লোদীর বাসায় গোপন বৈঠক : হাওয়া বদল না কৌশল?

ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ আজ : উত্তপ্ত হতে পারে নগর ভবন

Koyes Ludiনুরুল হক শিপুঃ ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিয়ে ধম্রজালের অবসান ঘটছেনা। এ নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। যদিও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনুরোধ করেছে প্যানেল মেয়র-১ কে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালনের। তবে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার আগে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দিয়েছেন প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরীকে। এমন পরিস্থিতিতে পদটি নিয়ে কাউন্সিলররা দুভাগে বিভক্ত। আজ প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে নগরভবনে অফিস করর ঘোষণা দিয়েছেন। আর সেজন্য তিনি তাঁর পক্ষের কাউন্সিলরদের নিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে তাঁর বাসায় গোপন বৈঠকও করেছেন। অপরদিকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দায়িত্ব দেয়া প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরীই ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে আজ অফিস করবেন বলে জানিয়েছেন সালেহ আহমদ চৌধুরী ও কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। আর সেজন্য কাউন্সিলরদের বড় একটি অংশ গতকাল রাতে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ নগর ভবনে কি হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দু’জনই ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে অফিস করতে গেলে নগরভবনে উত্তেজনা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ আশঙ্কা থেকে তৃতীয় কোনো পন্থার কৌশলি ব্যবহারও হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র ধারণা করছে।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব এমন পরিস্থিতিতে উত্তেজনা দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন। তিনি জানান, প্যানেল মেয়র-১ ও প্যানেল মেয়র-২ দুজনই যদি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে চান; তাহলেতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা কিছুটা থেকে যায়। একজনকে মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেছেন আর অপরজনকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বরখাস্ত হওয়ার আগে দায়িত্ব দিয়েছেন এমন পরিস্থিতিতে উত্তেজনা দেখা দিলে তা এড়াতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা এমন পরিস্থিতিতে কি করনিয়।
সূত্রমতে, ভারপ্রাপ্ত মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব নিতে গতকাল তাঁর বলয়ের কয়েকজন কাউন্সিলর নিয়ে গোপন বৈঠক করেছেন। এসময় ৬ জন কাউন্সিলর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তারা হলেন, ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবজাদ হোসেন আমজাদ, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রকিবুল ইসলাম ঝলক, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সিকন্দর আলী, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের দিনার খান হাসু, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোস্তাক আহমদ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৌফিক বক্স লিপন।
তবে রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর বাসায় গোপন বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন তারা। তারা বলছেন কয়েস লোদী তাদেরকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। তারা কয়েস লোদীর বাসায় খাওয়া-ধাওয়া করেছেন। একটি সূত্র জানায়, দিনার খান হাসু কয়েস লোদীর বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার পাশাপাশি রাতে ফরহাদ চৌধুরী শামীমের ডাকা মিটিংয়েও উপস্থিত হন।
রেজাউল হাসান কয়েস লোদী জানান, কোনো গোপন বৈঠক হয়নি। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ায় সহকর্মীদের দাওয়াত খাইয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, আজ সকাল ১০টা থেকে তিনি নগরভবনে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে অফিস করবেন। দায়িত্ব হস্তান্তরের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাকেতো দায়িত্ব হস্তান্তর করা লাগবেনা; মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পর আমি দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছি। আজ অফিস করবো। মেয়র আরিফুল হক অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনিও অফিস করার কথা রয়েছে-এমন পরিস্থিতিতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিস তিনি করার প্রশ্নই ওঠেনা। সকল কাউন্সিলররা আমার সহকর্মী; তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মন্ত্রণালয় থেকে তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন তাই সকল কাউন্সিলর তাকে সহযোগিতা করবেন বলে জানান তিনি।
কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম জানান, কয়েস লোদীকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন; কিন্তু তাকে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে কে। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাময়িক বরখাস্ত হবার আগে প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনিই ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে অফিস করবেন।
শামীম বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত তিনি বরখাস্ত হলেন; একই অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পাশাপাশি চেতার জায়গা শহীদ মিনার ভাংচুরের ঘটনায়ও আসামী কয়েস লোদীকে কিভাবে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বলেন শুধু আমি নই; কাউন্সিলরদের বড় একটি অংশ তাকে মেনে নিচ্ছেনা।
প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরী জানান, তিনি নীতিগত দিক থেকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে অফিস করবেন। সালেহ আহমদ বলেন, আমাকে মেয়র বরখাস্ত হওয়ার আগে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দিয়েছেন। আর প্রকৃত পক্ষে কয়েস লোদীর সাথে আমার সুসম্পর্ক; কিন্তু শুধু যে মেয়র আরিফুল হক মামলার আসামী তাতো না; কয়েস লোদীও মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী। তিনি মামলা-মোকাদ্দমায় না জড়ালেও পাড়তেন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি, বুধবার বাংলাদেশ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি সিসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ‘প্যানেল মেয়র-১, সিলেটকে’ অনুরোধ জানানো হয়।