সব ‘বাকোয়াজ’: অমিত শাহ – ‘১০০% সঠিক খবর’: মারুফ কামাল
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার খবরটি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিলেন ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ। বিএনপির দাবি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর সে বিষয়ে জানতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক সুবীর ভৌমিক টেলিফোন করলে তিনি বলেন, “আরে ভাই, ম্যায়নে তো উনহে কল নেহি কিয়া, ইয়ে সব বাকোয়াজ খবর কিউ ছাপতে হ্যায়। (আমি তো উনাকে ফোন করিনি, এসব ভুয়া খবর কেন আসে)।”
গত বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করেন যে বুধবার রাতে খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে তার খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন অমিত শাহ।
এর সত্যতা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা প্রশ্ন তোলার পর শনিবার বাংলাদেশের দুটি টেলিভিশন চ্যানেল অমিত শাহকে টেলিফোন করলে তিনি টেলিফোন করার বিষয়টি উড়িয়ে দেন।
“দিজ ইস টোটালি রিউমার,” চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে বলেন অমিত শাহ। একাত্তর টেলিভিশনকে তিনি বলেন, “দিস ইজ এ ফেক নিউজ।”
আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি তাদের দাবিতে অনড় থেকে বলে আসছে, অমিত শাহ ফোন করেছিলেন এবং তা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছেন।
অমিত শাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ম্যায়নে দুসরে বাংলাদেশ মিডিয়াকো ভি ইয়ে বোলা হ্যায়, বাত করেঙ্গা তো কিউ ডিনাই করেঙ্গে, পার আগার নেহি কিয়া তো খবর নেহি আনা চাহিয়ে। (আমি বাংলাদেশের অন্য সংবাদ মাধ্যমকেও এটাই বলেছি, কথা বললে অস্বীকার করব কেন, কিন্তু যখন কথাই বলিনি, তখন তো খবর হওয়া ঠিক নয়।)”
অমিত শাহর কথিত টেলিফোন নিয়ে আলোচনার মধ্যে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের একাধিক নেতা খবরটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র যশদীপ ভৌমিক বলেন, “অমিত শাহজি কেন ফোন করতে যাবেন? বাংলাদেশের যা ঘটছে তা তো একান্তই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।”
এদিকে অমিত শাহের টেলিফোন নিয়ে আলোচনার মধ্যে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের একটি বিবৃতি প্রকাশ হয়েছিল যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদপত্রে, যা ভুয়া বলে ধরা পড়ে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রটি তাদের প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের এক সহকারী তাদের এই বিবৃতিটি পাঠিয়েছিলেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যরা বিবৃতি পাঠিয়ে খালেদাকে নিয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়ার খবর অস্বীকার করেন।
বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ নিজে অস্বীকার করলেও তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার টেলিফোন আলোচনা নিয়ে আগের অবস্থানেই রয়েছে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমার দেওয়া খবর একশ ভাগ সঠিক।”
মারুফ কামালই বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করেন যে বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে টেলিফোন করে তার খোঁজ-খবর নিয়েছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দলের প্রেসিডেন্ট।
তার ওই বক্তব্য ভিত্তিহীন বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি এবং খালেদাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ সদস্যদের একটি বিবৃতি ভুয়া বলে প্রমাণিত হওয়ার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম অমিত শাহর সঙ্গে যোগাযোগ করে।
বিজেপি প্রেসিডেন্ট শনিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আরে ভাই, ম্যায়নে তো উনহে কল নেহি কিয়া, ইয়ে সব বাকোয়াজ খবর কিউ ছাপতে হ্যায়। (আমি তো উনাকে ফোন করিনি, এসব ভুয়া খবর কেন আসে)।”
চ্যানেল টোয়েন্টিফোর ও একাত্তর টেলিভিশনকেও অমিত শাহ একই কথা বলেন। এরপর রাতে একটি বিবৃতি দিয়ে মারুফ কামাল এসব খবরকে ‘বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা’ বলে দাবি করেন।
“এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া আমার তথ্য ভুল প্রমাণের অব্যাহত চেষ্টার পটভূমিতে আমি আবারও দৃঢ়তার সঙ্গে পুনরুল্লেখ করতে চাই, আমার দেওয়া তথ্য শতকরা একশ ভাগ সঠিক।”
“সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতি ও কূটনৈতিক মারপ্যাঁচের ঊর্ধ্বে থেকে আবার বলছি, শ্রীযুক্ত অমিত শাহর সঙ্গে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার টেলিফোন আলাপ আমার উপস্থিতিতেই হয়েছে।”
গত শনিবার ধরে নিজের গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মারুফ কামালসহ কয়েকজন রয়েছেন। ৫ জানুয়ারি লাগাতার অবরোধের ডাক দেওয়ার পর খালেদা আর সাংবাদিকদের সামনে আসেননি।
মারুফ কামাল বলেন, “শ্রীযুক্ত অমিত শাহর সঙ্গে সম্পর্কিত ঘনিষ্ঠদের কাছে আজ আমাদের অনুসন্ধানে এটুকু বেরিয়ে এসেছে যে, বর্তমানে নির্বাচনী প্রচারাভিযান ও দলের সদস্য সংগ্রহ কাজে গুরুতরভাবে ব্যস্ত বিজেপি প্রধানের পক্ষে ঢাকায় কোনো সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার প্রদানের কোনো সুযোগ ছিল না।”
সন্ধ্যায় অমিত শাহকে যখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে ফোন করা হয়, তখন তিনি নয়া দিল্লিতে এক সমাবেশে ছিলেন। ওই সমাবেশ শেষ হওয়ার পর টেলিফোনে কথা বলেন তিনি।
অমিত শাহর সঙ্গে টেলিফোনে কথপোকথনের পুরোটা চ্যানেল টোয়েন্টিফোর ও একাত্তর টেলিভিশন প্রচারও করেছে।
এসব নিয়ে মারুফ কামাল বলেন, “বিজেপি প্রধান প্রকৃত পক্ষেই তাদেরকে কোনো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কি না, তা নিয়েও কোনো প্রশ্ন তুলছি না।”
“দেশের বিরাজমান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে সকলের নজর অন্যদিকে ফেরানোর উদ্দেশ্যে একটি সহজ বিষয়কে জটিল করে তোলার প্রয়াস থেকে সকলে বিরত থাকবেন এবং এই বির্তকের এখানেই অবসান ঘটবে বলে আমি আশা করি,” বলেছেন খালেদার প্রেসসচিব। এদিকে অমিত শাহের টেলিফোন নিয়ে আলোচনার মধ্যে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের একটি বিবৃতি প্রকাশ হয়েছিল যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদপত্রে, যা ভুয়া বলে ধরা পড়ে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রটি তাদের প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের এক সহকারী তাদের এই বিবৃতিটি পাঠিয়েছিলেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যরা বিবৃতি পাঠিয়ে খালেদাকে নিয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়ার খবর অস্বীকার করেন।