স্মরণকালের ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়ের কবলে নিউইয়র্কসহ কয়েকটি স্টেট

জরুরী অবস্থা ঘোষণা ঃ থমকে গেছে জনজীবন

usa
তুষার ঝড়ে লন্ডভন্ড ও জনমানব শুণ্য নিউইয়র্ক সিটির একটি জনপদ। ছবি এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়ের কবলে পড়ছে নিউইয়র্কসহ আশেপাশের কয়েকটি স্টেট। নিউইয়র্ক সিটির গভর্নর এন্ড্রু কুমো এবং মেয়র বিল ব্লাজিও বলেছেন, এবারের তুষারঝড় হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়। যে কারণে তারা সংবাদ সম্মেলন করে নিউইয়র্ক সিটিতে জরুরী অবস্থা জারি করেছেন। জরুরী অবস্থা শুধু নিউইয়র্কে নয় তুষার ঝড়ে আক্রান্ত নিউইয়র্কের পাশের স্টেট নিউজার্সি, বস্টন, রোড আইল্যান্ড, ম্যাসাচুচাস ও কানেকটিকাটেও জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। জরুরী অবস্থা জারির ফলে পুরো নিউইয়র্ক সিটি ধমকে দাঁড়িয়েছে। নিউইয়র্কের গুরুত্বপূর্ণ লাগোয়ার্ডিয়া এয়ারপোর্ট এবং জেএফকে এয়ারপোর্টসহ অন্যান্য এয়ারপোর্টে প্রায় ৭ হাজারেরও বেশি ফাইট বাতিল করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটির সকল স্কুল এবং কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। এর আগে কখনো দেখা যায়নি রাস্তা বন্ধ করে দিতে। এবার অবস্থা এতই ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দিয়েছে যে রাত ১১ টা পর থেকে নিউইয়র্ক সিটির সকল রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুধু মাত্র এ্যাম্বুলেস, ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরী যানবাহন ছাড়া। এই আইন লংঘন করলে ৩০০ ডলার জরিমানা হতে পারে। এর আগে বিকেল ৫টা থেকে নিউইয়র্ক সিটির সকল সরকারি ট্রেন এবং বাস বন্ধ করা শুরু হয় রাত ১১টায় চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই আদেশ অব্যাহত থাকবে। যদিও আরেক ঘোষণায় বলা হয়েছে সরকারি বাস এবং ট্রেন চলার সম্ভাবনা রয়েছে আগামী বুধবার ২৮ জানুয়ারি সকাল থেকে। এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশেষ ব্যবস্থাপনায় জেএফকে আন্তর্জাতিক ও নিউয়ার্ক আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে বিশেষ ব্যবস্থায় সীমিত কয়েকটি ফাইট চলবে। অন্যদিকে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, লংআইল্যান্ড, বস্টন এবং ম্যাসাচুচাসে সকল যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যে সব যাত্রী নিরাপদে বা বাড়িতে যেতে পারেননি, তাদের রাস্তায় অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। এবারের তুষার ঝড়কে সিএনএন ঐতিহাস তুষারঝড় হিসাবে উল্লেখ করেছে। নিউইয়র্কসহ আশেপাশের স্টেটে তিন ফিট থেকে শুরু করে কোন কোন স্টেটে ৩০ ইঞ্চির অধিক তুষার পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা গত ২৬ জানুয়ারি সকাল থেকে তুষার ঝড় শুরু হয়েছে। এই তুষার ঝড় ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় থামার সম্ভাবনা রয়েছে। এই তুষার ঝড়ে বিভিন্ন স্টেটের হাজার হাজার মানুষ কোন না কোনভাবে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। নিউইয়র্কসহ তুষারে ঝড়ে আক্রান্ত অন্যান্য স্টেটের মানুষকে বাসায় থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন সিটির গভর্নর এবং মেয়রবৃন্দ। ২৬ জানুয়ারি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তুষার এবং বৃষ্টি থাকলেও রাত সাড়ে ১১ টা থেকে প্রায় ৭০ মাইল বেগে শুরু হয় ভয়ঙ্কর তুষার ঝড়। যাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
সিটি মেয়র এবং গভর্নর জরুরী অবস্থা ঘোষণার সাথে সাথেই মানুষ হন্যে হয়ে বিভিন্ন স্টোরে গিয়ে খাদ্য, পানিসহ জরুরী সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে বাসায় ফিরেন। আবার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার কারণে অনেক মানুষকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ভোগান্তিতে পড়তে হয় এবং বিকল্প পথে ট্যাক্সিতে অধিক ভাড়া দিয়ে বাসায় ফিরতে হয়। রাত ১১ টার পর নিউইয়র্ক সিটির ২৪ ঘন্টার বাণিজ্যিক শহর ম্যানহাটনসহ নিউইয়র্ক সিটির সকল রাস্তাঘাট জনশূণ্য হয়ে পড়ে। ম্যাসিজসহ সকল বড় বড় স্টোর বন্ধ করে দেয়া হয়।
নিউইয়র্ক সিটিতে রেকর্ড পরিমাণ তুষার পড়েছিলো ২০০৬ সালের ১১ ও ১২ ফেব্রূয়ারিতে ২৬.৯ ইঞ্চি, ১৯৪৭ সালের ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বরে পড়েছিলো ২৫.৮ ইঞ্চি, ১৯৮৮ সালের ১২ থেকে ১৪ মার্চে পড়েছিলো ২১ ইঞ্চি, ২০১০ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পড়েছিলো ২০.৯ ইঞ্চি, ১৯৯৬ সালের ৭ ও ৮ জানুয়ারিতে তুষার পড়েছিলো ২০.২ ইঞ্চি। এবার আংশকা প্রকাশ করা হচ্ছে কোন কোন এলাকায় ৩০ ইঞ্চির অধিক তুষার পড়বে।