জজ মিয়া নাঠক সাঁজিয়ে অন্যদের মামলায় ফাঁসিয়ে দিল জয়ধর পুত্র নজরুল

সুনামগঞ্জের চারাগাঁও সীমান্তে ফের ৫ মেট্রিক টন চোরাই কয়লা আটক: তিন চোরাচালানীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

২২ দিন পেরিয়ে গেলে বিজিবি-পুলিশ শামীমের অবৈধ পিস্তলটি উদ্যারে ব্যর্থ

PIC SUNAMGANJ SAMIM-Bসুনামগঞ্জ (তাহিরপুর) থেকে ফিরেঃ সুনামগঞ্জ-৮ বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়নের তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলার একটি বাড়ি থেকে বিজিবি ফের ভারত থেকে নিয়ে আসা ৫ মেট্রিক টন কয়লার একটি অবৈধ চালান আটক করেছে। অবৈধভাবে ভারতীয় কয়লা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মজুদ ও বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আনার অপরাধে থানায় তিন চোরাচালানীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার আসামীরা হল,উপজেলার উওর শ্রীপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাঁশতলা গ্রামের আছমত আলীর ছেলে হাসেম ওরফে হাসিম, মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে ইদ্রিস আলী, চারাগাঁও গ্রামের মৃত রমেন সিং’র ছেলে অরুন।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও বিজিবি সুত্রে জানা যায়, স্থানীয় এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যের ভিক্তিত্বে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে.কর্ণেল গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকারের নির্দেশে চারাগাঁও বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার মহসিন মিল্কির নেতৃত্বে বিজিবির একটি টহলদল বাঁশতলা গ্রাম সংলগ্ন সীমান্তের মেইন পিলার ১১৯৫ এর সেভেন এস এলাকার ৪’শ গজ বাংলাদেশ অভ্যন্তরে বুধবার রাত সোয়া আটটার দিকে সীমান্তের ওপার থেকে কয়েক’শ বস্তাভর্তি কয়লা অবৈধভাবে বাঁশতলা গ্রামের ইদ্রিস আলীর বাড়িতে মজুদ করার সময় ৫ মেট্রিক টন কয়লা আটক করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক লোকজন জানান, মামলায় তিন জনকে আসামী করা হলেও বাঁশতলা চোরাই কয়লার ঘাট নিয়ন্ত্রনকারী সীমান্তের ভুমিখেকো, দখলবাজ, মামলাবাজ, থানার দালাল, কয়লা চোরাচালানী ও শুল্ক ষ্টেশনে কয়লা চোর চক্রের গডফাদার স্থানীয় আ’লীগ সভাপতি জয়ধরের গুনধর ছেলে স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত অস্ত্রচোরাকারবারী, পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চোরাই কয়লা, কাঠ, গাছের ছাল, মদ, গাঁজা ভারতীয় চোরাই মোটরসাইকেল থেকে চাঁদা আদায়কারী নজরুল ও তার আরেক সহযোগী নিজ বলয়ের কয়লা চোরাচালানীদের মামলার হাত থেকে রক্ষা করার কথা বলে উল্টো তাদেরকে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে ‘জজ মিয়া নাঠক সাজিয়ে’ বরাবরের মত এবারও সে অধরাই রয়ে গেছে।
