“সদিচ্ছা থাকলে সমাজের কল্যাণ সাধন সম্ভব”
মৌলভীবাজারে উত্তরণ শিশু শিক্ষা সহায়ক সংস্থা এর মাধ্যমে সবাইকে দেখিয়ে দিলেন বাংলাদেশের প্রথম রঙ্গীন “মেঘের অনেক রং” ছায়াছবির নায়ক পন্নাবাড়ি চৌধুরী পরিবারের আতা এলাহী চৌধুরী ও রীনা চৌধুরী দম্পতি
মৌলভীবাজার সংবাদদাতাঃ “সদিচ্ছা থাকলে সমাজের কল্যাণ সাধন সম্ভব” মৌলভীবাজারে উত্তরণ শিশু শিক্ষা সহায়ক সংস্থা এর মাধ্যমে সবাইকে দেখিয়ে দিলেন বাংলাদেশের প্রথম রঙ্গীন “মেঘের অনেক রং” ছায়াছবির নায়ক পন্নাবাড়ি চৌধুরী পরিবারের আতা এলাহী চৌধুরী ও রীনা চৌধুরী দম্পতি। স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অসহায়, হতদরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদেরকে শিক্ষক সহায়তা, আদব-কায়দা, পরিষ্কার-পরিচ্ছতা, শৃংখলা-নিয়মানুবর্তিতা, খেলাধুলা ইত্যাদি অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট অনুসাঙ্গিক শিক্ষনীয় বিষয়ে শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি যেসব শিক্ষা উপকরণ পরিবার থেকে জোগান দেয়া সম্ভব হয়না সেসব জোগান দেয়া এবং এর মাধ্যমে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে শিশুদেরকে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করে চলেছে কদমহাটা নয়াবাড়ি পন্নাবাড়ি চৌধুরী পরিবার প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত উত্তরণ শিশু শিক্ষা সহায়ক সংস্থা। “সদিচ্ছা থাকলে ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে সমাজের কল্যাণ সাধন সম্ভব” এ কথাটির একটি বাস্তব প্রমান- কদমহাটা পন্নাবাড়ি চৌধুরী পরিবারের আতা এলাহী চৌধুরী ও রীনা চৌধুরী দম্পতি। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলাধীন ৮নং মনসুরনগর ইউনিয়নস্থিত পশ্চিম কদমহাটা গ্রামের পন্নাবাড়ি চৌধুরী পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে ৩ ভাই আতা এলাহী চৌধুরী, শওকত এলাহী চৌধুরী, কয়েছ এলাহী চৌধুরী স্বপরিবারে স্থায়ীভাবে বৃটেনে বসবাসরত। সর্বকণিষ্ট ভাই জিল্লে এলাহী চৌধুরী বসবাস করছেন বাড়িতেই। বড়ভাই আতা এলাহী চৌধুরী সেই ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন সমাজ হিতৈষী ও প্রচন্ড রকম সংস্কৃতিমনা। একসময় প্রবেশ করেন চলচ্চিত্রের রঙ্গীন ভূবনে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের উপর ভিত্তি করে ১৯৭৪ইং সালে নির্মিত সে বছরের শ্রেষ্ঠ ও বাংলাদেশের প্রথম রঙ্গীন “মেঘের অনেক রং” ছায়াছবির নায়ক ওমর এলাহী-ই হচ্ছেন কদমহাটা পন্নাবাড়ি চৌধুরী পরিবারের সন্তান আতা এলাহী চৌধুরী। তিনি ঐতিহ্যবাহী মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৫৭ইং সালে। এরপর মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ থেকে আইএ পাস করে সিলেট এমসি কলেজে ভর্ত্তি হন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম রঙ্গীন এ ছবিতে তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন পাহাড়ি কন্যা (পার্বত্য চট্টগ্রামের কন্যা) মাথিন। মেঘের অনেক রং ছবির নায়িকা মাথিন-ই পরবর্তীতে হয়ে যান আতা এলাহী চৌধুরীর জীবন নায়িকা রীনা চৌধুরী। বর্তমানে জীবনের প্রায় শেষ সময় অতিবাহনরত এ সমাজসেবী দম্পতির বৃটিশ নাগরিক একমাত্র পুত্র স্বস্ত্রীক বৃটেনে বসবাসরত ও ডাক্তারী পেশায় নিয়োজিত। তাদের একমাত্র কন্যা বৃটিশ নাগরিক হলেও স্বপরিবারে বাংলাদেশে বসবাসরত। মেঘের অনেক রং ছায়াছবি মুক্তি পাবার কিছুদিন পর তারা পাড়ি জমান সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর ওপারের বৃটেনে। চাকরী নেন বৃটিশ টেলিকমে এবং পরবর্তীতে বৃটিশ নৌবাহিনীর কাবে। প্রবাসে থেকেও দেশের কল্যাণে কিছু একটা করার অদম্য অভিলাষ থেকে আতা এলাহী চৌধুরীর সহধর্মিনী মিসেস রীনা চৌধুরী তার স্বামীর এলাকার অসহায়, হতদরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদেরকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য স্বামীর বাড়িতেই একটি প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র আকারে হলেও প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। স্বতস্ফুর্তভাবেই এগিয়ে এলেন স্বামী আতা এলাহী চৌধুরী এবং এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন বাড়িতে বসবাসরত কনিষ্ঠ ভাই জিল্লে এলাহী চৌধুরী, তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী ও তার দুই পুত্র প্রতুল ও প্রবাল। বৃটেন থেকে তার অপর দুই ভাই শওকত এলাহী চৌধুরী, তার স্ত্রী সুফিয়া চৌধুরী, ফজলে এলাহী চৌধুরী ও তার স্ত্রী আয়শা চৌধুরী নৈতিক সমর্থন