গ্রাম্য কুসংস্কার একটি ব্যাধি : মিজানুর রহমান মিজান
গ্রাম প্রধান বাংলাদেশ। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আজ ও অনেক ক্ষেত্রে অসচেতন। তাছাড়া শিক্ষিতের হার কোন কোন ক্ষেত্রে যদি ও বলা হয়ে থাকে বৃদ্ধি পাচেছ। তথাপি প্রকৃত শিক্ষার হার আনুপাতিক হারে কম বৃদ্ধি পাচেছ। শিক্ষিত মাত্রই সুশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত। এ শ্রেণীর আনুপাতিক হার এর কথা বলছি। সরকার ছাত্রীদের বেতন মওকুফসহ উপবৃত্তি চালু করে সত্যিই একটি প্রশংসনীয় ও গর্বিত উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে গ্রামের স্কুলগুলিতে ছাত্রী সংখ্যা উল্লেখজনক বৃদ্ধি পেয়েছে। কারন অনেক অভিভাবক কিছু দিন পূর্বে ও মেয়েকে স্কুলে পাঠানো বিভিন্ন কারনে অভিশাপ মনে করতেন।
কিন্তু এখন উপবৃত্তিসহ বেতন মওকুফের ফলে স্কুলে পাঠাতে বা শিক্ষা লাভে আগ্রহী। শিক্ষাক্ষেত্রে এটা উল্লেখযোগ্য বা আশানুরুপ ফল প্রাপ্তির একটা অংশ। তথাপি দেশের শিক্ষার্থীর একটা বিরাট অংশ প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিপর্যয়ে ঝরে পড়ে। ঝরে পড়া অংশ বা অল্প শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের মধ্যে কুসংস্কার বাসা বেঁেধ আছে গ্রামাঞ্চলে। গ্রামের মানুষের মধ্যে অসংখ্য সমষ্যা বিদ্যমান। তার অন্যতম একটি সমষ্যা হচেছ কুসংস্কার। গ্রামের কুসংস্কারগুলো মেয়েদের মধ্যে বহুল পরিমাণে বিরাজমান। কুসংস্কারকে ওরা ধর্মীয় ফরজ কাজের মত আকঁড়ে ধরে। ফলে ধর্মীয় , সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়।
গ্রামে এক সময় কঠোর নিয়ম চালু ছিল সোমবারে মেয়েরা বাপের বাড়ি হতে স্বামীর বাড়ি আসবে না। মেয়ের মা এক্ষেত্রে সাধারণত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেই।এ যে কুসংস্কার তা বুঝানো যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে আমি দেখেছি মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করবে। এমন ও রুপ ধারণ করে যা বিচেছদ পর্যন্ত গড়াবে। কিন্তু পরিশেষে এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হবে। পূর্ব পুরুষরা এ কাজে উৎসাহিত করেছেন। তা পালনে অদ্যাবধি অভ্যস্থ অনেক পরিবার। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষিত ব্যক্তি যতই বুঝাবার চেষ্টা করবে , ততই বিপদ ও ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে। তবে আশার কথা বর্তমানে অনেকটা দুরীভুত হয়েছে।