ইতিপুর্বে উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা গ্রাম সংলগ্ন এলাকা থেকে গত ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে চারাগাঁও বিওপির বিজিবির টহল দল বিনা শুল্কে নিয়ে আসা ৮০ বস্তা (৪মে.টন) চোরাই কয়লার চালান আটক করলেও বিজিবি ঐ রাতে কোন চোরাচালানীকেই আটক করতে পারেনি। এর ফলে ঐ কয়লা চোরাচালানের সাথে জড়িত মুল হোতা নজরুল সহ তার সহযোগীরা বিজিবির কাছে শেষ পর্য্যন্ত অধরাই রয়ে গিয়েছিল। সে সময় হাসিম নিজেই জানিয়েছিল এ ঘাট দিয়ে কয়লা কেনা বেচা ও সিরিয়াল ঠিক করে দেয় জয়ধর পুত্র নজরুল।
বাঁশতলা চোরাই কয়লার ঘাট নিয়ন্ত্রন: এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যের ভিক্তিত্বে জানা যায়, মুলত এক সময় লালঘাট পশ্চিম পাড়া ও বাঁশতলা দু’টি চোরাই কয়লারঘাট নিয়ন্ত্রন করতেন স্থানীয় ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি জয়ধর আলী ও তার আরেক সহযোগী । এ ঘাট দিয়ে মহালধারী প্রথায় অবৈধভাবে রাতের আধারে ওপারের মেঘালয় পাহাড়ের মৃতুকুপ নামক কোয়ারী কয়েক’শ শ্রমিক পাঠিয়ে চোরাই কয়লা নিয়ে আসার পর প্রতিটন কয়লা বিজিবি , পুলিশ ,কাষ্টমস, কয়লা আমদানিকারক সমিতিকে ম্যানেজ করার কথা বলে প্রতিটন কয়লা শ্রমিকদের মাত্র সাড়ে ৪ হাজার টাকা মুল্য পরিশোধ করে ডিপোতে মজুদ করে সাড়ে ১২ হাজার টাকায় সেই কয়লা অন্যত্র বিক্রি করে চোরাই কয়লার রমরমা বাণিজ্য করে কয়েক মাসের ব্যবধানে লাখ লাখ হাতিয়ে নেন। এ গোমর ফাঁস হয়ে গেলে চতুর জয়ধর ঘাট থেকে সঠকে পড়ে নিজেই পরোক্ষভাবে বসেন চালকের আসনে আর গুনধর ছেলে নজরুলকে সপে দিয়ে যান ঘাট নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব।
নজরুলের সন্ত্রাসী জীবনের নবযাত্রা ও চাঁদাবাজি কয়লা চোরাচালান, ডিপো দখল : অবৈধ পিস্তল সহ এক সময় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি)’র হাতে ধরা পড়ে নজরুল কয়েক বছর জেলখেটে জামিনে বেড়িয়ে এসে ফের জড়িয়ে পড়ে অস্ত্র চোরাকারবারে। মহাজোঠ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জয়ধরের গুরু খ্যাত উপজেলা আ’লীগের এক প্রভাবশালী নেতার আর্শীবাদে পিতা জয়ধরের প্রভাবে অস্ত্র ও লাঠিয়াল বাহিনীর জোরে প্রথমে ৪ কয়লা আমদানিকারকের ( সাত কেয়ার জমির) ডিপো দখলের মাধ্যমে ফের নজরুলের সন্ত্রাসী জীবনের নবযাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকেই পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে পিতার ছাঁয়ায় শুরু হয় লালঘাট, বাঁশতলা, চারাগাঁও শুল্ক ষ্টেশন, কলাগাঁও বাজার মাইজহাটি মোড়, জঙ্গলবাড়ি, লামাকাটা সহ সীমান্তবর্তী সাত গ্রামের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে ভারতীয় চোরাই কয়লা, চুনাপাথর কাঠ, গাছের ছাল, মদ,গাঁজা, ভারতীয় চোরাই মোটর সাইকেল থেকে নজরুলের বেপরোয়া চাঁদাবাজি।
