আওয়ামীলীগ নেতা লিয়াকত আলী ১৪৪ধারা ভঙ্গ করে খাসিয়াদের পান সুপারীর বাগান দখলে নিলেন

Jaintapur (1) মোঃ রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর থেকেঃ জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী ১৪৪ধারা ভঙ্গ করে সংখ্যালঘু খাসিয়াদের পান সুপারীর বাগান দখল করে পাথরের ডাম্পিং ইয়ার্ড তৈরী করছেন। প্রভাবশালী নেতা কর্তৃক জায়গা দখলের ফলে অসহায় হয়ে পড়েছে খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন।
অনুসন্ধানে জানাযায়- উপজেলার মোকামবাড়ী গ্রামের ১নং জে.এল,স্থিত ৯নং এস.এ খতিয়ানের ৬৫নং দাগে প্রায় সাড়ে ৪একর ভূমির মালিক হন মোকামপুঞ্জির সামিল খাসিয়ানী। উত্তরাধীকারী সূত্রে প্রাপ্ত এ জমিতে সামিল খাসিয়ানি পান সুপারী বাগান গড়ে তুলেন। পরবর্তীতে এ জায়গা সরকার অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় নিয়ে যাওয়ায় সামিন খাসিয়ানীর স্বামী সাদই ইয়াটি জায়গাটির বন্দেবস্ত নেন। ১৭ এপ্রিল ২০১৩ সালে জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা লিয়াকত আলী ঐ দাগের ২একর ভূমি বন্দোবস্ত Jaintapur (2)পাওয়ার জন্য আবেদন করে। আবেদনের প্রেেিত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জৈন্তাপুর সরেজমিন পরিদর্শন করে Jaintapur (3)১৭ এপ্রিল ১৩ইং তারিখে ৯৪নং স্মারকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ৬৫নং দাগের ৩.৮০ একর ভূমি ৪১/৮৪নং ভিপি বন্দোবস্ত মামলায় মোকামবাড়ী মৌজার সিতেঙ্গা খাসিয়ানীর ছেলে সদাই ইয়য়াংটি খাসিয়া বরাবরে বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে এবং সদাই ইয়াংটি খাসিয়া ১৪১৯বাংলা পর্যন্তলীজ মানি পরিশোধ করেছেন। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন আরও উল্লেখ করে বলেন আওয়ামীলীগ নেতা লিয়াকত আলী ৬৫নং দাগের প্রায় ২একর ভূমিতে মেসার্স বানকান ষ্টোন ক্রাশার প্লান্ট নামে মেশিন স্থাপন ও বসতঘর নির্মাণ করে ভোগ দখল করেছেন। কিভাবে ঐ ভূমিটি আওয়ামীলীগ নেতা লিয়াকত আলী দখলে এলেন এ বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ করেন নাই। অতচ দখলের প্রেেিত তৎকালীন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আওয়ামীলীগ নেতা লিয়াকত আলীর নামে নাম পরিবর্তন করে ২একর ভূমি বন্দোবস্তের সুপারিশ করেন। সুপারিশের প্ররিপ্রেেিত তৎকালিন সহকারী কমিশনার(ভূমি) ইকবাল হোসেন ২৯ মে ১৩ইং সনে শুনানির জন্য উভয় পকে নোটিশ প্রদান করে। পরবর্তীতে ২জুলাই ১৩ইং তারিখে শুনানি গ্রহন কালে মোকামপুঞ্জি গ্রামের কালাও Jaintapur (5)কুটুম খাসীয়ানীর মেয়ে সামিল খাসিয়ানী সহকারী কমিশনার(ভূমি) কে জানায় অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১(সংশোধিত-২০১১) এর ৯ধারার ‘ক’ তপশীলে প্রকাশিত গেজেটের আলোকে দরখাস্তকারীনীর মালিকানাধীন ভূমি অর্পিত সম্পত্তির তালিকা হইতে অবমুক্ত হওয়ার নিমিত্তে এবং সামিন খাসিয়ানী অর্পিত সম্পত্তি ফিরে পেতে “অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন ট্রাইব্যুনাল, সিলেট’ অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্ত মামলা ৭৫৮/২০১৩ চলমান থাকার বিষয়টি উত্তাপন করে ভূমি বন্দোবস্ত না দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। ফলে সহকারী কমিশনার(ভূমি) ইকবাল হোসেন পুনরায় শুনানির তারিখ ধার্য করেন এবং সার্ভেয়ারকে সরেজমিন তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। এদিকে ১২ মে ২০১৪ইং তারিখে সার্ভেয়ারের প্রতিবেদন ও সামিন খাসিয়ানীর দাখিলকৃত ৭৫৮/১৩ নং মামলাটি বিজ্ঞ আদালতে (ট্রাইবুরালে) অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্ত চলমান থাকায় এবং ঐমামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্য কাহারো নামে লীজ ট্রান্সফার সমুচীন নয় উল্লেখ করা হয়। চলমান লীজ অন্য কাহারো নামে ট্রান্সফার করা হলে তা আদালত অবমাননার সামিল মন্তব্য করে সহকারী কমিশনার(ভূমি) ইকবাল হোসেন আওয়ামীলীগ নেতা লিয়াকত আলীর আবেদনটি নথি ভূক্ত করেন। আবেদনটি নথি ভূক্ত হওয়ার ফলে ঐ ভূমির উপর বৈধ্য লীজ গ্রহিতা হন সামিন খাসিয়ানীর স্বামী সাদই ইয়াটি।
Jaintapur (8)এদিকে গত কয়েকদিন থেকে লিয়াকত আলী এই জায়গাটি দখলের চেষ্টা করলে সামিন খাসিয়ানী জৈন্তাপুর আদালতে পূনরায় আবেদন করে। আবেদনের প্রেেিত আদালত ১৪৪ধারা জারী করে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য জৈন্তাপুর থানা পুলিশকে নির্দেশদেন। আদলতের নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে গত Jaintapur (10)১লা জানুয়ারী জৈন্তাপুর থানা পুলিশ ১৪৪ধারা জারী করে। কিন্তু ১৪৪ধারা উপো করে গত ৩জানুয়ারী শনিবার লিয়াকত বাহিনীর লোকজন সামিন খাসিয়ানীর পান-সুপারীর বাগান কেটে জায়গা দখল করে। সংখ্যালঘু অসহায় সামিন খাসিয়ানী বারবার পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা চাইলেও জৈন্তাপুর থানা পুলিশ প্রভাবশালীর কারনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হতে নানা করনে বিলম্ব করে। ফলে লিয়াকত বাহিনী শতাধিক সুপারী গাছ কেটে যায় এবং ট্রাক যোগে পাথর ফেলে জায়গা দখল করে।
এব্যপারে ভূমির মালিক সামিন খাসিয়ানী বলেন- আমি জায়গা দখলকারীদের বাঁধা প্রদান করলে তারা আমাকে কেটে ফেলবে বলে হুমকী দেওয়ায় প্রাণ ভয়ে বাড়ীতে চলে আসি। আমরা নিরীহ মানুষ লিয়াকত বাহনীর কাছে শক্তিতে পেরে উঠেতে পারবনা। আমি প্রশাসনের সহযোগীতা চাই।Jaintapur (14)
এবিষয়ে লিয়াকত আলী জানান- ১৯৮৪ইংরেজী হতে জায়গাটি বিভিন্ন জন বন্দেবস্ত নিয়ে লীজমানি পরিশোধ করতে ব্যার্থ হয়েছে। কিন্তু একপর্যায় তারা সরকারের কাছে জায়গাটি সেলেন্ডার করে। পরবর্তীতে আমি জায়গাটি বন্দোবস্থের আবেদন করি। আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে অপদস্থ করতে একটি মহলের যোগ সাজেসে জায়গাটি সঠিক তথ্য গোপন করে আদালতের মাধ্যমে ১৪৪ধারা জারি করে। কিন্তু বিষয়টি আমার জানা না থাকায় লোকজন কাজ করছিল।
অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন- আমরা আদলতের নির্দেশে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ১৪৪ধারা জারী করেছি। তবে ১৪৪ধারা ভঙ্গ করে লিয়াকত আলীর লোকজন কাজ করার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।

আরও পড়ূনঃ