কয়েক বৎসর পূর্বে ও গ্রামাঞ্চলে চৈত্রের শেষে গুরুতর রোগ মুক্তি উপলক্ষ্যে এক প্রকার “রুট ” নামক রুটি তৈরী করে বন্টন করা হত। রুটিটি ছিল অত্যন্ত মজাদার ও ব্যয়বহুল। এটা ছিল গৃহস্থের গরুর পরিমাণের উপর নির্ভরশীল। গৃহস্থের যে কয়টা গরু ছিল ছোট বড় ততটা রুটি তৈরী হত। এ রুটি তৈরী করতে উক্ত সময় গ্রামময় হিড়িক পড়ে যেত। প্রতিদিন একাধিক পরিবারে রুটি তৈরী হত। গ্রামের যুব সম্প্রদায় এ কাজে ব্যস্ত থাকতেন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। মুরবিবয়ানরা দিক নির্দেশনা প্রদান করতেন। খেতে ও অনেক সুস্বাদু ছিল। কিন্তু বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে গরুর সংখ্যা পূর্ব থেকে অনেক কমে গিয়াছে এবং অনেক পরিবারে গরু থাকলে ও আজ আর রুট নামক রুটি তৈরী মোটেই হয় না। রুটের কথা মানুষ ভুলেই গেছে। বয়স্কদের মুখ থেকে অনেক সময় শুনা আক্ষেপের সুরে , “ বহুদিন হয় উহার স্বাদ থেকে বঞ্চিতের কথা”।
ছোট শিশুর দাঁত পর্যায় ক্রমে পতিত হয়ে আবার নূতন দাঁত গজায়। পড়ন্ত দাঁত কাক দেখলে নুতন দাঁত উঠবে না এ বিশ্বাস অনেকের মধ্যে বিদ্যমান। পোঁকায় খাওয়া আম খেলে শিশুরা সহজে সাতাঁর শিখতে পারবে , পারা যায়।সুতরাং শিশুকে পোঁকায় খাওয়া আম খেতে প্রতিযোগিতায় নামানো হয়।
কোথাও যাত্রা কালে পিছন থেকে ডাকা অমঙ্গল। জরুরী কিছু ফেলে গেলে ও অমঙ্গলের লক্ষণ। কথা হল জরুরী , এমন কি যে কার্যোপলক্ষ্যে যাত্রা শুরু সে জিনিষ ফেলে গেলে ভুল বশত: ফিরে এসে নেয়াটা অমঙ্গলের লক্ষণ বিদ্যমান। এক্ষেত্রে যুক্তি কতটুকু তা ভেবে কুল কিনারা পাই না।
আমি এক দিন ভীষণ বিপদে পড়ে যাই পথিমধ্যে এক লোকের অদ্ভুত আচরণে। তার কথা হল ওর ডান পাশ দিয়ে কেহ যেতে পারবে না। জানিনা তিনি কতটুকু জীবন চলার পথে এ নিয়ম মেনে চলতে পারেন।
অনেক আছেন কোথাও যাত্রাকালে গৃহের দরজাকে সালাম দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। ফলশ্রুতিতে নাকি গৃহে নিরাপদে ফিরে আসার অভয় বার্তার একটি সুলক্ষণ বা নিশ্চয়তার অনেক গ্রান্টি। চলার পথে সকল বিপদ আপদ থেকে মুক্তির পূর্ণ অবলম্বন।
যাত্রাকালে শুন্য কলসী দর্শন অমঙ্গল আশঙ্কা।এক্ষেত্রে অনেকে অনেক প্রকার অশালীন উক্তি বা আচরন করে থাকেন। রাত্রিকালে ঘর থেকে অনেকে টাকাপয়সা লেনদেন করেন না , লক্ষী চলে যাবার ভয়ে বা অজুহাতে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে জীবনের কি এ নিয়ম যথাযথ পালনের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারেন এটাই আমার জিজ্ঞাস্য ?