উওরাধিকারী সুত্রেপ্রাপ্ত লালঘাট পশ্চিমপাড়া ও বাঁশতলা ঘাটের নিয়ন্ত্রন নজরুলের হাতে চলে আসার পর গত ৬ মাস অধিক সময় ধরে নজরুল এই ঘাট দিয়ে কয়লাচোরাচালান বাণিজ্য সম্্রসারণ করে। শুল্ক ষ্টেশন গুলো দিয়ে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকা ও কয়লার মুল্য বৃদ্ধির ফলে নজরুল এইঘাট দিয়ে আসা চোরাই কয়লা কেনা-বেচার সিরিয়াল ঠিক করে দেয়া, নিজস্ব সোর্স দিয়ে বিজিবির নামে প্রতিবস্তা কয়লার জন্য ৫০ থেকে ৭০ টাকা করে আদায় করেছে। বিজিবি ,পুলিশ, কাষ্টমস, সমিতিকে ম্যানেজ করা আছে এই কথা বলে প্রতিটন কয়লার মুল্য শ্রমিকদের সাড়ে ১০ হাজার পরিশোধ করে সেই কয়লা সাড়ে ২২ হাজার টাকা টন দামে অন্যদের নিকট বিক্রয় করে পিতার ন্যায় নজরুল নিজেও লাখ লাখ হাতিয়ে নিয়েছে।
ঠেলাগাড়ি শ্রমিকদের আড়াইলাখ টাকা আত্বসাত: বাঁশতলা চোরাই কয়লার ঘাট দিয়ে দ্বীর্ঘ দিন ধরে চোরাই কয়লার বস্তা পরিবহনের বকেয়া পাওনা শ্রমিকদের প্রায় আড়াইলাখ টাকা আত্বসাতের অভিযোগ উঠেছে নজরুলের বিরুদ্ধে। রবিবার এ নিয়ে শতাধিক শ্রমিক চারাগাঁও শুল্ক ষ্টেশনে নজরুলকে লাঞ্চিত করতে গেলে প্রাক্তন এক ইউপি সদস্য বিষয়টি নিষ্পক্তির আশ্বাস প্রদান করেন। শুধু তাই নয় রাতের আধারে যেসব শ্রমিক পাহাড়ে মৃত্যুর কুপ থেকে কয়লা আনতে যায় তাদের লালঘাট ও বাঁশতলার ৪টি গ্রুপের নিকট থেকে কয়লা কেনার বকেয়া পাওনা কমপক্ষে সাড়ে ৩ লাখ ইতিমধ্যে নজরুল ও তার সহযোগীরা আত্বসাত করেছে বলে জানা গেছে। পাওনাধারেরা পুলিশ বিজিবির ভয়ে এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ।
লামাকাঁটা চোরাই কয়লার ঘাট নিয়ন্ত্রন: একই ভাবে বীরেন্দ্রনগর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা লামাকাঁটা গ্রামের পেছনে মেইন পিলার ১১৯৪ এর টু-এস ও ১১৯৪ এর সিক্স-টির মাঝামাঝি এলাকা দিয়েও গত ৬ মাস ধরে একই কায়দায় জয়ধর আলীর আরেক ছেলে এক সময়ের শ্রমিক সর্দার ফজলুর নিয়ন্ত্রনে লামাকাঁটা গ্রামের আব্দুল হাসিমের জামালের সহায়তায়তায় রাধের আধারে শতাধিক শ্রমিক ওপারে পাঠিয়ে লাখ লাখ টাকার চোরাই কয়লা বিনা শুল্কে নিয়ে এসে নির্ব্রিগ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলা কয়লা থেকে চাঁদাবাজি : চারাগাঁও শুল্কষ্টেশন, লালঘাট পশ্চিমপাড়া, বাঁশতলা, কলাগাঁও ছড়া এবং লামাকাঁটা পর্য্যন্ত পাহাড়িছড়া ও নদী দিয়ে যেসব কয়লা ভেসে আসে সেসব কয়লা (বাংলা কয়লা) থেকে থানা পুলিশের কথা বলে জয়ধর আলীর পক্ষ্যে তার ভাতিজি জামাই জিলানী তার সহযোগী একই গ্রামের চাঁনমিয়া , রজমজান প্রতিটনে ১০০ টাকা করে গত ৬ বছর ধরে চাঁদা আদায় করে আসছে। প্রতিবছর কমপক্ষে এসব এলাকা দিয়ে এক লাখ মেট্রিক টন কয়লা (আভ্যন্তরীনণ) উৎস থেকে উক্তোলিত হয়। এ হিসাবে শুধু বাংলা কয়লার চাঁদা থেকেই জয়ধর বাহিনীর আয় হয়েছে কমপক্ষ্যে ৬ কোটি টাকা। থানা পুলিশের নামে এভাবে গত ৬ বছরে বাংলা কয়লা থেকে কয়েককোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জয়ধর আলী ও তার লোকজন। এলাকার লোকজন অভিযোগ করে আরো বললেন, এসব বিষয়ে কেউ মুখ খোলার চেষ্টা করলে থানা পুলিশ কিংবা বিজিবি দিয়ে চাঁদাবাজি, মাদক, চোরাচালান সহ নানা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্য অহরহ হুমকি ধামকি দিচ্ছেন জয়ধর আলী ও তার ছেলে নজরুল। জয়ধর আলী ও তার ছেলে নজরুলের কাছে জিম্মি হয়ে আছে সীমান্তের লালঘাট থেকে লামাকাঁটা পর্য্যন্ত সাত