তাহিরপুরে চোরাই কয়লা সহ ১৮ লাখ টাকার মালামাল আটক : আ’লীগ সভাপতির ভাতিজা আত্বগোপনে
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের পাটলাই নদী দিয়ে দু’টি ট্রলার বোঝাই করে সীমান্তের ওপার থেকে বিনা শুল্কে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা ৪৫ মেট্রিক টন কয়লা সহ ১৫ লাখ টাকার মালামাল থানা পুলিশ আটক করেছে। পরদিন শুক্রবার উপজেলার পাটলাই নদীর তীরবর্তী ছিলাইন তাহিরপুর গ্রাম থেকে ফের ৩ লাখ টাকা মুল্যের ২০ মেট্রিক টন চোরাই কয়লা আটক করেছে। এ নিয়ে পুলিশ গত দু’দিনে বিনা শুল্কে নিয়ে আসা ৬৫ মেট্রিক টন কয়লা সহ প্রায় ১৮ লাখ টাকার মালামাল আটক করেছে। এ নিয়ে থানায় ৮ চোরাচালানীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও এ চোরাচালান বাণিজ্যের সাথে জড়িত ও মামলার অভিযুক্ত আসামী থাকায় উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাতিজা এবং অপর এক ইউপি সদস্য সহ ৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে। চেয়ারম্যানের ভাতিজা ও ইউপি সদস্য হাড়ির খবর ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ে পুলিশী গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্বগোপনে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ চোরাচালান বাণিজ্যের নেপথ্যে কারা কিভাবে এতদিন মদদ জুগিয়েছেন এমনকি কারা নামে বেনামে চাঁদাবাজি করে রাতারাতি চাঁদাবাজির টাকায় আগুল ফুলে কলাগাছ হয়ে কোটিপতি বনে গেছেন সেইসব বর্ডারকুতুবদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য পুলিশ বিজিবি ও আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি ভোক্তভোগী মহল সহ এলাকার সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী, প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ- ৮ বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়নের তাহিরপুরের চাঁনপুর, টেকেরঘাট, বালিয়াঘাট, চারাগাঁও ও বাগলী সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে একাধিক সংঘবদ্ধ চোরাচালানী চক্র প্রায়ই বিনা শুল্কে চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে শত শত মেট্রিকটন কয়লা নিয়ে আসার পর নৌ-পথে কিশোরগঞ্জের ভৈরব, নেত্রকোণার কলমাকান্দা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুয়া মিনিপাস ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের ভুয়া চালান পত্র দিয়ে চোরাই কয়লা সরবরাহ করে আসছে। গোপন সংবাদের ভিক্তিত্বে খবর পেয়ে থানার এসআই মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বৃহস্পতিবার সুলেমানপুরের সন্নিকটে পাটলাই নদী থেকে দু’টি ট্রলার বোঝাই ভারতীয় চোরাই কয়লা সহ ৪ চোরাচালানীকে হাতে নাতে গ্রেফতার করেন। পরদিন শুক্রবার এসআই জামাল উদ্দিন ছিলাইন তাহিরপুর গ্রাম থেকে আরো ২০ মেট্রিক টন চোরাই কয়লা আটক করেন। বৃহস্পতিবার আটককৃত কয়লা চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে উওর শ্রীপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খা’র ভাতিজা দুধের আউটা গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে হুমায়ুন,একই গ্রামের মৃত সফর আলীর ছেলে ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লুৎফুর মিয়া, মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে জামাল, মৃত হারিছ উদ্দিনের ছেলে সোহেল, মদনপুর গ্রামের মৃত লক্ষিকান্তর ছেলে উমাকান্ত সরকার,চারাগাঁও’র মগবুল হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলাম, বাঁশতলা গ্রামের নছর আলীর ছেলে আব্দুল গফুর ও একই গ্রামের মৃত রঙ্গু মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেনকে আসামী করে পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে। আনোয়ার, সোহেল , জামাল ও উমা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও অন্যরা পলাতক রয়েছে। এদিকে চোরাই কয়লা সহ দু’টি ট্রলার ছাড়িয়ে নিতে এবং পলাতক আসামীদের গ্রেফতার না করতে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁ কয়েক দফা থানায় তদবীর করেও ব্যার্থ হয়েছেন বলে থানা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সুত্র জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সীমান্ত এলাকায় কয়লা কেন্দ্রীক চাঁদাবাজি ও চোরাচালান বাণিজ্যের বিষয়টিকে ধামাচাঁপা দিতে গিয়ে পুলিশের গ্রেফতার করে আপাতত নিরাপদে রাখতে চাইছেন ভাতিজা ও ইউপি সদস্যকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের একাধিক নেতা, কয়লা ব্যবসায়ী ও এলাকার সাধারন লোকজন জানান, মহাজোঠ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ছয় বছর ধরে আ’লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁ’র লোক হিসাবে চিহ্নিত রফিক ও দুলদুল গংরা বড়ছড়া শুল্ক ষ্টেশন ও তার আরেক ঘনিষ্ট সহচর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক জয়ধর আলী তার ছেলে নজরুল ও ভাতিজি জামাই জিলানি, রমজান, চাঁনমিয়া গংদের দিয়ে চারাগাঁও শুল্ক ষ্টেশন সহ দু’শুল্ক ষ্টেশন ও এর আশে পাশের এলাকাকে দু’ভাগে ভাগ করে “বাংলা কয়লা” “চুরির কয়লা” ও “চোরাচালানের কয়লা” থেকে প্রথমে সীমান্তে বস্তাপ্রতি পরে নৌ-পথে টন প্রতি ১’শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্য্যন্ত পুলিশ-বিজিবি-কাস্টমসকে ম্যানেজ করার কথা বলে চাঁদা আদায় করিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
কয়লা আমদানি কারক পরিচয়ধারী জয়ধর আলীর সাথে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসবের কিছুই জানিনা,আমি কোন টেকা পইসা লইনা, যা জানতে চাইন আমার নেতা আবুল চেয়ারম্যানের কাছে জাইন্যা নিন।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা দৃঢ়তার সাথে বললেন, কারা কিভাবে এতদিন চাঁদাবাজি ও চোরাচালান বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছে তা যদি পুলিশ কিংবা আইনশৃংখলা বাহিনী সুষ্ট ও নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করেন তাহলে এলাকার হাজারো মানুষ নির্ব্রিগ্নে এসব অপকর্মের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে তথ্য প্রমাণ সহ তাদের নাম প্রকাশ করবে।
আবুল হোসেন খা’র বক্তব্য জানতে উনার ব্যাক্তিগত মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করার পর তিনি নিজেকে আবুল হোসেন খাঁ নয় আবুল হোসেন ভুঁইয়া নামে পরিচয় দিয়ে নিজেকে আড়াল করার অপচেষ্টা করে মুঠোফোনের লাইনটি কেটে দেন।
সুনামগঞ্জ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি খায়রুল হুদা চপল বললেন, যদি কোন চেম্বার্স এবং কয়লা আমদানিককারক গ্রুপের সদস্যের ব্যাপারে চাঁদাবাজি ও চোরাচালান বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণাদি পাওয়া যায় তাহলে চেম্বার্স থেকে তার সদস্যপদ বাতিল করা হবে।
পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ জানান, নিশ্চিত হয়েই ভারতীয় চোরাই কয়লা সহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে এছাড়াও গ্রেফতারকৃতরা পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে অন্যান্য চোরাচালানীদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে, পলাতক আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশী চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, কয়লা চোরাচালান সংক্রান্ত মামলাগুলো পুলিশ নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে এর সাথে কারা কিভাবে এতদিন চাঁদাবাজি করে এসেছে আশা করি তাও তদন্তে শীঘ্রই বের হয়ে আসবে, চাঁদাবাজি ও চোরাচালানী চক্রের সাথে যতবড় প্রভাবশালী ব্যাক্তিই হওক না কেন প্রয়োজনে পুলিশ তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।