রবি ও বৃহৎস্পতিবার বাঁশ কাটতে মানা। সন্ধ্যার পর ঝাডু দিয়ে আবর্জনা বাহিরে ফেলতে নেই। রাত্রি বেলা আয়নায় মুখ দর্শন নিষিদ্ধ। গৃহস্থ খাবার গ্রহণ কালে ভিক্ষুক দরজায় দাড়িয়ে ভিক্ষা চাইলে দিতে মানা।
ছোট বড় কেহ যদি কঠিন অসুখে ভোগে দীর্ঘদিন তবে রোগির রোগমুক্তি হবে কি না , তা জানার উদগ্র আগ্রহ নিয়ে সন্ধ্যার পর তিনজন মহিলা ( একজন বিধবা , একজন বিবাহিত , একজন অবিবাহিত মহিলা ) তিন রাস্তার সংযোগ স্থলে আড়ালে দাড়িয়ে ঠিকবাজি বা আলামত প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে নিরবে কিছুক্ষণ বসে থাকেন।ঐ সময় ঐ রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারি লোকদের কথাবার্তা থেকে ঠিকবাজরা ধারণা পেয়ে থাকেন রোগির রোগ সম্পর্কে।
আমি ১৯৯৭ সাল থেকে উভয় পায়ের হাটুঁর জয়েন্টে মারাত্মক ও ভীষণ যন্ত্রণায় কাতর। এ রোগ আমাকে যে কষ্ট ও জ্বালা দিচেছ তা একমাত্র আল্লাহ ও আমি ছাড়া কেহ অনুধাবন করতে পারবে না। বুঝতে পারবে যদি আমার মত এ জাতীয় রোগে কেহ আক্রান্ত হয়ে থাকেন। অনেক ডাক্তার , ঔষধ পত্র ব্যবহার করে কোনো ফলাফল প্রাপ্তি হচেছ না বিধায় আমার মা , স্ত্রী অস্থির একটিবার পীর ফকিরের নিকট যেতে। কিন্তু আমার কোন সময়ই পীর ফকিরের ( প্রকৃত আলীম ব্যতীত ) নিকট যেতে বা ওরা কিছু করতে পারবে বলে বিশ্বাস নেই। তবু ও শেষ পর্যন্ত মায়ের পীড়াপীড়িতে এক দিন রওয়ানা হলাম এক মহিলা পীরানীর নিকট। তিনি নাকি রোগির সব কিছু বলে দিতে পারেন। এমন কি বলে দেন হিসেবে অনেক লোকের যাতায়াত তথায় হয়। মহিলার বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলাম সকাল দশটায়। পেয়ে গেলাম সেখানে আমার মত দু’জন পুরুষ রোগি। আর বাকি সাতজন রোগি সবাই মহিলা। রোগির পরিমাণ কমপক্ষে ধীরে ধীরে বর্ধিত হয়ে ২৫/৩০ জনে উন্নীত হল। ধারাবাহিকতায় পীরানী প্রথম কিস্তি দশজন রোগির আর্জি নিয়ে ( তাদের ভাষায় ) মোরাকাবায় বসলেন। একেক করে বলতে লাগলেন প্রত্যেকের মনের অভিলাষ। আর রোগিরা বলতে লাগলেন ঠিক ঠিকই পীরানী বলে যাচেছন তাদের হৃদয়ের কথা , মনের অভিব্যক্তি। সবাইকে তাবিজ কবজ দিলেন নিলেন তার বিনিময়ে টাকা পয়সা যার যার রোগ বুঝে পথ্যের মত। দ্বিতীয় দফায় প্রথম ক্রমিকে আমি তারপর অপর দু’পুরুষ এর সর্বশেষে নিলেন আর সাতজন মহিলা রোগির আর্জি। বসলেন মোরাকাবায়। ডাক পড়ল আমার। তিনি বলে যাচেছন আমার মাথা ঘুরে , বুকে পিঠে বেদনা , কোমর বেদনা ইত্যাদি। কিন্তু একটিবার ও বললেন না আমার হাঠুর অসুবিধা বা রোগের কথা। কারন হল আমাকে দেখতে সুস্থ অনুভুত হয়। কিন্তু আমি হাঠু মোটেই ভাঁজ করতে পারি