গ্রামের হাজারো সাধারন মানুষ। মিথ্যা মামলা হামলার ভয়ে এলাকার সাধারন মানুষ বাপ-বেটার গালি-গালাজ হুমকি ধামকিতে কয়লা চোরাচালান, নজরুলের অস্ত্রচোরাকারবার ব্যবসা, ,শামীমের অবৈধ পিস্তল দিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর গুলি বর্ষণের কথা, ও থানা পুলিশের নামে চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্মের কথা জানা থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।
শুল্ক ষ্টেশন দিয়ে চুরির কয়লা থেকে চাঁদাবাজি: চারাগাঁও শুল্ক ষ্টেশন এলাকায় বিভিন্ন ডিপো,কয়লা পরিবহন কাজে ব্যবহ্নত ট্রলি, ঠেলাগাড়ি, ট্রলার থেকে কয়লা চুরির জন্য জয়ধর ও তার লোকজন নিজেরাই তৈরী করে নেন একটি শক্তিশালী কয়লা চোর চক্র। এরা প্রতিদিন ডিপো থেকে সড়ক, সড়ক থেকে সংসার বিল পাড় এলাকায় কয়লা চুরির কাজে ব্যস্ত থাকত। সন্ধায় যেসব চুরির কয়লা জমা হত তা অন্যত্র বিক্রয় কালে জয়ধর প্রতিটন কয়লা থেকে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা পেতেন বলে তার ঘনিষ্টজনেরা জানিয়েছেন। আর এভাবে মহাজোঠ সরকার ক্ষমতায় আসার পর শ্রমিক সর্দার ফজলু ও অস্ত্রচোরাকারবারী নজরুলের পিতা জয়ধর হাতে আলাদীনের চেরাগ পেয়ে যান। ছড়ারপাড়ে কুড়ে ঘরের বসতি ছেড়ে জেলা শহরে কিনেন বাড়ি, গাড়ী, একাধিক ব্যাংকে রয়েছে তার একাউন্ট, বনে যান কয়লা আমদানিকারক। জয়ধরের নাম উঠে আসে কোটি পতির তালিকায়। পুলিশ, বিজিবির কতিপয় অসাধু কিছু সদস্যের সাথেও টাকার জোড়ে দিনে দিনে জয়ধরের গড়ে উঠে গভীর সখ্যতা।
অবৈধ পিস্তল দিয়ে গুলি: শতাধিক লোকের সামনে প্রতিপক্ষের উপর চারাগাঁও সীমান্তবর্তী কলাগাঁও মাইজহাটি মোড়ে গত ১৫ ডিসেম্বর সোমবার সন্ধায় ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি কলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা জয়ধর আলীর সহোদর ময়ধর আলীর ছেলে শামীম (২২) অবৈধ পিস্তল দিয়ে একই গ্রামের জামির আলীর ছেলে সৌরভকে লক্ষ করে গুলি করে। তবে গুলিটি লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি। গুলির শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মোড়ের অর্ধশতাধিক দোকানপাঠ মুহুর্তেই বন্ধ হয়ে যায়। তালিকাভুক্ত সীমান্তের সেই অস্ত্র চোরাকারবারী নজরুলের চাচাত ভাই শামীম এই অপকীর্তির আরেক নায়ক। শামীম সৌরভকে লক্ষ করে প্রথমে ১ রাউন্ড পরে আরো দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। গুলিগুলো লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় অবশ্য কেউ হতাহত হয়নি। এরপর স্থানীয় লোকজন সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে শামীম পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে রাতেই জয়ধর আলী, প্রাক্তন ইউপি সদস্য হাছেন আলী, নুরুলহক, বশির উদ্দিন সহ আরো বেশ কিছু লোক সৌরভদের পরিবারের অবিভাবকদেরকে ম্যানেজ করে ফেলে এমনকি এ বিষয়ে মুখ না খোলার জন্য প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও সতর্ক করে দেয়া হয়। ঘটনার সরজমিনে তদন্ত করতে রাতে থানার এক এসআই সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে চারাগাঁও শুল্ক ষ্টেশন থেকেই জয়ধর আলী ও তদবীরবাজদের কবলে পড়ে ফিরে আসেন।
