ঘুরে আসুন হযরত শাহ কুতুব উদ্দীন (রঃ) মাজার শরীফ
আহমদ আবুল কালামঃ আবহমান কাল ধরে এ পৃথিবীতে এসেছেন নবী, রাসুল, আউলিয়া, গাউস। ইতিহাস ধরে রেখেছে তাদের স্মৃতি আজো, যারা আমাদের মাঝে চির স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন। তাঁরা অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষকে দেখিয়েছেন আলোর সন্ধান মানুষকে দেখিয়েছেন আলোর সন্ধান। দুঃখী মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, দুঃখী মানুষের এতটুকু সুখ দেয়ার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাই তারা আজো আমাদের মাঝে চির অম্লান, চির অক্ষয়।পূণ্যময় সিলেট মাটিতে সমাহিত ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হয়রত শাহ জালাল (রঃ), হয়রত শাহ পরান (রঃ) ও তাঁদের সাথী একমাত্র মিশন ছিল সকল অন্যায় অসত্যের মূলোৎপাটন করে সত্য ও কল্যাণময় ইসলামকে এ জমিনে প্রতিষ্ঠা করা। সেই মহান লক্ষ্যে হয়রত শাহ জালাল (রঃ) ও তার সঙ্গীগণ বিশাল, সংগঠিত, সুশৃংখল কাফেলা এদেশের সর্বত্র ছুটে চলেছিল।তাঁরা দ্বীনের পথে আল্লাহর খাঁটি গোলাম হিসেবে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর শ্বাশত বাণী পথহারা পথভ্রষ্ট মানুষের কাছে পৌছে দিতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।
আর এই ৩৬০ আউলিয়ার এক জেহাদী সহচর হলেন হযরত শাহ কুতুব উদ্দীন (রঃ) ওরফে শাহ ডাইয়া। এই ওলির মাজার শরীফ হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ জেলার ইনাতগঞ্জ বাজার বাজারের দক্ষিণ প্রান্তে কালা মিয়া দীঘি এলাকায় অবস্থিত। ইনাতগঞ্জ বাজার থেকে মাজার শরীফের দূরত্ব প্রায় দেড় কিঃমিঃ।এই মাজার শরীফ স্থানীয় লোকজনের কাছে পুরান মোকাম নামে পরিচিত। প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক ভক্তকুল এই মাজার শরীফে জিয়ারত করতে এঅঞ্চলের বরেণ্য ওলি শাহ কুতুব উদ্দিন (রঃ) এর মাজারে প্রতি শুক্রবার বিপুল সংখ্যক ভক্তকুলের সমাগম ঘটে। বিশেষ করে মহিলা ভক্তদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।বৃক্ষ শোধিত ছায়া ঘেরা এমাজার শরীফ প্রায়শ প্রধান গেট বন্ধ থাকে। ভিতরের কোন কবর না নেই। বরং বাইরের গেটে কবর পাকাকরণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত সাইনবোর্ড রয়েছে।
আসেন।মাজারের পাশ্ববর্তী কালা মিয়া দীঘির পাশ দিয়ে চলে গেছে পুরান মোকাম-ইনাতগঞ্জ সড়ক। মোকামের সাথে এই সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় মাজারে আসা লোকজন প্রতিনিয়ত দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন।এখানে মহিলা কিংবা পুরুষ ভক্তকূলের জন্য কোন ইবাদত খানা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে মাজার গেটের সম্মুখে চাদর বিছিয়ে নামাজ, জিকির-আজকার, তসবিহ-তাহলিল করে। রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে উপেক্ষা করে যুগ যুগ ধরে ভক্তরা এখানে আসছে।
এই মোকামের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন বানিউন গ্রামের আঃ হান্নান (৬৫), রমজানপুর গ্রামের আঃ হান্নান ও কালা মিয়া (৫৫)সহ অনেকে।খাদেম আঃ হান্নান জানান, তিনি গত ২০ বছর যাবৎ মাজারের খেদমতে নিয়োজিত আছেন।এই মাজারের অসংখ্য কেরামতি জনশ্রুতি আছে।