না। চেয়ার ব্যতীত বসতে পারি না। দেখতে পারছেন না বা আমি পূর্বে কিছুই বলিনি বিধায় বলা সম্ভব হচেছ না। আমি জবাব দিলাম আমার রোগের বা উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্য হচেছ না। তিনি জবাব দিলেন বুঝতে পারছি না আপনার সব কিছু আমি ঝাপসা দেখছি। যাহোক আমাকে বাদ দিয়ে ক্রমান্বয়ে পরবর্তী পুরুষদের বেলা ও একই রুপ। অর্থ্যাৎ ওরা জবাব দিলেন তাদের রোগের বা উদ্দেশ্যের সাথে মিল হচেছ না। অত:পর ঐ দু’ব্যক্তির বেলা ও বলা হল আপনাদের সব কিছু অন্ধকার দেখছি। তবে পরবর্তী রোগিদের সব কিছু তিনি বলে দিলেন এবং রোগিরা ঠিক ঠিক বলে চলেছেন। শেষ মুহুর্তে আমরা পুরুষদের বলা জবাব হল জানি না আপনাদের ভাগ্য মন্দ না তিনির ( পীরানীর) ভাগ্য মন্দ। যাহোক অন্য একদিন আপনারা আসুন দেখা যাবে। কি আর করা বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে আসলাম। তবে এখানে যা লক্ষণীয় তাহলো মহিলাদের বেলা কিছু কমন কথা বললেই তাদের মনের কথার সাথে মিলে যায়। যেমন “ আপনার খন্নির দোষ , চালানের মুখে পড়েছেন , মাথা ঘুরায় , তলপেঠে বেদনা , একটি মহিলা আপনার স্বামীর প্রতি আগ্রহী , স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করার বাসনা ইত্যাদি। অপর দিকে মহিলারা পীরানীর নিকটে গিয়েই শুরু করেন বলাবলি কি উপলক্ষ্যে গমণ অথবা অপর মহিলার সাথে আলাপ জুড়ে দেন , আমি এসেছি বোন আমার মেয়ের বিবাহের অনেক আলাপ আসে কিন্তু ফিরে যায় , আমার স্বামী সর্বদা অন্যমনস্ক থাকেন , স্বামী সংসারের প্রতি উদাসীন ইত্যাদি। রোগি মেয়েদের মুখ থেকেই পীরানী পেয়ে যান আগমণের হেতু বা কার্যকারন। সুতরাং রোগ সম্পর্কে বলতে পীরের কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা থাকে না।
মহিলার বাড়ি থেকে বের হয়ে খবর পেলাম উক্ত গ্রামে আরেকজন নব্য ছেলে পীর হয়েছে মাস খানেক হবে। আমরা তিনজন পুরুষ পরামর্শ করে ঐ সময়ই রওয়ানা হলাম পীরের বাড়ি অভিমুখে। সেখানে ও লক্ষ্য করলাম মহিলাদের সংখ্যাধিক্যতার। অর্থ্যাৎ পুরুষ রোগি নেই বললেই চলে। বেশ কিছু সময় বসতে হল সারির মাধ্যমে পীরের সাক্ষাৎ পেতে। তাই করলাম। ইত্যবসরে পীর সাহেবের পিতা আমাদেরকে আপ্যায়ন করলেন পান , সুপারী ও সিগারেট পরিবেশনের মাধ্যমে। আমরা তা সানন্দে গ্রহণ করলাম। যেহেতু আশেপাশে কোন দোকান ছিল না বলে পান সুপারী থেকে বঞ্চিত ছিলাম অনেকক্ষণ যাবত। এক সময় পীরের সাহচর্য পেতে সক্ষম হলাম। পীর সাহেব আমাকে বললেন , আমার মাথা ঘুরায় , শারীরিক দূর্বলতা ইত্যাদি। কিন্তু আমি যে উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম তার