থানার এসআই (উপ-পরিদর্শক) মো. শাহ আলম ভুইয়া বলেন, শামীম পিস্তল দিয়ে গুলি করেন ব্যাপারটি অনেকেই স্বীকার করেন। পিস্তলটি উদ্যারের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রাক্তন ইউপি সদস্য হাছেন আলী ও নুরুল হক জানান, ঘটনার পরদিন সকালে অবৈধ পিস্তলটি এলাকার মুরুব্বীদের কাছে জমা দেয়ার কথা ছিল কিন্তু শামীমকে তার চাচা জয়ধর পরে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। অতচ আইনশৃংখলা বাহিনী , পুলিশ কিংবা বিজিবি গত ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও শামীমের হেফাজতে থাকা অবৈধ পিস্তলটি উদ্যার করতে পারেনি।
ভারতীয় মোটর সাইকেল চুরির সাথেও জড়িত নজরুল-শামীম: কলাগাঁও থেকে বাগলী সীমান্ত এলাকার ওপারে ভারতীয় মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিক্যাটের সাথে জড়িত রয়েছে জয়ধর পুত্র নজরুল ও ভাতিজা শামীম। পিস্তল দিয়ে গুলি করার ঘটনা ধামাচাঁপা দিতে গিয়ে ঢাকায় আত্বগোপন করে থাকার পর গত ৫ দিন আগে শামীম গ্রীণ সিগন্যাল পেয়ে এলাকায় বীরদর্পে ফিরে আসে। পুর্বে বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাঁটা গ্রামের ওপারে ভারতে রংদু বস্তি থেকে সীমান্তের কাটাতারের বেড়া ও গেইটের তালা ভেঙ্গে জঙ্গলবাড়ির কুদ্দুছের ছেলে কাসেম ও আব্দুর রহিমের ছেলে ইসমাইলের সহযোগীতায় শামীম ভারতীয় এক নাগরিকের ১৫০ সিসি ডিসকভার মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সীমান্তের এপার ওপার দু’গ্রামের লোকজনের মধ্যে উক্তেজনা দেখা দিলে রবিবার গ্রামবাসী কাসেমকে ধরে গণধোলাই দিলে সে নিজে ও তার সহযোগী হিসাবে শামীম ও ইসমাইলের নাম প্রকাশ করে দেয়। ইতিপুর্বে কাসেম ফেনসিডিল, জাল নোট সহ পুলিশ ও বিজিবির হাতে আটক হয়ে জেল খাটে। এলাকাবাসীর নিকট কাসেম জানায়, গত ২ বছরে সীমান্তের ওপার থেকে কমপক্ষে ৫০টি মোটর সাইকেল চুরি করে নিয়ে আসা হয়েছে, সেসব মোটর সাইকেল কিশোরগঞ্জ,করিমগঞ্জ, শেরপুর ও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় শামীমের সহযোগীতায় বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এদিকে শামীমের কথা ফাঁস হয়ে গেলে কৌশলে জয়ধর পুত্র নজরুল লামাকাঁটা ও জঙ্গলবাড়ির দু’পক্ষের লোকজনকে দিয়ে বিকেলে সংঘর্ষ বাধিয়ে দিয়ে ১০ জনকে রক্তার্ত জখম করায়। মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা আড়াল করতে ভাইয়ের হয়ে নজরুল এমন কৌশল অবলম্বন করেছে বলে রামদার কোপে সংঘর্ষে গুরুতর আহত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আবুল হোসেন জানিয়েছেন।
