সিলেটে ওলামা লীগের ‘তাবিজ’ বাণিজ্য
সংগ্রাম সিংহঃ সিলেটে আওয়ামী ওলামা লীগের ডিজিটাল সদস্য কার্ড বিক্রি হচ্ছে ‘তাবিজ’ বলে! কার্ড সরবরাহকারী ও সংগ্রহকারীরা গোপনীয়তা রক্ষায় আইডি কার্ডের বিকল্প নাম দিয়েছে ‘তাবিজ’। টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হলেও এই তাবিজের প্রতি ঝোঁক বেশি জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। তাদের বিশ্বাস এই কার্ড সঙ্গে থাকলে আইন-শৃংখলা বাহিনীর ঝুট-ঝামেলা থেকে বাঁচা যাবে। এই বিশ্বাস নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিযুক্ত এই কার্ড সংরক্ষণ করছে জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের কর্মীরা।
তবে কার্ড সরবরাহকারী চক্র ও সংগ্রহকারীরা এ ব্যাপারে চরম গোপনীয়তা অবলম্বন করছে। জেনে শুনেই নিজ নিজ দলীয় নীতি ও আদর্শ বিরোধী এই পথে পা বাড়ানোর কারণেই উভয় পক্ষই গোপনীয়তার ব্যাপারে সতর্ক।
সিলেটে এই তাবিজ সরবরাহ করা হয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক। প্রতিটি তাবিজের বিনিময়ে নেয়া হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। এভাবে আওয়ামী ওলামা লীগের নাম ভাঙিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকচক্র।
এমনকি টাকার বিনিময়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় গঠন করা হয় মহিলা ওলামা লীগ! কমিটি গঠনের নামে বিতর্কিত, অবাঞ্ছিত মহিলাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় ‘তাবিজ’।
এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে বিতর্কিত মহিলা ওলামা লীগের কমিটি বাতিল করা হয় সম্প্রতি। বিতর্কিত ওলামা লীগ নেতা খোকন কার্ড গ্রহীতাদের বলে বেড়াচ্ছেন, এই টাকার ভাগ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দিতে হয়। তাছাড়া কার্ড তৈরির কাজে বাকি টাকা খরচ হয়।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, এই প্রতারক চক্রের মূলহোতা ছাদিকুর রহমান খোকন নামের এক ব্যক্তি। চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া এই খোকন নিজেকে কখনও আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক কখনও কেন্দ্রীয় নেতা পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই খোকন কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাক্ষর জাল করে রাজনৈতিক আদর্শ বিরোধীদের কাছে এই কার্ড সরবরাহ করায় স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি অবগত করা হয় কেন্দ্রকেও। বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর প্রতারকচক্র আইডি কার্ড সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রেখেছে।
ফলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিলেও ‘তাবিজ’ সরবরাহ করছেন না খোকন। এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। কানাইঘাটের এমএ হান্নান অভিযোগ করেন, কার্ড দেয়ার নামে আমার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নেন ছাদিকুর রহমান খোকন।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে ছিলেন মাওলানা এখলাছুর রহমান। ক’দিন আগে টাকার বিনিময়ে ‘তাবিজ’ নিয়েছেন খোকনের কাছ থেকে। কিন্তু পদ পদবি দেয়ার কথা থাকলে তা করেননি। পরে জানতে পেরেছেন খোকনেরই পদ পদবি নেই, ভুয়া।
বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের সিলেট জেলা সভাপতি মো. আল আমিন সংগ্রামী বলেন, ‘ছাদিকুর রহমান খোকন আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। টাকা না দেয়ায় আমার সংগঠনের সিল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তার কাছে এ পর্যন্ত ৮-১০ জন আলেম-ওলামা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’
মহানগর ওলামা লীগের সভাপতি ডা. মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘খোকন সংগঠনের সদস্য করার নামে আমার কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু তার কারণে এখন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যাচ্ছে না। জিন্দাবাজার এলাকায় সিলেট কল্যাণ সংস্থার কিছু সদস্যকে নিয়ে আমাকে প্রাণনাশের চেষ্টা চালায় খোকন। এ ঘটনার ব্যাপারে আমি থানায় জিডি করেছি।’
ওলামা লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, খোকনের হাতে গোয়াইনঘাট ওলামা লীগের সভাপতি মাওলানা জয়নাল আবেদীন নির্যাতিত হয়েছেন। দরগাহ গেটের এক শিক্ষকের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল খোকন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন অবগত। বশির উদ্দিন নামের একজনের টাকা লুটে নিয়েছিল খোকন। এ ব্যাপারে থানায় জিডি হয়েছে।
সংগঠনের কর্মীরা জানান, দক্ষিণ সুরমার কাইস্তরাইলের ডা. মনির, দক্ষিণ সুরমার ডা. মখলিছুর রহমান, উপশহরের কালাম, কুলাউড়ার হাফিজ ইমরান, আল আমিন প্রতিবাদী, আবদুর রহমান লিমন ও একাধিক মামলার আসামি ছিনতাইকারী মিজান খোকনের সহযোগী ও ক্যাডার।
এ ব্যাপারে ছাদিকুর রহমান খোকনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, সব অভিযোগ মিথ্যা।
বাংলাদেশ ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল্লামা ইলিয়াস হোসেন বিন হেলালী বলেন, আইডি কার্ড তৈরি ও সরবরাহের কোনো নির্দেশ নেই কেন্দ্রের। কার্ড তৈরিসহ অন্য অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। – যুগান্তর