মাঠে আ.লীগ-পুলিশ, নামতে পারেনি ২০ দল

সিলেটে নিরুত্তাপ হরতালে গ্রেফতারে উত্তাপ

Sylhet Hortal 29-12-2014_Shahriarসুরমা টাইমস ডেস্কঃ ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতালে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলের নেতাকর্মীদের রাজপথে দেখা না গেলে ও সিলেটের রাজপথ কাঁপালো আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতা শাহরিয়ার গ্রেফতার হওয়ায় উত্তাপ ছড়িয়েছে ২০ দলীয় জোটে। হরতালের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন পথে পথে তাদের ভোগান্তির সীমা ছিল না। অনেকেই রিকশা, ভ্যান ও হেঁটে কর্মস্থলে যান। হরতালের কারণে নগরীর কাঁচাবাজারে সবজি সরবরাহ কম থাকায় দাম ছিল বেশি । বিক্রেতারা বলছেন, হরতাল থাকায় স্বাভাবিক সবজির চালান আসছে না। মাছের বাজারেও আমদানি কম। এরপর আ মঙ্গলবার সিলেটে আরো আধাবেলা হরতালের কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। হরতালে নগরীর বেশিরভাগ দোকান পাট বন্ধ ছিল। নগরীতে প্রতিটি মোড়ে মোড়ে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থান। হরতালে ভারি যানবাহন এবং প্রাইভেট গাড়ির চলাচল না থাকলেও রিকশা-অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে রিকশাওয়ালারা অন্যান্য দিনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোবহানিঘাটের বাসিন্দা আফজাল হোসেন অভিযোগ করেন, সবজি বাজার থেকে বন্দরবাজার প্রতিদিন ১০ টাকা রিকশা ভাড়া লাগলেও সোমবার সে জায়গায় তাকে ৩০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে। শহরতলীর আম্বরখানা থেকে কোন বাস কিংবা অটোরিক্সা না পেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশায় করে জিন্দাবাজারে যান ব্যবসায়ী গিলমান আহমদ ।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে কোর্ট পয়েন্টে জড়ো হয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টায় কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। এ সময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জেলা সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আসাদ আহমদ, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন, জেলা যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামীলীগ অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আলম খান মুক্তি, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার, সাধারণ সম্পাদক এমরুল হক প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন হয়েছিল বলেই আজ দেশে গণতন্ত্র আছে। যারা স্বৈরাচার লালন-পালন করেছে স্বৈরাচারের মদদে দেশকে পিছনের দিকে নিয়েছিল, তারাই ৫ জানুয়ারী নির্বাচন না হওয়ার জন্য দেশে জ্বালাও পোড়াও করেছিল। বিএনপি-জামায়াত দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। বাংলার জনগণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে জামায়াত-শিবিরকে দাত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছে। বক্তারা আরো বলেন, আগামী ৫ জানুয়ারী আওয়ামী লীগ জনগণের জানমালারে রক্ষায় রাজপথে থাকবে। ৭১’র পরাজিত শক্তি জামায়াত ও তাদের মদদ দাতা বিএনপিকে প্রতিহত করবে।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ করে।
অন্যদিকে, ২০ দলীয় জোটের ডাকা সকাল সন্ধ্যা হরতাল সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও ঢিলেঢালা ভাবে পালিত হয়। সকালে কাজিটুলা এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে সিলেটে হরতাল শুরু হলেও নগরীর চৌহাট্টা এলাকা থেকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। হরতালের সমর্থনে নগরীর পাঠানটুলা, নয়াসড়ক ও দক্ষিণ সুরমা সহ বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে মহানগর জামায়াত। দক্ষিন সুরমায় বিএনপি র একটিমাত্র ঝাটিক, ছাত্রদল-শিবিরের দু-একটি করে মিছিল ছাড়া আর কোথাও কোনপ্রকার পিকেটিং বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। হরতালে নগরীতে বাস, ট্রাক, লেগুনা, সিএনজি অটোরিক্সাসহ ভারী যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দুরপাল্লার কোন যানবাহন। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আবদুর রাজ্জাক।
এদিকে হরতালে মাঠে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলের নেতাকর্মীদের তেমন দেখা না গেলেও আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সরব ছিলেন। হরতাল বিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলা আওয়ামীলীগ। মহানগর জামায়াতের আমির এড: জুবায়ের গ্রেফতার হওয়ায় গ্রেফতার আতংকে সিলেট জামায়াত ও ছিল নিরব।
প্রসঙ্গত, গাজীপুরে জনসভায় ১৪৪ ধারা জারি ও সারাদেশে বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়া এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায়সহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সকাল-সন্ধ্যা এ হরতালের ডাক দেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। গতকাল সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ হরতাল চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।