ধারে কাছে ও যেতে সক্ষম হন নাই। তথাপি পীর সাহেব আমার হাতে একটি তাবিজ ধরে দিলেন যা পূর্ব থেকে লিখিত অনেকগুলির মধ্যে একটি। অপর সঙ্গিদ্বয় এমতাবস্তায় বিফল হয়ে ফিরে আসলেন। বাহিরে এসে পথ চলতে চলতে তাবিজ খুলে দেখলাম হ-য-ব-র-ল কিছু আরবী লিখা। দিনটা খসে পড়ল জীবন চলার পথ থেকে বিস্মৃতির পথে। সাথে অর্থনৈতিক ও শারিরিক পরিশ্রম। রাতে পায়ের ব্যথায় ঘুম হল হারাম। পীর সাহেবদের এ হল কেরামতি। কিন্তু আমি অর্জন করলাম এ বিরাট তথ্য ও তত্ত্ব।
মেয়েরা মায়ের জাত। আবার একটা প্রবাদসম “ তাদের অন্তর অত্যন্ত কোমল”। তথাপি মানুষের মন বড়ই সন্দেহ প্রবণ। কথায় আছে “ সন্দেহ প্রবণ মন , আঁধার ঘুচে না কখন ”। সন্দেহ নামক বস্তুটি যার অন্তরে একবার স্থান লাভ করেছে তা থেকে পরিত্রাণ প্রাপ্তি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার। পীর সাহেবরা ( প্রকৃত আলীম ব্যতীত ) সহজ সরল মেয়েদের মধ্যে একটি সন্দেহের বীজ বপন বা রোপণ করে অনেক সংসারে আগুন জ্বালিয়ে দেন। যে আগুনে পুড়ে সোনার সংসার ধবংস হয় তার হিসেব আমরা রাখি না। অনেকটা থেকে যায় অজ্ঞাতে। যেমন স্ত্রী গেলেন রোগ সারাতে পীর সাহেব বলে দিলেন আপনার স্বামী একটি বাড়িতে যান ঘন ঘন। দ্বিতীয় বিয়ে করার সম্ভাবনা। অথবা একটি মেয়ে আপনার স্বামীর প্রতি আগ্রহী। কিন্তু এক্ষেত্রে হয়ত স্বামী প্রবল ঘুণাক্ষরে ও এ জাতীয় কাজের থেকে অনেক দুরের বাসিন্দা। কিন্তু স্ত্রী এ জাতীয় কথাকে সঠিক ও বিশ্বাস করে শুরু করলেন দৌড় বিভিন্ন রুপে। কারন কোন স্ত্রীই চায় না স্বামীর অংশে ভাগ দিতে বা বসাতে। সুতরাং স্ত্রী ঐ বাড়ির প্রতি , সংসারের প্রতি , লোকের প্রতি সর্বোপরি স্বামীর প্রতি সন্দেহ প্রবণতার মাধ্যমে সাংসারিক সব কিছু তুচছ করে গুরুত্ব দিলেন ধ্যাণ ধারণায় , চিন্তা চেতনায় উল্লেখিত ব্যাপারটিকে। কেমন করে স্বামীকে বশে আনা বা রাখা যায়। শুরু হল এখানে ওখানে যাতায়াত। অনেকটা জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে স্বামীর। এতে একদিকে অর্থ ব্যয় , অপর দিকে সংসারের প্রতি একটা উদাসীনতা। মনে সর্বক্ষণ স্বামীকে বশে আনা বা রাখা। আমি এসন ও প্রত্যক্ষ করেছি এ ধরণের অনেকক্ষেত্রে স্বামীর প্রতি সরাসরি বাক্য ছুড়ে দেয় স্ত্রী , আপনি এখানে ওখানে যান ? এ থেকে শুরু হয় দ্বিধা , দ্বন্ধ। এমন কি বিচেছদ পর্যন্ত গড়ায়। অপর দিকে পীর সাহেব পথ্য দানের মাধ্যমে তিনি হচেছন চর্বিদার। বৃদ্ধি হচেছ মোটা , তাজা। খেলাটা শুরু না করলে তিনির কাছে লোক যাতায়াত হবে না , অর্জিত হয় না তিনির টাকা রোজগারের ব্যবস্তা। এ প্রকৃতির অনেক পীর সাহেবকে