কোম্পানিগঞ্জে আব্দুল আলী হত্যা : আসামীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ লুটপাটের অভিযোগ
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ যুবলীগ নেতা ও পাথরব্যবসায়ী আবদুল আলী হত্যাকান্ডের পর থেকে একের পর এক অনাখ্ঙিত ঘটনা ঘটছে। আব্দুল আলী খুনের মামলার আসামীদের বাড়িগুলোতে নির্বিচারে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, মালামাল লুট, নারীদের ওপর হামলা হয়েছে। এসব অভিযোগে সিলেটের আমলী আদালতে তিনটি দরখাস্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাগুলো তদন্তপূর্বক ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত বুধবার দায়ের হওয়া পৃথক ওই ৩ মামলায় ৯৮ জনকে আসামী করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার কেউ কেউ ৩টি মামলায়ই আসামী করা হয়েছে। দায়ের হওয়া তিন মামলায়ই প্রধান আসামী করা হয়েছে একমাস পূর্বে খুন হওয়া বহুল আলোচিত পাথর ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা আবদুল আলীর ভাই আবদুল হককে।
মামলা তিনটির অভিযোগে বলা হয়েছে, হত্যা মামলার আসামী হওয়ায় এবং অজ্ঞাত আসামী থাকায় পুলিশি হয়রানী ও গ্রেফতার আতঙ্কে উপজেলার গৌখালেরপাড় গ্রামের পুরুষ মানুষেরা পলাতক রয়েছেন। আর এই সুযোগে নিহত আবদুল আলীর ভাইয়ের নেতৃত্বে গোষ্টির লোকজন ও সমাজে চিহিৃত কিছু চোর ডাকাত প্রতিনিয়িতই গৌখালেরপাড় গ্রামে হত্যা মামলার আসামী ও তাদের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে ঢুকে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট করে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয়রা জানান, আব্দুল আলী হত্যার পর সমবেদনা জানাতে তার বাড়িতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এক শীর্ষ নেতা উসকানি মূলক বক্তব্য দেন। এরপর থেকে হত্যা মামলার আসামীদের বাড়িতে শুরু হয় অরাজকতা। ঘটতে থাকে একেরপর এক হামলা ও লুটের ঘটনা।
অবশ্য আব্দুল আলী হত্যা মামলায় পুলিশ প্রশাসন বেশ কয়েকজন আমামী আটকও করেছে। তারপরও আসামীদের বাড়িতে চালানো হয়েছে তান্ডব। আদালতে দায়ের করা ৩ টি মামলার এজহার সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্যাতিতরা বলেন, আমাদের কেউ আবদুল আলী হত্যার সাথে জড়িত নয়। তারপরও যদি কেউ এর সাথে জড়িত থাকে তবে পুলিশ তদন্ত করে আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেবে। এই হত্যাকে পুজি করে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এমন তান্ডব সভ্যসমাজে মেনে নেয়া যায় না।
জানা যায়, যুবলীগ নেতা আব্দুল আলী হত্যার পর তার ভাই আবদুল হকের নেতৃত্বে গত ২৪ অক্টোবর সকালে জোর করে বিলে মাছ লুট এবং ওই দিন বিকালে গৌখালেরপাড় গ্রামের আকবর আলীর স্ত্রী জোবেদা খাতুনের বাড়িতে হামলা ও গরু চুরির অপরাধে গত ২৬ নভেম্বর বুধবার সিলেটের (কোম্পানীগঞ্জে) আমল গ্রহণকারী ৪র্থ আদালতে একটি দরখাস্ত মামলা দায়ের করেন জোবেদা খাতুন। ওই মামলায় ৩৯ জনকে আসামী করা হয়।