প্রদান করেন। এভাবেই অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে জন্ম নেয় “উত্তরণ শিশু শিক্ষা সহায়ক সংস্থা” এবং সবার অলক্ষ্যেই হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে চলতে থাকে। প্রতিষ্ঠনটির দেখভাল ও পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন বাড়িতে বসবাসরত সর্বকণিষ্ট ভাই জিল্লে এলাহী চৌধুরী ও তার সহধর্মিনী মিসেস ফারজানা চৌধুরী। সহকারি শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন- লিংকন দাস, জেবিন আক্তার (তানিয়া), ফাতেমা চৌধুরী সোনিয়া) ও আবিবা আক্তার (শেফা)। কিছুদিন পূর্বে বৃটেন থেকে নিজ বাড়িতে বেড়াতে আসা আতা এলাহী চৌধুরী ও মিসেস রীনা চৌধুরী তাদের প্রতিষ্ঠিত উত্তরণ শিশু শিক্ষা সহায়ক সংস্থায় অধ্যয়নরত অসহায়, হতদরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য মহান বিজয় দিবস ২০১৪ উপলক্ষে ঘরোয়াভাবে আয়োজন করেন শিশু কিশোর ক্রীড়া ও বিনোদন অনুষ্ঠানের। দৈবক্রমে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসব তথ্য। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় প্রবীন শুভানুধ্যায়ী সৈয়দ আখলাকুল আম্বিয়া, এ প্রতিবেদক, সাংবাদিক মশাহিদ আহমদ, স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ। অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্ব পালণ করেন তাদের হিতাকাংখী মোঃ নেছার আহমেদ ও তাকে সহযোগিতা করেন মিসেস শামিমা আক্তার (শাম্মী), ক্রীড়া ও বিনোদন পরিচালনা করেন মিসেস রীনা চৌধুরী ও মিসেস ফারজানা চৌধুরী (বিনা), তাদেরকে সহযোগিতা করেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ। পুরস্কার বিতরণ করেন আতা এলাহী চৌধুরী, মিসেস রীনা চৌধুরী, মিসেস সুফিয়া চৌধুরী ও মিসেস ফারজানা চৌধুরী (বিনা)। সদিচ্ছা থাকার কারণেই ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে নিরবে নিভৃতে একনিষ্টভাবে সমাজের কল্যাণে কাজ করে চলেছেন আতা এলাহী চৌধুরী-মিসেস রীনা চৌধুরী দম্পতিসহ কদমহাটা নয়া বাড়ি ও পন্নাবাড়ি চৌধুরী পরিবার। আর কদমহাটা গ্রামবাসীও তাদেরকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আতা এলাহী চৌধুরী ও মিসেস রীনা চৌধুরীর পুত্র ও কন্যা, সমাজের কল্যাণে তাদের পিতা-মাতার এ কর্মকান্ডে শুধু গর্বিতই নন, মহান পিতা-মাতাকে তারা গর্বের ধন হিসাবে গণ্য করেন। বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক কল্যান ইউনিয়ন এর মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি ও হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক শ. ই . সরকার জবলু ও বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক কল্যান ইউনিয়ন, মৌলভীবাজার অনলইন প্রেসকাব এর মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক মশাহিদ আহমদ গতকাল সন্ধায় কদমহাটা পন্নাবাড়িতে আতা এলাহী চৌধুরী ও মিসেস রীনা চৌধুরীর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তারা জানালেন- উত্তরণ শিশু শিক্ষা সহায়ক সংস্থা প্রকৃতপক্ষে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অসহায়, হতদরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদেরকে শিক্ষক সহায়তা, আদব-কায়দা, পরিষ্কার-পরিচ্ছতা, শৃংখলা-নিয়মানুবর্তিতা, খেলাধুলা ইত্যাদি অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট অনুসাঙ্গিক শিক্ষনীয় বিষয়ে শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি যেসব শিক্ষা উপকরণ পরিবার থেকে জোগান দেয়া সম্ভব হয়না সেসব জোগান দেয়া এবং এর মাধ্যমে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে শিশুদেরকে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করাই উত্তরণ শিশু শিক্ষা সহায়ক সংস্থার কাজ। তাদের সাথে আলাপচারিতায় বোঝা গেল- সরকার দেশের সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ঘোষনা করলেও, তা বাস্তবায়নে যা যা করা প্রয়োজন তা করা হচ্ছেনা বলেই অসহায় হতদরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে। তাই, সরকার যে কাজটি করছেনা বা করতে পারছেনা সে কাজটিই খুব ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও করছেন কদমহাটা নয়াবাড়ি পন্নাবাড়ি চৌধূরী পরিবার তথা আতা এলাহী চৌধুরী ও রীনা চৌধুরী তথা উত্তরণ শিশু শিক্ষা সহায়ক সংস্থা। প্রতিটি গ্রামের সচেতন ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তিরা যদি এভাবে সমাজের কল্যাণে কাজ করতে পারতেন তাহলে আমরা এ দেশবাসী একটি উন্নত জাতিতে পরিণত হয়ে যেতে পারতাম খুব সহজেই।