ঘটনাটি বিরল
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ আলুভর্তা থেকে শুরু করে ইলিশ মাছের ভুনা সব আয়োজনই ছিল নৈশভোজে। ছিলেন দুই দেশের দুই বাঙালি রাষ্ট্রপতিও। আরও ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও। খাবারের নানা উপকরণ থেকে শুরু করে অনুষ্ঠানে যা কিছু ছিল সবটাতেই ছিল বাঙালি আমেজ। এমনি এক বিরল ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে থাকলো ভারতের রাষ্ট্রপতির দরবার হল।
শনিবার রাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সম্মানে দরবার হলে আয়োজন করা হয় এই নৈশভোজের। নৈশভোজে একই ভাষার তিন নেতার উপস্থিতিতে সরগরম ছিল রাষ্ট্রপতি ভবনের ব্যাঙ্কোয়েট হল।
ভোজসভায় আরও ছিলেন- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি ও তার স্ত্রী।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও তার স্ত্রী রশিদা খানমের সঙ্গে ভোজসভায় ছিলেন তাদের তিন ছেলেও।
ছোট ছেলে রিয়াদ অহমেদ এমআইটিতে স্নাতক। বড় ভাইয়ের (সাংসদ রেজোয়ান অহমেদ) মতো তিনি রাজনীতিতে আসেননি। তবে খাওয়ার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে দেখা গেছে তাকে।
ভোজসভায় দই, মাছ থেকে শুরু করে মালপোয়া রাবড়ি খাদ্যের নানা পদের বিপুল সমাহার থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে তা খেতে দেখা যায়নি। শুধু কমলালেবুর রসে চুমুক দিতে দিতেই গল্প করেছেন অতিথিদের সঙ্গে।
‘দিদি তুম ক্যায়সে হো?’ বলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মমতার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন।
খাবার টেবিলে মোদির ডান পাশে বসেছিলেন সুষমা স্বরাজ। বাঁ পাশে ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির স্ত্রী। গতকালই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
অসুস্থতার কারণে অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পর তিনি চলে যান। পরে নৈশভোজ সভা পরিচালনা করেন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি। এ সময় হামিদের স্ত্রীর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেন নরেন্দ্র মোদি।
ভোজসভার এক পর্যায়ে উপরাষ্ট্রপতির স্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলেন, ‘আমার মেয়ে গুজরাটের শিক্ষা প্রসারে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে। সে সময় আপনি ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। আমার মেয়ে আমাদের বলতেন, কেন আমরা মোদীর বিরোধিতা করেন? রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রে খুব ভাল কাজ করেছেন মোদী। গল্পটা বলে উপরাষ্ট্রপতির স্ত্রী মজা করে প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তাঁর বড় সমর্থক আনসারি-পরিবারের মধ্যেই রয়েছে! এসময় মোদী হেসে উঠেন।
ভোজসভার ফাঁকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। এসময় মমতা জানান, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যেমেই ভবিষ্যতে এগোতে চান তিনি।
পরে দরবার হলেই এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নেতা-মন্ত্রীরা ছাড়াও দরবার হলে আরও উপস্থিত ছিলেন- শর্মিলা ঠাকুর, পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংহ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাধিক বক্তৃতার একটি সিডি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেন প্রণব। সিডিটি তৈরি করেছে অল ইন্ডিয়া রেডিও।
ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে জানা গেছে, প্রণব মুখোপাধ্যায় চেয়েছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীনতাযুদ্ধের বিজয়ের মাসেই সিডিটি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের হাতে তুলে দিতে। তাই হাসপাতালে থাকাকালীন এই কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি নিয়মিত খোঁজখবর নেন।
এক বাঙালি রাষ্ট্রপতির বাসভবনে অতিথি হয়ে রাত্রীযাপন করলেন আরেক বাঙালি রাষ্ট্রপতি, যা ভারতের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।
এর আগে এরকম ঘটনা একবারই ঘটেছিল। ভুটানের রাজা একবার রাইসিনা পাহাড়ে অতিথি হয়েছিলেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারত সরকার বাংলাদেশকে যে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এ ঘটনার দ্বারা সেটাই প্রমাণিত হয়।