শাবিপ্রবি খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত খুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত ২০ নভেম্বর শাবি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলেও ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে দুটি পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হলেও এর মাধ্যমে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে কিছু অনলাইন ভিত্তিক সংবাদপত্রে এবছর আর ক্যাম্পাস খোলার সম্ভাবনা নেই, এমনটা দাবি করে সংবাদ প্রকাশ করা হলে শাবি কেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আকুতি, ক্ষোভ এবং দাবি নিয়ে পোস্ট দেওয়া শুরু হয়।
“ #Give_me_back_my_SUST ” হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড়টা শুরু হয় সংঘবদ্ধভাবে। যেখানে প্রতিটি সাস্টিয়ানের হৃদয়ের আকুতি থেকে দাবি পর্যন্ত প্রকাশ পাচ্ছে যেন। এইসব পোস্ট দেখেই বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান শাবিপ্রবি খুলতে হবে, আমাদের অধিকার মানতেই হবে এই ইভেন্ট খুলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণশিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এই লক্ষ্যে সব শিক্ষার্থীকে এক করাই এই ইভেন্ট খোলার উদ্দেশ্য।
এছাড়াও Give_me_back_my_SUST নামে একটি পেইজ খোলা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা নাম গোপন রেখে নিজেদের অভিমত প্রকাশ করতে পারছেন। #ট্যাগ এর মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করা সাস্টিয়ানদের একজন আইপিই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাঈদ ইস্তিয়াক তার এক পোস্টে নিজেদের দাবিগুলোকে তুলে ধরেন এভাবে,
“১. শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুলে দিয়ে এর স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করতে হবে।২. বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট সেশন জট কমায় নিয়ে আসার জন্য প্রতি সেমিস্টার ৪ মাস করে আগায় যেতে হবে যতদিন না সেশন জট ঠিক হয়ে আসে।৩. এই সময়ের মধ্যে সাপ্তাহিক বন্ধ শুধু শুক্রবার রাখতে হবে।”
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন। ২০১৩-১৪ বর্ষের বিবিএর শিক্ষার্থী হুমায়ূন কবির সাহান “অবিলম্বে সাস্ট খুলো,আমাদের পরবর্তী সেমিস্টার শেষ করো” নামে একটি গ্রুপ খুলেন এবং নিজেদের দাবি এভাবে তুলে ধরেন, “২০১৩-১৪ ব্যাচ ,আমার মনে হয় সাস্টের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্ভাগা ব্যাচ যার আধিকাংশ ডিপার্টমেন্টের ১ম সেমিস্টার পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। ১৫ দিন গেলেই নতুন বছর, কিন্তু আমরা ২য় বর্ষ দূরে থাক ২য় সেমিস্টারে এখনো উঠতে পারি নাই। এই দুঃখ কাকে বলি? যেখনে সাস্ট ৪ বছরের আগেই গ্রাজুয়েশন শেষ করতো? আমরা আবার সাস্টকে সেশনজট মুক্ত দেখতে চাই”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বিভিন্নজনের মত ছিল এইরকম,থিয়েটার সাস্টের সহসভাপতি নীলিমা ফেরদৌস এর মত “আসলে শাবিপ্রবির এই অনির্দিষ্ট বন্ধের সাথে সাথে অনির্দিষ্ট হয়ে পড়েছে আমাদের মত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। কতিপয় শিক্ষার্থীদের (!) রাজনৈতিক (!) অথবা ব্যক্তিগত কলহের জের ধরে কেন কেউ প্রাণ হারাবে? কেন বাকি হাজার হাজার নিরপরাধ ছাত্র ছাত্রীদের জীবনের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট হবে? কে দেবে এর জবাব? কে নেবে এই দায়ভার? প্রশাসনের কি এতোদিনেও কিছু করণীয় ছিল না বা নেই ?”
নোঙ্গর এর সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার তুষার এর বক্তব্য,“বিশ্ববিদ্যালয় হবে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের আনন্দ ও জ্ঞানের আশ্রম, সন্ত্রাসীদের সেফ হেভেন হোক বিশ্ববিদ্যালয় এটি আমরা চাইনা। যে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে গেল ২০ নভেম্বর তার ভার এখনো বইতে হচ্ছে আমাদের। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাস খোলার কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নিয়ে দায়সাড়া গোছের মিটিং করে কালক্ষেপণ করছে। আমাদের ক্ষতির পরিমাণ যাতে আর প্রলম্বিত না হয় সে নিমিত্তে তদন্ত কমিটিকে ডেডলাইন দেয়ার মাধ্যমে অতিদ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দিবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটাই এখন সকলের কাম্য”।
মাভৈঃ আবৃত্তি সংসদের সভাপতি এস, কে, এস, ফরহাদ মুরশেদ অনন্ত এর ভাষ্যমতে, “অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বিলম্বিত করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন । অন্যদিকে ক্যাম্পাস খুলে দেবার ব্যাপারে প্রশাসনের উদ্যোগ ও হতাশাজনক । এ ব্যাপারে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করছি”।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও মানববন্ধন বা এ ধরণের অহিংস কর্মসূচি পালনের জন্য উপদেশ দিয়ে যাচ্ছেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করতে চলেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এগুলো হলঃ-
১. অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে হবে।
২. ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে রাখতে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সৃষ্ট সেশনজট কমাতে ‘শর্ট সেমিস্টার’ চালু করতে হবে।
৪. প্রয়োজনবোধে সাপ্তাহিক ছুটি একদিনে কমিয়ে আনতে হবে।
৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী যথাযথ সময়ে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।
আগামী ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪ তারিখের মধ্যে দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস না পাওয়া গেলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার ঘোষণা না আসলে প্রক্টরিয়াল নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা।