খালেদার দাবি `রাজনৈতিক`

election comissionসুরমা টাইমস ডেস্কঃ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দাবিকে পাত্তা দিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। খালেদা জিয়ার ৭ দফা দাবির মধ্যে ৫ দফা দাবিই নির্বাচন সংশ্লিষ্ট। তবে এই দাবিকে কেবল ‘‘রাজনৈতিক’’ বিষয় বলেই উড়িয়ে দিচ্ছে ইসি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা, নানা ঘটনা-দূর্ঘটনা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অঙ্গীকার রক্ষা না করার অভিযোগ তুলে সংকট উত্তরণে সরকার ও সব পক্ষের সামনে গত ৩১ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া আকস্মিক এক সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন পুনর্গঠন সহ ৭ দফা দাবি পেশ করেন। এই ৭ দফা দাবির মধ্যে ৫দফাই নির্বাচন সংক্রান্ত।
নির্বাচন পুনর্গঠন, নির্বাচনের উপযোগী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারিখ ঘোষণার পরপরই বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সব পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
কিন্তু এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে মাথা ঘামানোর দরকার নেই বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনাররা।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিরতায় এ পর্যন্ত শতাধিক আহত-নিহতের ঘটনা ঘটলেও টনক নড়ছেনা কারোরই।
একদিকে যেমন বিএনপি অবরোধ-হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দিয়ে দেশকে অচলাবস্থার সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগও রয়েছে জিরো টলারেন্সে।
গত সোমবার ‘গণতন্ত্রের হত্যাদিবস’ উল্লেখ করে বিএনপি সমাবেশ করতে চাইলে অনুমতি দেয়া হয়নি। সেইদিন সৃষ্টি হয় নানা নাটকীয়তা। তাই এরপরথেকে লাগাতার অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি।
দেশের এ অস্থির অবস্থা দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়ে তুললেও কার্যত ভাবছে না সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশন।
খালেদার ৭ দফা দাবির বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গত ১ জানুয়ারি বলেছেন, খালেদা জিয়ার দেয়া ৭ দফা দাবি রাজনৈতিক কর্মসূচি হলেও তা কোনক্রমেই বাস্তবসম্মত নয়। আগামী নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই হবে।
এদিকে খালেদার জিয়ার দাবির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার আছে কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো.শাহনেওয়াজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, খালেদা জিয়ার দাবি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। আর নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত। তারা রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করবে। এতে আমাদের কিছু করার নেই।
নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ ও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ শুধু সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করা। রাজনৈতিক দল কে কি বললো তা দেখার বিষয় নির্বাচন কমিশনের নয়।
তবে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা বললেন, খালেদা জিয়ার দাবি রাজনৈতিক সেটা ঠিক। আর নির্বাচন কমিশন যদি মনে করেন তারা রাজনৈতিক বিষয়ে ঢুকবে না কিংবা হস্তক্ষেপ করবে না সে অধিকার তার আছে।
তবে সবকিছু পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। আইন না থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অলিখিতের উপরও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। আমাদের প্রতিবেশি অনেক রাষ্ট্রে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে দেশে কোন অস্থিরতা কিংবা অরাজগতার সৃষ্টি হলে তার সমাধান নির্বাচন কমিশন করে এবং নির্বাচন কমিশন যেই সিদ্ধান্ত দেয় দলগুলোও সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।
বর্তমান পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে আইন না থাকলেও নির্বাচন কমিশনের উচিত পূর্বের নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম ও তার প্রতিক্রিয়া দেখে সুষ্ঠু সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেয়া।