হাতে আঘাত করে বোমা। তার গায়ে জড়ানো চাদরে আগুন ধরে যায়। পাশে মাহবুব নিজের প্রাণের মায়া না করে জড়িয়ে ধরেন মেয়ে মার্জানকে। হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসেন বাইরে।
জীবন বাঁচানোর সেই সংগ্রামের কথা বলার সময় আতঙ্ক ফুটে ওঠে রেশমার চেহারায়। রেশমা বলেন, একটার পর একটা বোমা আইস্যা পড়ছিল।
তাই বাসের জানালার কাঁচ ভাঙা ছিল। ভাঙা জানালা দিয়াই লাফ দেই। স্বামী মাহবুবেরও বাঁ হাতের পুরো কবজি ঝলসে গেছে। কিন্তু যন্ত্রণায় কাতর রেশমা-মাহবুব আগলে রাখেন মেয়ে মার্জানকে। আহত এই দুজনকে পুলিশ বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে দুদিন তাদের চিকিৎসা চলে। হাতে ব্যান্ডজ নিয়ে মেয়ে মার্জানকে নিয়ে কনকনে শীতের মধ্যে লঞ্চে করে গত শনিবার ভোরে তারা ঢাকায় চলে আসেন। সকালে তারা ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে।
প্রাণে বেঁচে যাওয়ায় নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন মাহবুব ও রেশমা। বার্ন ইউনিটে বোনের স্বামী মোজাম্মেলের কোলে ঘুমিয়ে থাকা মার্জানকে দেখছিলেন আর রেশমার দুই চোখ ভিজে যাচ্ছিল। মেয়ের দিকে তাকিয়ে রেশমা বলেন, ছেলেরে আমাদের লগে লই নাই। থাকলে আল্লাই জানে কী হইত, দুই দিন মাইয়্যারে কোলে নিতে পারি নাই। বরিশালে ওরে দেখমু, না আমাগো চিকিৎসা করামু বুঝতে পারছিলাম না।
অনেকটাই ক্ষোভের সাথে রেশমার স্বামী মাহবুব বলেন, বলেন, এই অবস্থার কি সমাধান হইব, জানি না। তবে আমাদের চিকিৎসা যেন ভালো হয়। ওনারা রাজনীতি করবে আর আমাদের পুড়তে হবে তাই না, দেশটা তো মঘের মুল্লুক!
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শংকর পাল জানান, রেশমা-মাহবুব এখন শঙ্কামুক্ত। রেশমার বাঁ হাতের ৩ শতাংশ এবং মাহবুবের ১ শতাংশ পুড়ে গেছে। তবে ক্ষত সারতে সময় লাগবে।