খালেদা জিয়ার ওপর হামলার পরিকল্পনা !
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে ঢাকার বকশীবাজার ও আশেপাশের এলাকায় ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারকে দায়ী করে বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করাই ছিল ক্ষমতাসীনদের ওই আক্রমণের উদ্দেশ্য। এর প্রতিবাদে আগামিকাল শুক্রবার সারা দেশে মহানগর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুপুরে বিএনপি, ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষের রেপ্রক্ষিতে দলের অবস্থ ান ব্যাখ্যা করতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।ফখরুল বলেন, দুপুর বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে হামলা, এতে ৬০০ জন আহত ও ৫০ জনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশে জেলায় জেলায় এবং ঢাকা মহানগরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বিএনপি।
ফখরুল বলেন, এ অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ফেরার পর এ ঘটনা ঘটেছে।তারা চেয়েছিল খালেদা জিয়ার গাড়িতে হামলা করতে। কিন্তু জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থানে তারা সফল হয়নি। কিন্তু এটা সবার কাছে স্পষ্ট, এ হামলা পূর্বপরিকল্পিত।তিনি বলেন, সরকারের আসলে কোনো নৈতিক ভিত্তি নেই বিধায় তারা ভিন্নমতের লোকজনকে দমন-নিপীড়ন করছে। গণআন্দোলন দমাতে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে।
এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারকে এ ধরনের আচরণ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, সরকারের এমন কার্যকলাপে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায়ভার তাদের ওপরই বর্তাবে।
বুধবার দুপুরে ওই সংঘর্ষের চার ঘণ্টা পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপির মুখপাত্র।
তিনি বলেন, মূল পরিকল্পনা ছিল দেশনেত্রীর গাড়িবহরে হামলা। আপনারা দেখেছেন তার গাড়িবহর সেখানে পৌঁছানোর পাঁচ মিনিট আগে থেকেই আক্রমণ শুরু হয়।পরে জনগণের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ছয় শতাধিক মানুষকে তারা আহত করেছে।এ ঘটনার নিন্দা ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, অন্যথায় যে কোনো অবস্থার জন্য সরকারকেই দায় নিতে হবে।
মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরে খালেদা জিয়ার জনসভার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
দুই দুর্নীতির মামলার শুনানির দিন থাকায় বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারস খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে আদালতের পথে রওনা হন। তার আসার খবরে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই বকশীবাজার থেকে ফজলে রাব্বি হল পর্যন্ত রাস্তা আটকে মিছিল শুরু করে। এই মিছিলের মধ্যেই বকশী বাজার মোড়ে হঠাৎ শুরু হয় সংঘর্ষ।এ সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে বৃষ্টির মতো ঢিল ছোড়াছুড়ি চলে। সড়ক দ্বীপের গাছ ও বেড়া ভেঙে লাঠি বানিয়ে দুই পক্ষ মারামারিতে লিপ্ত হয়। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়।
এরই ফাঁকে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর ওই এলাকা পার হয়ে আদালতে যায়। এ সময় বিএনপির একদল কর্মীকে লাঠি হাতে গাড়ির সামনে সামনে এগোতে দেখা যায়। তাকে নিরাপত্তা দিতে সামনে পেছনে পুলিশের গাড়িও ছিল।শুনানি শেষে ঘণ্টাখানেক পর ওই পথ দিয়েই নির্বিঘ্নে গুলশানে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
ফখরুল বলেন, কয়েকদিন ধরেই অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা নানাভাবে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে অশালীন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। সাথে বিভিন্ন হুমকি ধামকিও ছিল। যারই ফল আজকের এই হামলা।তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ র্যাবের ছত্রছায়ায় এ হামলা চালানো হয়েছে। এতে ছাত্রলীগের কর্মীরাসহ সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এ থেকে তাদের বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, এ হামলায় ৬শর বেশি মানুষ আহত হয়েছে। যেখানে ১০০ জনের মতো নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। এছাড়া ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ হামলার নির্দেশ দিয়ে থাকতে পারেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ২৭ ডিসেম্বর আমরা গাজীপুরে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছি। আর কারা দিবস উপলক্ষে কাশিমপুরে যান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আসার পর থেকেই আওয়ামী লীগ এমন আচরণ করছে।