প্রত্যক্ষ করেছি দু’চার বৎসর পীর হয়ে পরবর্তীতে অন্য পেশার মাধ্যমে জীবিকার্জন করতে। পীর যদি সত্যিই পীর হয়ে থাকেন তবে কেন পেশার পরিবর্তন ? দীর্ঘ দিন কেন থাকে না পীরের কেরামতি ? অর্থ্যাৎ যে ক’দিন মানুষকে প্রতারণা করা যায় ততদিন পীর এবং রোগিরা যখন প্রতারণা বুঝে ফেলে তখনই চলে যায় পীরালী। কিন্তু এ অল্প দিন পীর ব্যবসার মাধ্যমে অনেক অনেক সংসারে আগুন জ্বালিয়ে তিনি হন ক্ষান্ত। এ আগুন জ্বলে কিন্তু অনির্বাণ লোক চক্ষুর অন্তরালে , অলক্ষ্যে দিনের পর দিন , চিরদিন। অপর দিকে শুধু পীর সাহেবকে দোষ দিয়ে লাভ কি ? আমি , আমরা না গেলে Ñ বিশ্বাস না করলে , পীর কি করে আমাকে নিয়ে যাবে ? সব নষ্টের মুল আমরাই। আমরা বিশ্বাস করি বলেই পীর সাহেব ধোঁকা দেবার প্রয়াস পান , ধোঁকায় তৃপ্ত হন , তার কাংখিত লক্ষ্য অর্জিত হয়। ( সব নয় ) মহিলা শ্রেণী এ পক্ষের বেশী অনুসারী। তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে বুঝাতে হবে। বুঝাতে সক্ষম হলে অবশ্যই একটি সুফল বয়ে আসবে , পাবো এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
এক লোক সুদীর্ঘ ১৪ বৎসর প্রবাস জীবস কাটায় স্ত্রী সন্তান তথা পরিবারের সুখ স্বাচছন্দ্যের নিমিত্তে। আমি লক্ষ্য করেছি ঐ লোকটি না খেয়ে না পরে টাকা পয়সা পাঠিয়ে দিত স্ত্রী সন্তানের জন্য। তার কথা ছিল যদি আমি না খেয়ে না পরে স্ত্রী সন্তানকে ভাল ও উন্নত বস্ত্র পরিহিত করাতে পারি এটাই সুন্দও ও সার্থক। কিন্তু জানি না কোন অপরাধে স্ত্রী স্বামীকে এ জাতীয় কার্য্যরে মাধ্যমে প্রবাস ছাড়া , সংসার ছাড়া , সন্তান থাকাবস্তায় সন্তানবিহীন অবস্তায় দিনাতিবাহিত করছে। সোনার সংসারটা তছনছ করে লোকটি বিপর্যস্থ অবস্তায় বিচেছদ পর্যন্ত গড়িয়েছে। তারপর ও স্বামী ছিল উদগ্রীব স্ত্রী যদি ভুল বুঝতে পারে বা আসার দৃঢ়তা প্রকাশ করে , তবে একটি পথের সন্ধান বা সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে স্বামী তার চাচাত ভাই , ভাতিজা সঙ্গে নিয়েছে যে কারো সঙ্গ ধরে আসার উপলক্ষ্য মনে করে যদি ইচছুক হয়। এখানে স্ত্রী কোন সুযোগ নেয়নি। বরং তারই ( স্ত্রী) সম্মুখে তার পিতা , ভাই উদ্ধত আচরণ প্রদর্শন , এমন কি হুমকি প্রদান করে। তারপর ও স্বামী হাল ছাড়ে নাই। সে ( স্বামী ) ভেবেছে হয়ত অন্য কোন পন্থায় , সুযোগে স্বামীকে একা পেয়ে সুযোগ নিতে চায়। একা সম্মুখস্ত হয়েছে। চেয়েছে টাকা। যে আসবে না তাকে আনার কথা বলা বা প্রচেষ্টা হবে নির্যাতন তুল্য ভেবে তৎক্ষণাৎ টাকা প্রদানে সম্মতি এবং টাকা যথারীতি প্রদেয়। মোশাররফ হোসেন বিষাদ সিন্ধুতে সীমারের কার্যকলাপে যথার্থ বলছিলেন , “ অর্থ ! রে পাথকী অর্থ! তুই সকল অনর্থের মুল”। এ জগতে যে যে বা যারা সীমারসম পাষন্ড হয়ে টাকাকে অধিক গুরুত্ব দেয় , ওরা কি চায়সহজেই বিজ্ঞজনের অনুধাবন যোগ্যতায় ধরা পড়ে , পড়বে। তা পাঠকের উপর ন্যস্ত। এখানে ও কথা ছিল না যদি পরবর্তীতে আসার ইচছা ব্যক্ত না হত। “ সময়ের এক….