পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থীসহ নিহত ১৩০

pakistanসুরমা টাইমস ডেস্কঃ পাকিস্তানের পেশোয়ারে ওয়ারসাক রোডে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে মঙ্গলবার দুপুরে তালেবান জঙ্গিদের হামলায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১০০ শিশু শিক্ষার্থীসহ ১৩০ জন নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, এখনো বেশ কিছু শিশু তালেবানের জিম্মায় আছে। খবর ডন, রয়টার্স, এএফপি ও এনডিটিভি অনলাইনের।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার দুপুরের আগে পাঁচ থেকে ছয়জন জঙ্গি সামরিক পোশাকে পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে প্রবেশ করে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে। খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনী স্কুলের দিকে অগ্রসর হলে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি। এ সময় বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া যায়।
জঙ্গি হামলার খবর পেয়েই রাজধানী থেকে পেশোয়ারে ছুটে গেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। এ ঘটনায় তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন তিনি। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা গোলাগুলির পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বলছে, স্কুলের ৫০০ শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশকে তারা বের করে আনতে পেরেছে। গুলিতে চার জঙ্গি নিহত হয়েছে, বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
স্কুলের একজন কর্মীর বরাত দিয়ে পাকিস্তানের জিও টিভির খবরে বলা হয়, দুপুরে আগে জঙ্গিরা যখন স্কুলে প্রবেশ করে তখন স্কুলের মিলনায়তনে সেনাবাহিনীর একটি দল শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী জানায়, গোলাগুলি শুরু হতেই শিক্ষকরা তাদের শুয়ে পড়তে বলেন। পরে সেনাবাহিনীর লোকজন তাদের বের করে আনে। বেরিয়ে আসার সময় বরান্দায় সহপাঠীদের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখার কথাও জানিয়েছে ওই শিক্ষার্থী।
স্কুলটির বাস চালক জামশেদ খান বলেন, ‘আমরা স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলে আর্ত চিৎকার ও হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়।’
তেহরিক-ই-তালেবান জানিয়েছে, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে তালেবানের ঘাঁটি জার্ব-ই-আজবে চলমান সেনা অভিযানের প্রতিশোধ নিতে এ হামলা চালানো হয়েছে।
তালেবানের মুখপাত্র মোহাম্মদ খোরাসানি জানান, হামলাকারীরা সংখ্যায় ছয়জন। এদের মধ্যে স্নাইপার ও আত্মঘাতী হামলাকারীও আছে। হামলাকারীদের স্কুলের বড় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে শিশুদের ওপর গুলি না ছোড়ার কথা বলা হয়েছে।
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এএফপির খবরে জানানো হয়, সামরিক পোশাক পরা পাঁচজন জঙ্গি স্কুলে ঢুকে পড়ে। জঙ্গিরা স্কুলের ভেতরে পাঁচ শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে।
স্কুলটি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খায়বার-পাখতুনখাওয়া অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে ক্ষমতায় আছে সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। ইমরান খান খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ খাত্তাকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
স্কুলটি পাকিস্তানের আর্মি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত হয়। দেশজুড়ে এমন ১৪৬টি স্কুল আছে। সেনাসদস্য ও বেসামরিক নাগরিকদের সন্তানেরা এখানে পড়াশোনা করে। এখানে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের বয়স ১০-১৮ বছর। স্কুলটির শিক্ষকদের বেশির ভাগ সেনাসদস্যদের স্ত্রী।
পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালের চিকিৎসক শিরফ খান জানান, তাদের কাছে তিনজন শিক্ষার্থীর মরদেহ এসে পৌঁছেছে। আহত ৩৫ জনকে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে দুজন ওই স্কুলের শিক্ষক। চিকিৎসাধীন দুই চিকিৎসকের বরাত দিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তা ইজাজ খান বলেন, অস্ত্রোপাচারকক্ষে নেওয়া অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পেশোয়ারের হাসপাতালগুলোতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতালগুলো ‘ও নেগেটিভ’ রক্ত দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিক্ষক জানিয়েছেন, হামলাকারীরা হামলার জন্য পরীক্ষার সময়কে বেছে নিয়েছে। বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে ওই শিক্ষক বলেন, হামলার আধা ঘণ্টার মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন।

https://www.youtube.com/watch?v=DfWNAB-livU