জজ মিয়া নাঠক: বুধবার রাতে বিজিবির হাতে কয়লার চালানটি আটকের পরপরই নজরুল নিজস্ব মোটরসাইকেলে করে বাড়ির মালিক হত দরিদ্র ইদ্রিস আলীকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর নজরুল পরামর্শ দেয় বিজিবির কাছে নজরুল ও ইদ্রিসের চাচাত ভাই মর্তুজার নাম প্রকাশ না করে হাসিম ও অন্যদের নাম বলার জন্য। নজরুলের কথামত বিজিবির কাছে স্বীকারোক্তি দিলে ইদ্রিসকে মামলায় আসামী করা হবেনা এমনকি অন্যযাদেরকে আসামী করা হবে পুলিশ তাদেরও গ্রেফতার করবেনা বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইদ্রিসের হাতে নগদ ৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বাড়িতে পৌছে দেয়। ইদ্রিসের বিধবা মাকেও নজরুল আশ্বাস দেয় চিন্তা করনা মনে করবা আমি মরলে তোমার পুত(ছেলে মরছে),তোমার ছেলের লাগি দরকার হলে জমিও বিক্রি করব তবুও তাকে মামলায় জড়াব না। পরবর্তীতে বিজিবির এক এফএস সদস্য ইদ্রিসকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ইদ্রিস কয়লা চোরাচালানের সাথে জড়িত হাসিম, অরুণ, কুদ্দুছ ,রশীদ ও সোহেলের নাম প্রকাশ করে সে অনুযায়ী মোবাইল ফোনেও তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে বলে ইদ্রিস নিজেই জানায়। এভাবেই জজ মিয়া নাঠক সাজিয়ে হত দরিদ্র ইদ্রিসকে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে নিজে এবং তার সহযোগী মর্তুজাকে মামলার থেকে আড়াল করেছে।
বিজিবির পেছনে জয়ধর: কয়লা আটকের পরদিন জয়ধর পুত্রকে রক্ষায় সুনামগঞ্জ থেকে ছুটে আসেন এলাকায়। গণমাধ্যমে পুত্রের কয়লা চোরাচালান ধরা পড়ার বিষয়টি প্রকাশ না করতে কোথাও কোথাও যোগাযোগ রক্ষা করেন আবার কোথাও গুরুকে দিয়ে মুঠোফোনে হুমকি ধামকিও দেন। এরপর শনিবার বিজিবি থানায় মামলা নিয়ে যাওয়ার পথে পেছনে পেছনে জয়ধরও চলে যান থানায়। সেখানে নতুন যোগদানকৃত অফিসার ইনচার্জের (ওসি)’র সাথে মামলার আগাম তদবীর করতে দেখা করতে গেলে থানার গেইট থেকেই জয়ধর বিমুখ হয়ে রাতে ফিরে আসেন।
জয়ধরের বক্তব্য: বিস্তারিত জানিয়ে জয়ধরের বক্তব্য জানতে তার ব্যাক্তিগত মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা খাঁস জমি অন্যজনের নামে বন্দোবস্ত এনে আমি ও আমার নেতা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁ ও এলাকার আরেক জন মিলে সেই জায়গা রেজিষ্ট্রিমুলে কিনছি, কেউর ডিপো দখল করছি না। এলাকায় শুল্ক ষ্টেশন দিয়ে গত কয়েকমাস ধরে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় অনেকেই বুঙ্গার কয়লা (চোরাচালানের কয়লা) কিনে তাই আমি ও আমার ছেলেরা কয়েক টন কয়লা কিনছিলাম আর এইসব কয়লা কিনতাম না। আর আমার ভাতিজা শামীম পিস্তল দিয়া গুলি করলেও কেউ তো থানায় মামলা করল না। ভারতীয় মোটর সাইকেল চুরি করে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেডা কয় এইত্যা হেই ঘটনার (পিস্তল দিয়া গুলি করার) পর থাইক্যা শামীম তো বাড়িত না। এছাড়াও জয়ধর আলী অধিকাংশ প্রশ্নের উওর না দিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। এ ব্যাপারে উপজেলা আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (নব-গঠিত কমিটির) সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁ ও জয়ধর পুত্র নজরুলের বক্তব্য জানতে গতকাল সোমবার সকাল থেকে একাধিকবার ঐ দু’জনের মুঠোফোনে কল করলেও তারা তা রিসিভ করেননি।