অসময়ের দশফোঁড়” এরম ত স্বামী প্রবর ততদিনে বিয়ে করে সম্মুখ পানে এগিয়ে যাবার যাত্রায় সামিল। স্বগোক্তি স্বরুপ উচচারিত হয় , “ এখন কেন কান্দ গো রাই , আগে কি মনে ছিল না ”।
গ্রামে সন্তান জন্মের পর মায়েরা আজো জাল বা বিভিন্ন লতাপাতার অংশ বিশেষ ইত্যাদি আতুড় গৃহে বা রুমে লটকিয়ে রাখেন , রুমটি বন্ধ রাখার পক্ষপাতি। জালের টুকরো রাখেন লটকিয়ে জিন বা শয়তানের আছর থেকে পরিত্রাণের আশায়। আগুন জ্বালানো হয় প্রত্যেক দরজায় শয়তান নাকি আগুনকে ভয় পায়। বাচচাকে অনেক দিন বের করতেন না রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপলক্ষ্য মনে করে। অনেক মাকে বুঝানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার শাল দুধ শিশুকে খাওয়াতে। তাদের অভিমত শাল দুধ শিশুর জন্য বিষ সদৃশ। তবে আশার কথা হলো বর্তমানে অনেকটা দুরীভুত হয়েছে বিভিন্ন প্রকার প্রচারণার পরিপ্রেক্ষিতে।
গ্রামের অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত মানুষের অনেকের মধ্যে এ ধরণের শত শত কুসংস্কার , অন্ধবিশ্বাস বিরাজমান। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ সমস্ত কুসংস্কার বিশ্বাস করে মিথ্যা ও ক্ষতিকর অনেক রুসুম বা রেওয়াজকে বাধ্যতামুলক পালন করার ফলে অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করে প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে সমাজকে প্রগতির পথকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে মারাত্মক বিঘেœর সহায়ক। সঠিক ও পূর্ণ ইসলামী আকিদার অভাবে সমাজ সংসারকে সঠিক দিক নির্দেশনা থেকে বঞ্চনার ফলে একটি সুন্দর , সুস্থ জীবনকে ধবংসের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। সুতরাং এ ব্যাধি আক্রান্ত সমাজকে নিরক্ষরতার মতো অভিশাপ থেকে রক্ষা কল্পে রেড়িও , টিভি এমন কি পাঠ্য পুস্তকে প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করে অভিযান পরিচালনা অত্যন্ত জরুরী। ইসলামী আকিদার পূর্ণ প্রচার ও প্রসারতা কাম্য নিরন্তর।
লেখক মিজানুর রহমান মিজান , প্রতিষ্টাতা ও পরিচালক চানঁ মিয়া স্মৃতি পাঠাগার , সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসকাব , বিশ্বনাথ , সিলেট। মোবা ০১৭১২ ৮৭৯৫১৬।