চবি ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১

chittagong Universityসুরমা টাইমস ডেস্কঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠনের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় দুই পক্ষের গোলাগুলিতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়। এদের মধ্যে একজন হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চবির শাহজালাল হলে এ ঘটনা ঘটে। এতে আরো পাঁচ থেকে ছয়জন আহত হয়েছে। নিহত ওই ছাত্রলীগ কর্মীর নাম তাপস। এর আগে চবি ছাত্রলীগের কোন্দল কমাতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এ উদ্যোগের পরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিলুপ্ত ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো।
জানা গেছে সংঘর্ষের মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের সামনে গুলিবিদ্ধ হন সংস্কৃত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাপস সরকার। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাপসের মৃত্যু হয়। তিনি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ থানার বিষ্ণুপুর এলাকার বাবুল সরকারের ছেলে। নিহত তাপসকে নিজেদের সমর্থক হিসাবে দাবি করেছেন সিএফসির নেতা অমিত কুমার বসু। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলে তল্লাশি চালিয়ে ছাত্রলীগের ২৫ কর্মীকে আটক করা হয় বলে হাটহাজারী থানার ওসি মোহাম্মদ ইসমাইল জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আলমগীর চৌধুরী জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সন্ধ্যা ৬টায় সিন্ডিকেটের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বুদ্ধিজীবী চত্বরে একসঙ্গে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ছাত্রলীগের বিবাদমান পক্ষদুটি। ফুল দেওয়া শেষে ‘সিএফসি’র কর্মী-সমর্থকরা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শাহ আমানত এবং অপরপক্ষের ‘ভিএক্স’ সমর্থকরা শাহজালাল হলের দিকে চলে যায়।
এরই মধ্যে শাহ আমানত হলের সামনে ভিএক্সের কয়েকজন সমর্থক সিএফসির এক সমর্থককে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি করলে দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এরপর শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং গোলাগুলি। একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সংঘর্ষের সময় শাহ জালাল হলের ভেতর থেকে গুলি করা হয়। হলের সামনে কয়েকজনের সঙ্গে দাঁড়ানো তাপসের পিঠে গুলি লাগে। আহত হন আরও পাঁচজন। সিএফসি পক্ষের নেতা অমিত কুমার বসু বলেন, “শাহ আমানত হলের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয় তাপস। সে আমাদের সক্রিয় কর্মী। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।”
এ বিষয়ে জানতে শাহ জালাল হলের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভিএক্স সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও নেতাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জহিরুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ তাপসকে হাসপাতালে আনার পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিরাজ উদ দৌলাহ বলেন, “দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর দুপুরের দিকে শাহজালাল হলে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে আটক করে পুলিশ। তদের সবাই ছাত্রলীগকর্মী বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। হাটহাজারী থানার ওসি মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “আটকদের থানায় পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব নিয়ে ‘ক্ষোভ ও বিরক্তি’ প্রকাশ করেন। এরপর দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে দায়িত্বও দেওয়া হয়। এরপর ১৬ নভেম্বর মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে বৈঠক করে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের’ ঘোষণা দিয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের এই সহযোগী সংগঠনের দুই পক্ষের কর্মীরা। ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ১০ মাস বন্ধ থাকার পর গত ১৯ নভেম্বর খুলে দেওয়া হয় শাহ আমানত হল। এরপরই হলটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্রিয় হয় চবি ছাত্রলীগের তিন পক্ষ।