তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে স্থানীয় আ’লীগ সভাপতির ভাতিজা কতৃক শতাধিক লোকের সামনে প্রতিপক্ষের উপর অবৈধ পিস্তল দিয়ে গুলি করার ঘটনা ধামাচাঁপা দেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। পিস্তল দিয়ে গুলিকরার ঘটনাটি জানার পরও খোদ থানা পুলিশ আ’লীগ সভাপতির সাথে সখ্যতার খাতিরে পাস কাটিয়ে যেতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছে। উপজেলার উওর শ্রীপুর ইউনিয়নের চারাগাঁও সীমান্তবর্তী কলাগাঁও মাইজহাটি মোড়ে সোমবার সন্ধায় ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি কলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা জয়ধর আলীর সহোদর ময়ধর আলীর ছেলে শামীম (২২) অবৈধ পিস্তল দিয়ে একই গ্রামের জামির আলীর ছেলে সৌরভকে লক্ষ করে গুলি করে। তবে গুলিটি লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি। গুলির শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মোড়ের অর্ধশতাধিক দোকানপাঠ মুহুর্তেই বন্ধ হয়ে যায়। তালিকাভুক্ত সীমান্তের বর্ডারকুতুব সেই অস্ত্র চোরাকারবারী নজরুলের চাচাত ভাই শামীম এই অপকীর্তির আরেক নায়ক। এদিকে ঘটনার ৪ দিন পার হতে চললেও পুলিশ রহস্যজনক কারনে অবৈধ পিস্তল উদ্যার কিংবা অস্ত্রধারী শামীম আটক করতে পারেনি।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, উপজেলার কলাগাঁও গ্রামের জামির আলীর শিশু পুত্র ইশান আহমদকে ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি জয়ধর আলীর ছেলে রাসেল সোমবার দুুপুরে কথাকাটাকাটি করে আটক করে। এরই জের ধরে ইশানের বড় ভাই সৌরভ মাইজ হাটির মোড়ে রাসেলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ডা. আব্দুল মান্নান ওরফে মনা ডাক্তারের ঘর থেকে বের হয়ে মনার ছেলে হেরোইন ,হুন্ডি অস্ত্র, ও গাড়ি চোরাচালানী রফিকুলের ইন্দনে শতাধিক লোকের সামনেই অবৈধ পিস্তল দিয়ে রাসেলের চাচাত ভাই শামীম নিজ হাতে পিস্তল নিয়ে সৌরভকে লক্ষ করে প্রথমে ১ রাউন্ড পরে আরো দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। গুলিগুলো লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় অবশ্য কেউ হতাহত হয়নি। এরপর স্থানীয় লোকজন সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে শামীম পালিয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যাক্তি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা গুলি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার মধ্যস্থতাকার দের একজন জানান, মঙ্গলবার সকালে পিস্তলটি এলাকার মুরুব্বীদের হাতে জমা দেয়ার কথা ছিল, সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিষয়টি থানা পুলিশকে না জানিয়ে পিস্তলটি ভেঙ্গে ফেলা হবে, কিন্তু পরদিন থেকেই শামীম আত্বগোপনে চলে গেছে।
এ বিষয়ে সৌরভের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে সে নিজেই জানায় শামীমের হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে তাকে লক্ষ করে প্রথমে ১টি গুলি করে এবং পরে আরো কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে।
এ বিষয়ে রাতেই জয়ধর আলী, প্রাক্তন ইউপি সদস্য হাছেন আলী, নুরুলহক, বশির উদ্দিন সহ আরো বেশ কিছু লোক সৌরভদের পরিবারের অবিভাবকদেরকে ম্যানেজ করে ফেলে এমনকি এ বিষয়ে মুখ না খোলার জন্য প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও সতর্ক করে দেয়া হয়। কিন্তু ঘটনাটি শেষ পর্য্যন্ত এলাকার লোকজন মুঠোফোনে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম কর্মীদের অবহিত করলে থানা পুলিশ রাতেই নরেচরে বসে। ঘটনার সরজমিনে তদন্ত করতে রাতে থানার এক এসআই সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে চারাগাঁও শুল্ক ষ্টেশন থেকেই জয়ধর আলী ও তদবীরবাজদের কবলে পড়ে ফিরে আসেন। এ সময় চোরাচালানী রফিকুল পুলিশের দু’সদস্যের সাথে আড়ালে গিয়ে আলাপ করে পরদিন থানায় গিয়ে তদন্তকাজে আসা এসআই’র সাথে দেখাও করে।
জয়ধর আলীর সাথে এ বিষয়ে আলাপকালে তিনি বলেন, আমার ছেলে রাসেলের সাথে সৌরভের কথাকাটাকাটি হলে তার পরিবারের লোকজন দা ছেল নিয়ে মোড়ে হামলা করতে গেলে সেখানে কিছুটা ধাক্কাধাক্কি হয়, আমার ভাতিজা পিস্তল দিয়ে গুলি করেনি, বিষয়টি রাতেই মিটমাট হয়ে গেছে, পুলিশ এসে এর কোন সত্যতাই পায়নি। তিনি আরো বলেন আমার ভাতিজা যদি পিস্তল দিয়ে গুলি করে থাকে তাহলে কেউ বাদী হয়ে থানায় মামলা করুক কোন অসুবিধা নেই। শামীমের নিজ হাতে পিস্তল দিয়ে গুলি করার বিষয়টি জয়ধর আলীর একাধিক ঘনিষ্ট আত্বীয় স্বজনরাও নিশ্চিত করেছেন।
মাইজহাটি মোড়ের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এভাবে প্রকাশ্যে পিস্তল দিয়ে গুলি করার মত ঘটনা যদি ধামাচাপা পড়ে যায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্কলা বাহিনীর উপর থেকে সাধারন মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে। তাদের দাবি অবৈধ পিস্তল উদ্যার ও ঘটনার মুল হোতোকে আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
থানার এসআই (উপ-পরিদর্শক) মো. শাহ আলম ভুইয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোপনীয় ভাবে তদন্তকালে এলাকার বেশ কিছু লোক শামীম পিস্তল দিয়ে তিনটি গুলি করার কথা স্বীকার করেছেন। পিস্তল ও গুলির আলামত উদ্যার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন , চেষ্টা করা হচ্ছে পিস্তলটি উদ্যার করার জন্য।
উল্ল্যেখ যে, গোয়েন্দা সংস্থা কতৃক প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্প্রতি দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা দেশের ৪০৪ জন্য অস্ত্রচোরাকারবারীর মধ্যে তালিকাভুক্ত অস্ত্র চোরাকারবারী হিসাবে সুনামগঞ্জের উওর শ্রীপুর ইউনিয়নের আ’লীগ সভাপতি কলাগাঁও গ্রামের জয়ধর আলীর ছেলে নজরুল ইসলামের নাম সম্পৃক্ত রয়েছে।