৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লোকজনই ভোট দেয়নি
বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব উদ্দিন খোকন
নিউইয়র্ক থেকে এনা: বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল ক্ষমতার উৎস হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে র্যাব, পুলিশ এবং দলীয় সন্ত্রাসীরা। অন্যদিকে ৫ জানুয়ারির তামাশার নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ৫%। আমি মনে করি না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসমর্থন মাত্র ৫%। তাদের জনসমর্থন আরো বেশি। তার অর্থ দাঁড়ালো ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়মী লীগের লোকজনও ভোট দেয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার এবং গৃহপালিত বিরোধী দলের নেত্রী কেউ নির্বাচিত এমপি না। তারা কাগজে কলমে প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার এবং বিরোধী দলের নেত্রী। গত ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ( নিউইয়র্ক সময়) জ্যাকসন হাইটসে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রীম কোর্ট বারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এ কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শামসুল ইসলাম মঞ্জু ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনের পরিচালনায় সাংবাদিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক এবং বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ দূত ও উপদেষ্টা ডা. মজিবুর রহমান মজুমদার।
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, সাবেক সহ সভাপতি ইলিয়াস আহমেদ মাস্টার, এমদাদুল হক কামাল, মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, আবুল কাশেম, বিএনপি নেতা ড. শওকত আলী, আব্দুস সবুর, যুব দলের সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী, বিএনপি নেতা নূরুল আমিন, শাহজাহান শেখ, জীবন সফি, সুভাষ মজুমদার, শাহাদত হোসেন রাজু, এডভোকেট কাজী খায়রুল বশার, এ বি সিদ্দিক, আব্দুর রহিম, বদিউল আলম, রাশেদ খান প্রমুখ।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতার উৎস হচ্ছে র্যাব, পুলিশ এবং সন্ত্রাসী বাহিনী। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উল্টো সর্বজন স্বীকৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিই বাতিল করে দেয়। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির তামাশার নির্বাচনে মাত্র ৫% ভোট পড়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয়নি। এমন কি আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও ভোট দেয়নি। আমরা মনে করি আওয়ামী লীগের সমর্থক ৫% এর বেশি আছে। আওয়ামী লীগের লোকজন ভোট দিলে ৫% ভোট পড়তো না, আরো বেশি ভোট পড়তো। এমনই প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার এবং গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নেত্রীও নির্বাচিত এমপি নন। তারা কাগজে কলমে প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও বিরোধী দলীয় নেত্রী। তিনি বলেন, এই সরকার হচ্ছে খুনি এবং মামলাবাজ সরকার। দেশের প্রতিটি থানায় বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। রক্তাক্ত হাতে কোনদিন কেউ বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, এই সরকারও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, ১/১১ এর সময়ের সরকার কর্তৃক যখন মাইনাস টু ফর্মুলা চলে তখন বিগ্রেডিয়ার বারীসহ অন্য এক কর্মকর্তাকে শেখ হাসিনা বলেছিলেন তিনি তিন দিনের মধ্যেই বিদেশে চলে যাবেন। সুতরাং বেগম খালেদা জিয়াও বিদেশ যেতে হবে। বেগম জিয়াকে আল্টিমেটাম দেয়া হলো। বেগম খালেদা জিয়া একটি অনুষ্ঠানে আমাকে কাছে ডাকলেন এবং পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলেন। আমি বের হয়েই সাংবাদিকদের বলেছিলাম, বেগম খালেদা জিয়া দেশেই চিকিৎসা করবেন এবং মরলে বাংলাদেশেই মরবেন। তিনি বিদেশে যাবেন না। পরে আমি মামলা করেছিলাম। আমার সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন। বর্তমান এটর্নী জেনারেলসহ আওয়ামী লীগের অনেক আইনজীবীকে বলেছিলাম মামলা করার জন্য। তারা মামলা করেননি। আমার মামলার কারণেই খালেদা জিয়ার বাইরে যেতে বাধা আসলো, সেই রায়ের সূত্র ধরেই ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে আনার বাধা তুলে নেয়। তিনি বলেন, ১/১১ এর সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব মামলা করেছিলো এবং শেখ সেলিমসহ অনেকেই স্বাক্ষীও দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সেই মামলাগুলো উদাও হয়ে গেল কিন্তু খালেদা জিয়াকে হয়রানি করার জন্য তার মামলাগুলো রেখে দেয়া হলো। তিনি তারেক রহমানের বক্তব্য সম্পর্কে বলেন, তারেক রহমান নিজে কোন বক্তব্য দেননি। সেক্টর কমান্ডার এ কে খন্দকার, শারমিন আহমেদসহ অন্যান্য লেখকদের বই’র উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সারা বাংলাদেশে মামলা দেয়া হচ্ছে আর বিচারকরাও ভয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মৃত্য ব্যক্তির আবার মানহানি কী?
লিখিত বক্তব্যে ডা. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ আজ দুর্বিসহ অবস্থা বিরাজ করছে। স্বৈরাচারি আওয়ামী লীগ সরকার কথায় কথায় দেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে জেলে রাখছে। সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য হামলা মামলা দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই সরকার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সমাবেশে লাখো লাখো মানুষের উপস্থিতি দেখে দিশেহারা হয়ে গেছে। মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে দেশনেত্রীর চলার পথ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। সরকার জিয়া আর্ফনেজ ট্রাস্ট’র ফান্ড নিয়ে মামলা করে দেশনেত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করার সকল ধরনের দূরবিসন্ধি চালিয়ে যাচ্ছে। তার জনসভায় বাধা দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গাজীপুরে বিএনপির সমাবেশের তোরণ, ফেস্টুন, ব্যানার সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসীরা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সরকার এখানেই ক্ষান্ত নয়, বাংলাদেশের আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নোংরা ভাষায় কথা বলছে। যা জঙ্গী সমাজের সাথে তুলনা করা চলে। তিনি আরো বলেন, আমাদের দাবি অবিলম্বে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং জাতীয় নির্বাচন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দের ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।