৮ বছরের পূর্বে তিনি ও লামনীর পাড় গ্রামের মাওলানা ওয়াছিকুর রাত ১১টার সময় এই মাজার জিয়ারত করতে যাওয়ার পথে মাজারের দূরবর্তী স্থান থেকে তারা দেখতে পান মাজারে একটি বাঘ দাড়িয়ে আছে এবং বাঘের পাশে একজন লোক দাঁড়িয়ে মাজার জিয়ারত করছেন। এদৃশ্য দেখে তারা দু’জন ভয় পেয়ে যান। দূর থেকে তারা ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন। কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পান বাঘের পাশে দাঁড়ানো লোকটি বাঘের পিঠে আরোহন করে মাজারের দক্ষিণ প্রান্তে চলে যায়।লোকটির পরণে ছিল পাঞ্জাবী-পায়জামা ও মাথায় পাগড়ী।
ইনাতগঞ্জস্থ মক্কা ক্লিনিকের সত্ত্বাধিকারী ও মরমী কবি ইবরান উল্লাহ সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি হাজ্বী মুনির উদ্দিন ইতোমধ্যে মাজারে আগত নারী ভক্তকূলের ইবাদতের জন্য একটি কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই কমপ্লেক্সে ইবাদত খানা, আশ্রয় কেন্দ্র, পায়খানা সংযুক্ত থাকবে। অচিরেই এই কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।
মাজারে আগত নবীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব জাহিদপুরের শারমিন বেগম (২৫) স্বামী-সন্তান নিয়ে মাজারে এসেছিলেন। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান মহান রাব্বুল আলামিনের সান্নিধ্যে প্রার্র্থনার উদ্দেশ্যে এখানে এসেছেন।বুরহানপুর গ্রামের শামেলা বেগম (৫০) জানান প্রায় সময় মাজারে আসি, মনে শান্তি পাই। কাজীরগাঁও গ্রামের কাছা বিবি (৮০) বলেন বাবারে আমি ছোট বেলা থাইক্কা এই মাজারে আইরাম। বাবার দোয়ায় আমি অনেক উপকার পাইছি। যার লাগি আমি পীর বাবার মাজারের ভক্ত।
মাজার গেটে কাঠের বাক্সে কিছু কোরআন শরীফ, তসবিহ সংক্রান্ত বই অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই মাজারে একটি মসজিদ, নারী-পুরুষের পৃথক ইবাদত খানাসহ মাজারের সার্বিক উন্নয়নে অত্র এলাকায় বিবিয়ানা তৈল-গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত শেভরণ বাংলাদেশসহ এলাকার বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য মাজার কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী জোর দাবী জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, যে মাজারের বর্তমান খাদেমদের একজন শাহ সায়েদ আলী (৪০) ও তার উত্তরসুরিরা শাহ কুতুবউদ্দিন (রঃ)এর পূব পুরুষ দাবী করলেও এ কোন যৌক্তিক প্রমান পাওয়া যায়নি। জানা যায়, এই ইউপির প্রজাতপুর গ্রামের নিকটবর্তী চন কিত্যা বা ফকির কিত্যা নামক স্থানে তাদের পূর্বপুরুষ ছিল। পরবর্তীতে ইতিহাসখ্যাত ৩৬০ আউলিয়ার সহচর শাহ কুতুবউদ্দিন (রঃ) মাজার শরীফের পাশে ইনাতগঞ্জ পাশ্ববর্তী আগনা হাওড়ে পুরান মোকাম গ্রামে তারা বসতি স্থাপন করে।এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে এদের বসতি স্থাপনের পূর্বেই ২/৩ শ’ বছর পূর্বেই এ মোকাম ছিল। তাদের বংশধর বলে পরিচয় পাওয়া যায়না।