মামলার অভিযোগে জোবেদা উল্লেখ করেন, আসামীরা পরিকল্পীতভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বাড়ির ঘর দরজা ভাংচুর করে ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণ, ২০ হাজার টাকার কাপড়-চোপড়সহ ৭০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে। এছাড়া পার্শবর্তী আকদ্দছ আলীর বাড়ি থেকে ১১টি গরু, আলাল মিয়ার বাড়ি থেকে ৭টি, মোসলেম মিয়ার বাড়ি থেকে ৬ টি, সুজন মিয়ার বাড়ি থেকে ৮টি, দুধু মিয়ার বাড়ি থেকে ৮টি, সফিক মিয়ার ৭টি, নূর হোসেনের ৬টি, সরাফত আলীর ৯টি, খয়রুননেছার ৬টি, সমরুন নেছার ৫টি. মুছা বেগমের ৪টি. জৈবুননেছার ৪টিসহ মোট ৮১টি ছোট বড় গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এরমধ্যে ৮টি গরু এলাকার চিহিৃত গরু চুর মামলার আসামী ইয়াকুব আলীর বাড়িতে রাখা হয়। পরে আসামী আব্দুস সালাম ও কালাম গরুগুলো ছাতক থানার দৌহালিয়া বাজারে নিয়ে যায়। এরপর গরুগুলো বিক্রি করতে গেলে ইজারাদার শাহ নেওয়াজ চৌধুরীর সন্দেহ হলে তাদের চ্যালেঞ্জ করেন। পরে আসামী সালাম ও কালাম গরু রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়। বর্তমানে গরুগুলোবাজারের ইজারাদার শাহজাহানের জিম্মায় রয়েছে। ওই গরু উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামলা করা হয়েছে মামলায়। এছাড়া তুবড়িয়া বিল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ লুট করে নিয়ে যায় আসামিরা। যার মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা। এছাড়া দৌখালেরপাড় বিল থেকে আরো প্রায় ২ লাখ টাকার মাছ, ৩টি সেচ মিশিন ও দামি দামি জাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেচ মিশিনের মূল্য প্রায় ৭৫ হাজার টাকা।
এদিকে, লুটপাটের ধারাবাহিকতায় ১৯ নভেম্বর রাতে গৌখালেরপাড় গ্রামের সাত্তার আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে গত ২৬ নভেম্বর বুধবার একই আদালতে আরেকটি দরখাস্ত মামলা দায়ের করেন সাত্তারের স্ত্রী হোছনা বেগম। মামলা নং-৪৪। হোসনা বেগম মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেন, আসামীরা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ প্রক্রিতির লোক। আসামীদের সাথে মামলা নিয়ে বিরোধ চলছিলো। অজ্ঞাতদের হাতে আব্দুল আলী খুন হওয়ার পর বাদির আত্মীয় স্বজনকে মিথ্যা ওই খুনের মামলা ফাঁসানো হয়। মামলা দায়েরের পর থেকে এলাকা পুরুষ শূন্য হয়ে যায়। ওই সুযোগে মামলার আসামিরা বাড়িতে ঢুকে ডিজেল ঢেলে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঘরে থাকা ৪ টি ছাগল, মুরগ ১২টি, ৩টি ভেড়ি যারদাম প্রায় ২৩ হাজার টাকা, নগদ ২৫ হাজার টাকা, ২০ মন ধান, যার মূল্য ১৫ হাজার, ঘরের আসবাবপত্রসহ প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর আসামীরা পার্শবর্তী রাবিয়ার ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। তার ঘরে ২ টি ছাগল, ৫০ মন ধান, যার দাম ৪০ হাজার টাকা, ৫টি মুরগ, নগদ ১৩ হাজার টাকা, আদাপাকা ঘর ও কাপড় চোপড়সহ প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। মাকসুদার ঘরেও এরা আগুন