জিয়াদকে উদ্ধারে বুয়েট দল, অত্যাধুনিক ক্যামেরা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ তুলনামূলভাবে সরু নতুন একটি পাইপ ঢুকিয়ে শিশুটিকে উদ্ধারের একটি বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছেন বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল। তাদের সঙ্গে কথা বলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা বুয়েটের প্রস্তাবিত পদ্ধতিতেই চেষ্টা চালাতে চান। ইতোমধ্যে পাইপ কেটে ওই ‘ক্যাচার’ বানানোর কাজ শুরু হয়েছে।
বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষর্থী তানভীর আরাফাত ধ্রুব জানান, তাদের ওই পাইপের নিচের অংশে এমন ব্যবস্থা থাকবে যাতে সেটি নিচে পৌঁছে গুটিয়ে রাখা একটি অংশ খুলে দেবে শিশুটিকেসহ তা উপরে উঠিয়ে আনার ব্যবস্থা থাকবে।
শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য সেখানে ক্যামেরা ও আলোসহ বশির আহমেদ নামের এক স্বেচ্ছাসেবীকে নামানোর কথা ভাবা হলেও পরে নিরাপত্তার খাতিরে তা বাতিল করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের স্বেচ্ছাসেবী বশির এর আগে রানা প্লাজার উদ্ধার অভিযানেও অংশ নিয়েছিলেন। এদিকে ঘটনার নয় ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ওয়াসার ওয়াটার প্রুফ ক্যামেরা। কিছুক্ষণের মধ্যে সেটিও পাইপে নামানোর চেষ্টা চলছে। এ উদ্ধার অভিযানের ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেজর শাকিল নেওয়াজ।
৬০০ ফুট নিচে শিশু জিয়াদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। সেখানে খাবার, পানীয় এবং অক্সিজেন পাঠানো হয়েছে। এক ফুট ব্যসের পাইপটি সম্পূর্ন তুলে ফেলা হয়েছে। কিছুক্ষনের মধ্যে নিচে পাঠানো হচ্ছে বশির আহমেদ নামের একজন স্থানীয় যুবককে। যিনি নিচে গিয়ে জিয়াদকে উদ্ধারের চেষ্টা করবেন। রাজধানীর শাহজাহানপুরের রেলওয়ে মাঠসংলগ্ন পানির পাম্পের ৪০০ ফুটেরও বেশী গভীর একটি পাইপে জিয়াদ নামের ৪ বছরের একটি শিশু পড়ে গেছে।
কিছুক্ষন আগে ৪০০ ফুট নিচে ক্যামেরা ও আলো পাঠালেও শিশুটিকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পাঁচবার বিভিন্ন কায়দায় দড়ি ফেলেও ১৪ ইঞ্চি ব্যাসের ওই পাইপ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় ক্রেইন দিয়ে পাইপ টেনে তুলে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান।
তিনিই এ উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উদ্ধারকর্মীরা ওপর থেকে কয়েক বার চিৎকার করে ডেকে জিহাদের সাড়া পেয়েছেন। দড়িতে বেঁধে তার জন্য দুধের বোতল পাঠানো হয়েছে। শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে গর্তে পাঠানো হচ্ছে অক্সিজেন।
কিন্তু দীর্ঘ সময়ে ঠাণ্ডার মধ্যে গভীর পাইপে থেকে ক্রমে নিস্তেজ হয়ে আসছে জিহাদ।
এদিকে চার বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে আশঙ্কায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন জিহাদের মা খাদিজা বেগম। প্রতিবেশীরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে শিশুটি পড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট শিশুটিকে উদ্ধারে রুদ্ধশ্বাস অভিযান পরিচালনা করছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, পাইপটির ব্যাস এক ফুট। তাই শিশুটিকে উদ্ধারে বড় কাউকে পাইপ দিয়ে নিচে নামানো যাচ্ছে না। এরই মধ্যে পাইপে রশির সাহায্যে শিশুটিকে জুস দেওয়া হয়েছে। অন্ধকারে যাতে ভয় না পায়, সেজন্য দুটি টর্চলাইট পাঠানো হয়েছে। শিশুটি এসব জিনিস পেয়েছে বলে সাড়া দিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল থেকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিশুটির নাম জিয়াদ। তার বয়স চার বছর। বাবার নাম নাসিরুদ্দিন। তারা রেলওয়ে কলোনিতে থাকে। নাসিরুদ্দিন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দারোয়ান।