ওসমানীনগরের ৩ গ্রাম পুরুষ শূণ্য : এক পক্ষকে আসামি করে পুলিশের হত্যা মামলা
শিপন আহমদ, ওসমানীনগরঃ সিলেটের ওসমানীনগর থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। বুধবার রাতে থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মানিক, জিলু মিয়া, কাওছার আহমদ, জয়নাল, মাহমদ আলী, গোলাম কিবরিয়া, ইসুফ চৌধুরী পিয়ার আলী, রুহেল আহমদ, কার্তিক, করিম বক্স, কাদির বক্স, মজনু বক্সসহ ১০০ জনের নাম উল্লেখ্য করে আরোও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৯/১৪। সংঘর্ষে ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইকবাল হোসেন সেলিম মিয়া, ইমন আহমদ, আরিফ উল্যা, নোমান হোসেন, লিটন আহমদ, মিলন মিয়া, ইসুফ চৌধুরী, চুরুক মিয়া, রিপন মিয়া, শিব্বির আহমদ সহ ৪১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই শ্রমিকনেতা ও অটোরিকশা চালক বলে জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বতর্মানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় পুলিশের টহল জোরধার করা হয়েছে। তবে গোয়ালা বাজার এলাকায় অটোরিকশা গাড়ি চলাচলা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ফলে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। গ্রেফতার আতংঙ্কে উপজেলার পূর্ব ব্রাম্মন গ্রাম,পশ্চিম ব্রাম্মন গ্রাম ও নিজকরনসি গ্রামসহ আশাপাশ এলাকায় একাধিক গ্রামের পরুষরা পালিয়ে বেরাচ্ছেন। ফলে তিনটি গ্রাম পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়ছে।
নিজ করনসি গ্রামের মুনির আহমদ, ও ব্রাম্মন গ্রামের ইয়াবর আলী ঘটনার সাথে জড়িত শ্রমিক নেতা ও চালকদের শাস্তি দাবি করে বলেন, গ্রেফতার আতঙ্কে শুধু অটোরিক্স্রা শ্রমিক সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরা নয় করনসি ও ব্রাম্মন গ্রাম সহ আশপাশ এলাকার গ্রামগুলোর পুরুষরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। থানা পুলিশ বিভিন্ন বাড়িতে গ্রেফতার অভিযানে গিয়ে পুরুষদের না পেয়ে বাড়ির কাজের লোককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে গ্রাম দুটির মহিলারাও অজানা আতংঙ্কে ভুগছেন। আমাদের দাবি যারা শ্রমিকদের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় তাদের অযথা হয়রানী না করে সংর্ষের সাথে জড়িতদের খোঁজে বের করে গ্রেফতার করা। এব্যাপারে আমরা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শু-দৃষ্টি কামনা করছি।
এদিকে, গত বুধবার বাদ এশা ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম জানাযার নামাজ সিলেট পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত হয়ে। ওই রাত ৯টায় তাঁর কর্মস্থল ওসমানীনগর থানা প্রাঙ্গনে দ্বিতীয় জানাযার নামাজ শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন ওসির স্ত্রী ও দুই মেয়ে। রাতেই তার লাশ কুমিল্লা জেলার সদর থানার মোগলটুলির পাথারিয়া গ্রামের নিয়ে যাওয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ যোহর তৃতীয় জানাযার নামাজ শেষে তাকে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়। এসময় সিলেট ২ আসনের সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া উপস্থিত ছিলেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে, পুলিশের দায়ের করা মামলার পরপরই গোয়ালাবাজার এলাকায় ধড়পাকড়াও শুরু হয়। গ্রেফতার আতংকে গা-ডাকা দেন এলাকার কয়েক শত মানুষ। পুরো এলাকাটি রয়েছে অটোরিকশা শূন্য। প্রতিদিন এই বাজারে ৫ শতাধিক অটোরিকশা থাকলেও বুধবার বিকেল থেকে বাজারে কোন অটোরিকশা নেই। গ্রেফতার এড়াতে চালকরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাজারে অটোরিকশা না থাকায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওসমানীনগরসহ পাশ্ববর্তী একাধিক উপজেলার কয়েক সহস্রাধিক মানুষ। বাজারের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। নিজ করনসী ও ব্রাহ্মণগ্রামের ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার আতংকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের পশ্চিম ব্রা হ্মণগ্রাম, পূর্ব বাম্মনগ্রাম ও করনসী গ্রাম তিনটির শতশত পুরুষ মানুষ। ফলে ওই দুটি গ্রামসহ আশপাশের কয়েটি গ্রামের অটোরিকশা চালকরা বাড়িতে না থাকায় গ্রামগুলো পূরুষ শূণ্য রয়েছে। সরজমিনে ব্রাম্মন গ্রাম ও করনসি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় পুরুষরা বাড়ি ছাড়া থাকায় গ্রামের নারীরা পড়েছেন বিপাকে। বাড়িতে থাকা শিশুরাও হাট-বাজারে যেতে ভয় পাচ্ছেন। গ্রামের অনেকেই অভিযোগ করেন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নিরীহ লোককে হয়রানী করছে।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) অকিল উদ্দিন মামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আসামি গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিরিহ মানুষ যাতে হয়রানী না হয় সে দিকে পুলিশ সজাগ রয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, গত ৬ মাস থেকে ওসমানীনগরে গোয়ালা বাজার এলাকায় দক্ষিন গোয়ালা বাজার নামকরনে নতুন শাখা স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির শেল্টারে গোয়ালাবাজার সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের একাংশের নেতারা । তাদের দাবির প্রেক্ষিতে চারমাস আগে অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং ৭০৭) এর জেলা শাখার নেতারা দক্ষিণ গোয়ালাবাজার শ্রমিক ইউনিয়ন নামে নতুন শাখা করে স্ট্যান্ড স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ান গোয়ালাবাজার শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি জিলু মিয়ার নেতৃত্বে উত্তর গোয়ালাবাজারের শ্রমিকবৃন্দ। এনিয়ে পূর্বে একাধিক বার উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে জেলা শাখার নেতারা নতুন শাখা খোলা স্থগিত করেন। গত বুধবার নতুন স্ট্যান্ডের স্থাপনকারী অটোরিকশা শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে আবারও মহাসড়ক অবরোধ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে আবারোও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
সংঘর্ষে গোয়ালাবাজার উত্তর অংশের শ্রমিকদের সাথে ব্রা হ্মণ গ্রামের কিছু লোক এবং দক্ষিণ অংশের শ্রমিকদের সাথে করনসী গ্রামের কিছু লোক অংশ নেয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষে ব্যাপক গুলাগুলি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষটি থামাতে গিয়ে গিয়ে ওসি মোস্তাফিজুর রহমান অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি গত ১৫ অক্টোবর ওসমানীনগর থানার ওসি হিসাবে যোগ দেন। এর আগে তিনি ৫ মাস বিয়ানীবাজার থানায় ওসি (তদন্ত) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার পাথারিয়া গ্রামে। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।