দেয়, এতে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মালামাল পুড়ে যায়। একই রাতে মনোয়ারার ঘরেও আগুন দেয়া হয়। তার ঘরে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকার মালামাল পুড়ে যায়, আনোয়ারার ঘরে ২ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয় বলে এজহারে উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে, আমলগ্রহণকারি (কোম্পানীগঞ্জ) চতুর্থ আদালতে গত বুধবার দায়ের করা দরখাস্ত মামলায় কোম্পানীগঞ্জ থানার গৌখালেরপাড় গ্রামের মনসুর আলীর স্ত্রী মোছা. আনোয়ারা বেগমের মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১নং আসামী আবদুল হকের মৃত ভাই আব্দুল আলীর সাথে বিভিন্ন মানুষের শত্রুতা ও মামলা মোকদ্দমা থাকায় গত ২৪ আসামীর ভাই আব্দুল আলী ভোলাগঞ্জ মহাসড়কের কাটাগাং ব্রীজের মনোগাঙ্গের খোজা পাড়ে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। পরে আব্দুল আলীর স্ত্রী বাদী হয়ে আনোয়ারা বেগমের আত্মীয়-স্বজনসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে একটি খুনের মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলা দায়েরের পর গৌখালেরপাড় গ্রাম পুরুষ শূন্য হইয়া পড়ে। এর সুযোগ আসামীগণ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বাড়ীর ঘর দরজা ভাংচুর করে আমার ছেলে মাসুম মিয়া আমাকে মারধর করে ঘরে থাকা ২টি মোবাইল ফোন, মসজিদের আমানত রাখা ২ লাখ টাকা নগদ, ঘরে থাকা স্বর্ণালঙ্কার, মূল্যবান জিনিসপত্রসহ প্রায় ১০লাখ টাকার মালামাল লুট করে নেয়।
মামলার আসামীরা হলেন, নিহত আবদুল আলীর ভাই কোম্পনীগঞ্জ গ্রামের মৃত আব্দুল মনাফের ছেলে আব্দুল হক, মৃত মনু মিয়ার ছেলে আব্দুছ ছালাম, ভুলাই মিয়ার ছেলে মুক্তাছির আলী, আব্দুল করিমের ছেলে মো. রফিক, সোনাফর আলীর ছেলে ছালাম, মৃত বুলাই মিয়ার ছেলে মনসুর, মক্তাছির আলী, রমজান আলী, হায়াত উল্লার ছেলে মো. ফিরোজ, মো. জহির, ইয়াকুব আলীর ছেলে মো. হারুন, মো. এখলাছ, মৃত মবুল্লাহ এর ছেলে মো. আবির, মৃত আব্দুল মন্নানের ছেলে মো. চান মিয়া, মৃত ইরফান আলীর ছেলে ছালাম, সুনু মিয়া, আনা মিয়া, মৃত বালাই মো. জসিম, মৃত আইন উল্লার ছেলে মো. মর্তুজ আলী, মনা মিয়ার ছেলে ছত্তার, আব্দুল মনাফ এর ছেলে রুহেল, সুমেল, মোহাম্মদ আলী, সোনা মিয়া, মৃত মন্নান মিয়ার ছেলে নুর মিয়া, ইয়াকুব আলী, মৃত সুরুজ আলীর ছেলে আব্দুল হাসিম, ইউসুফ আলীর ছেলে সুহেল, মৃত মন্নান মিয়ার ছেলে চান মিয়া, চান মিয়ার ছেলে হেলাল, হাছন আলী উরফে ভুলাই এর ছেলে মুসলিম, মখলিছ মিয়ার ছেলে সেবুল, গোলক সোনাফরের ছেলে আছকির, কেরামতের ছেলে ফয়ছল।
গৌখালেরপাড় গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে উজ্জল, তাজুল ইসলামের ছেলে নুরুল আলম। দক্ষিণ বুড়দেও গ্রামের মৃত লদাই মিয়ার ছেলে মনসুর (সাইন্দা হাদাই) মৃত মবুল্লার ছেলে আজির মিয়া, আইয়ুব আলীর ছেলে সফিক মিয়া, বুড়দেও গ্রামের আব্দুল আলী। গৌরিনগর গ্রামের আহমদ আলীর ছেলে আব্দুল হাসেম। ইসলামপুর গ্রামের মৃত লুৎফুর রহমানের ছেলে হুমায়ুন কবির মছব্বির।