দফায় দফায় সংঘর্ষে বকশীবাজার রণক্ষেত্র

fileসুরমা টাইমস ডেস্কঃ বকশিবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে বিএনপি-ছাত্রদলের মিছিলে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালায়। এছাড়া কাঁদানে গ্যাস ও জলাকামান ব্যাবহার করে। লাঠি নিয়ে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ব্যাপক ঢিল ছোড়াছুড়ি, পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও লাঠিপেটার মধ্যে দিয়েই পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী আদালতে এসে হাজিরা দিয়ে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। গতকাল বুধবার বেলা ১২টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। আট থেকে দশজনকে রাস্তায় ফেলে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পেটাতেও দেখেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রতক্ষদর্শীরা। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজিরা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বকশিবাজার এলাকায় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। লাঠিপেটা করে সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরই মধ্যে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি আদালত প্রাঙ্গনে ঢুকে পড়ে। পরে আদালতে হাজিরা দেন তিনি।এদিকে বাইরে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিএনপি’র কর্মীরা। ঢাকা মেডিকেলের সামনে একটি কালো মাইক্রোবাসেও আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এটি আওয়ামী লীগের নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি ছবি বিশ্বাসের। হামলায় ছবি বিশ্বাস আহত হন বলেও জানা গেছে।
এসময় পুলিশের আর্মাড ভেহিকেল ছুটে আসে। আনা হয় জলকামান। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটও ছুটে এসে আগুন নেভায়।গাড়ির চালক হাসনাতের সঙ্গে কথা বলে জানান, রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যাচ্ছিলেন ছবি বিশ্বাস। তার মাথায় লাঠির আঘাত লেগেছে।
এদিকে পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ ছাত্রদল কর্মীরা আশেপাশের বিভিন্ন ভবনে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এসব ঘটনায় পুলিশসহ প্রায় ৫০ জন আহত হন। তাদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।এর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঢামেক এর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো.মোজাম্মেল হক জানান, হাতে মাথায় আঘাত নিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে এসেছেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নেত্রকোনার এমপি ছবি বিশ্বাস আহত হওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন চিকিৎসক।বুধবার দুপুরে বকশী বাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের অস্থায়ী আদালতে খালেদা জিয়ার যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সংঘর্ষের সূত্রাপাত হয়। পরে তা বকশী বাজার মোড়সহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বকশী বাজার মোড়ে খালেদা জিয়া আদালত চত্বরে যাওয়ার খবরে মিছিল বের করে ছাত্রদল। এসময় বুয়েট ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে।
পরে তা পলাশী মোড়, নাজিম উদ্দিন রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, চান খাঁর পুল মোড়সহ এর আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।এ দিকে এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকৃতরা হলেন, রিপন মণ্ডল, সোহেল, আরিফুল ইসলাম এবং আল আমিন।
লালবাগ থানার এসআই ডেরিক জানান,ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করা হয়েছে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাস ছাড়ে বলেও জানান তিনি।বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির মিছিলে হঠাৎ হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। চলে ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত। এ সময় বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। আহতরা কোনো দলের নাকি সাধারণ নাগরিক তা এখনও জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। যদিও বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, পুলিশ ছাত্রলীগের পক্ষ হয়েই কাজ করেছে।
জানা গেছে, বুধবার বকশিবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার হাজিরাকে ঘিরে বিএনপি ও ছাত্রদল সেখানে অবস্থান করে। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। পরে ছাত্রলীগও পাল্টা মিছিল নিয়ে সেখানে এসে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। ছাত্রলীগের মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ।
বকশিবাজারে বিএনপির ওপর ছাত্রলীগের হামলাপরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ছাত্রলীগ কর্মীরা ধাওয়া দিয়ে ছাত্রদল ও বিএনপির বেশ কয়েকজনকে রাস্তায় ফেলে পিটায়। পরে তাদেরকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে কয়েকজেনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে চিকিসাধীন কয়েজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন-সাইদ আলামিন, আকম মোজাম্মেল, জামিল, ইমরান, হাসান, রাজন, জালাল, আরেফিন এবং মিল্লাদ।এদিকে সংঘর্ষের মধ্যেই আদালতে হাজির হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
সংঘর্ষে আহত অন্তত ২৫ জন বিএনপিকর্মী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে মেডিকেল ফাঁড়ি পুলিশের পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন।জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার শুনানির দিন থাকায় বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারস খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে আদালতের পথে রওনা হন। তার আসার খবরে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই বকশীবাজার থেকে ফজলে রাব্বি হল পর্যন্ত রাস্তা আটকে মিছিল শুরু করে। এই মিছিলের মধ্যেই বকশী বাজার মোড়ে হঠাৎ শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। বিএনপি ও ছাত্রদলকর্মীরা ধাওয়া খেয়ে পলাশী মোড় থেকে বুয়েটের দিকে এগোলে সেখানে ছাত্রলীগ কর্মীরা আবার তাদের ধাওয়া দিলে ব্যাপক সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
এ সময় দুইপক্ষেই বৃষ্টির মতো ঢিল ছোড়াছুড়ি চলে। সড়ক দ্বীপের গাছ ও বেড়া ভেঙে লাঠি বানিয়ে দুই পক্ষ মারামারিতে লিপ্ত হয়। মিনিট ১৫ সংঘর্ষ চলার পর লাঠি হাতে রাস্তায় নামে পুলিশ। সেই সঙ্গে শুরু হয় ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ।এই পরিস্থিতিতে বিএনপি কর্মীরা চান খাঁর পুলের দিকে সরে যায়। অল্প সময়ের জন্য হলেও পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।এরই মধ্যে ওই এলাকা দিয়ে বকশীবাজারে আদালতের দিকে অগ্রসর হয় খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর। এ সময় বিএনপির একদল কর্মীকে লাঠি হাতে গাড়ির সামনে সোমনে এগোতে দেখা যায়। তাকে নিরাপত্তা দিতে সামনে পেছনে পুলিশের গাড়িও ছিল।
খালেদা জিয়ার গাড়ি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আদালতের ফটকে পৌঁছালে বিএনপি ও ছাত্রদল কর্মীরাও ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ আবার লাঠিপেটা করে শুরু করলে তারা দূরে সরে গিয়ে ঢিল ছুড়তে থাকে। আদালতের সামনে গাড়ি থেকে নেমে বিএনপি চেয়ারপারসন এজলাসে চলে যান।
সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের নতুন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার খালেদার সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে বাদীর সাক্ষ্য শোনার জন্য ৭জানুয়ারি নতুন তারিখ রাখেন।এদিকে আদালতে শুনানি চলার মধ্যেই চানখারপুলের পশ্চিম পাশে বিএনপি কর্মীরা একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় এবং রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে।তারা ঢাকা মেডিকেলের ফজলে রাব্বি হলের দিকে এগোলে পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে তাদের তাড়া করে সরিয়ে দেয়। জল কামান থেকে পানি ছিটিয়ে নেভানো হয় মোটরসাইকেলের আগুন। পুলিশের টিয়ার শেলের গ্যাস এ সময় মেডিকেলেও ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় জুতা, স্যান্ডেল।