৫ জানুয়ারি যেকোনো মূল্যে জনসভা : আ’লীগের পাল্টা কর্মসূচি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ জানুয়ারি ‘যেকোনো মূল্যে’ জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে রিজভী সমাবেশ করার ব্যাপারে বিএনপির অটল অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে সে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলো।
অপরদিকে ওইদিন পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। এর আগে ঢাকা মহানগর ও মহানগরের আওতাধীন আসনের দলীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে আওয়ামী লীগ। এসময় কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বেঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস উপলক্ষে দুপুরে সারা দেশে আনন্দ র্যালি হবে। সারা দেশে প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা, জেলা ও উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজবে, ওই দিন রাজধানীর ১৬টি স্পটে জনসভা হবে। এর মধ্যে একটি হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকার কর্মসূচির অনুমতি না দিলে কী হবে- এমন প্রশ্নে রিজভী বলেন, অনুমতি না দিলে সেক্ষেত্রে আমাদের কর্মসূচি দিতেই হবে। এজন্য সরকারকেই দায় নিতে হবে।
গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ ঘোষণা করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই দিন সারা-দেশে সভা-সমাবেশ ও কালোপতাকা বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। একটি কেন্দ্রীয় সমাবেশও করবে বিএনপি।
এ ব্যাপারে গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আমি বলেছি, প্রশাসন আমাদের অনুমতি না দিলেও ৫ জানুয়ারি ঘোষিত কর্মসূচি পালন করা হবে।’
সেদিনই ছাত্রদলের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র হত্যার ওই দিনটিতে ঢাকায় জনসভার অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে ইতোমধ্যেই আবেদন করেছি। আমাদের নেতারা আজ মহানগর পুলিশ দপ্তরে গিয়েছিলেন। তারা (পুলিশ) বলেছে, জনসভার অনুমতি দেবে না। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, ৫ জানুয়ারি আমাদের কর্মসূচি করতেই হবে। এই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
এর আগে বিকেলে দলের প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল জনসভার বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে যান। কমিশনারকে না পেয়ে তারা সহকারী কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন। কমিশনার গোপালগঞ্জে গেছেন। তিনি ফিরলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে বলে বিএনপির প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে।
তারেক রহমান প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমান যে বক্তব্য দিয়েছে তার জন্য ক্ষমা না চাওয়ার জন্য গাজীপুরে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়নি ছাত্রলীগ। তারা যদি ক্ষমা না-ই চায় তাহলে খালেদা জিয়াকে কোথাও সমাবেশ করতে দেয়া হবে কি না তা বিবেচনা সময় হয়েছে।
৫ জানুয়ারি বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে কি না সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে ওইদিন কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে না বলে নিশ্চিত করে বলে হানিফ। কারণ বিএনপি যেসব নেতা হুঙ্কার দিচ্ছেন তাদের সেদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে হানিফ বলেন, ‘মানুষকে পেট্রোল দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়াটা বিএনপি-জামায়াতের কাজ। তাদের হাত থেকে মানুষতো মানুষ অবলা প্রাণীও রক্ষা পায়নি। এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যদিয়ে আমাদের সরকার দেশে নির্বাচনের আয়োজন করে। যা বানচাল করতে জামায়াত এবং বিএনপি জোটবদ্ধ হয়ে দেশে নানা নাশকতা চালিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানাতে বেগম খালেদা জিয়াকে বারবার ফোন করেছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সারা দেননি। সবসময় তাদের চিন্তা চেতনায় ষড়যন্ত্র ঘোরা ফেরা করে।
আগামী ৫ জানুয়ারী আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারি সকাল থেকো ঢাকা সহ সারা দেশের সকাল থেকে জাতির পিতার ভাষণ বাজবে। দুপুর আড়াইটায় রাজধানীসহ দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিজয় র্যালি হবে। বিজয় র্যালি শেষে ঢাকার নির্বাচনী এলাকায় ১৬টি স্পটে ভাগ হয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ।’
বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আজ সকালেও বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য জিয়াউর রহমানের মাজারে গিয়ে বলেছেন, তারা ৫ জানুয়ারি মাঠে নামবেই। এ ধরনের বক্তব্য উসকানিমূলক। এ ধরনের বক্তব্য আমরা কোনো ভাবেই মেনে নেব না।’
১০ জানুয়ারির সমাবেশ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক সমাবেশ হবে। এদিন মূলত জাতির পিতা পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাংলার মাটিতে পা রেখেছিলেন। তাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ দিন সোহওরায়ার্দী উদ্যানে সর্বকালের সেরা ঐতিহাসিক সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুকে তারেক রহমানের কটূক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো মনে করি ওই কটূক্তির জন্য তারেক রহমানের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। না হলে তাকে দেশবাসী মাফ করবেন কি না সেটা ভেবে দেখতে হবে।’