খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করা হতো
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বিভিন্ন কৌশলে অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা নীরিহ যাত্রীদের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত মিডিয়া সেন্টারে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা কখনও বিলাশবহুল বাসের যাত্রী হয়ে পানির সাথে চেতনানাশক এ্যাটিভ্যান ট্যাবলেট মিশিয়ে দেন। আবার চা, বিস্কুটের সাথে কখনও হালুয়ার সাথে মিশিয়ে অজ্ঞান করেন।
এ্যাটিভ্যান ট্যাবলেট পাকিস্তানের তৈরি। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে মস্তিস্ক বিকৃত মানুষের চিকিৎসায় এটি কাজে লাগে। স্বল্পমাত্রায় ব্যবহার করলে ভালো ঘুম হয়। কিন্তু অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের টার্গেট ব্যক্তিদের অতিরিক্তমাত্রায় সেবন করানোর কারণে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত হয় বলেও তিনি জানান।
গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বলেন, গত বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল কুদ্দুস ও সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে ৩১ জন অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মেয়াদী সাজা দেয়া হয়। এদের মধ্যে ৩ জনকে ২ বছরের, ১ জনকে ১৯ মাসের, ১ জনকে ১৬ মাসের, ১ জনকে ১১ মাসের, ৯ জনকে ৩ মাসের, ৬ জনকে ৬ মাসের, ২ জনকে ৪ মাসের, ২ জনকে ৩ মাসের ও ১ জনকে ১ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো- মিজানুর রহমান পিন্টু (৪২), আবদুল জলিল ব্যাপারী (৫৫), আবদুর রশিদ (৪২), বাবু (৩২), কামারুজ্জামান (২৫), জাহিদ (২২), নিয়ামুল হক (২১), খোকন মিয়া (২৩), মোসলেম মোল্লা (৩৫), আলম (২২), মিজানুর রহমান (৪২), শরিফুল ইসলাম (৪৮), সানোয়ার (৩৫), রেজাউল (৪০), ওসমান গনি (২৫), লালমিয়া (৪৫), গিয়াস উদ্দিন (২৪), মামুন (৪০), শহিদ আহমেদ (২৬), ফেরদৌস (২৫), আবু তাহের (২৮), মোকসেদ মোল্লা (৪০), সুমন (২৩), বাবু (১৮), আবদুল কাদের (৪০), সুমন (২৫), মাওলা সরদার (২৮), মো. ওলি (১৮), আমিনুল ইসলাম (২৫), জনি (১৯) ও শাওন আহমেদ (১৮)।
এ সময়ে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ চেতনানাশক ওষুধ, অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত আচার, সিগারেট, বিস্কুট, চায়ের ফ্ল্যাক্স ও ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ চেতনানাশক ওষুধ সরবরাহকারী ঢাকার ফকিরাপুল গাউসিয়া ফার্মেসীর মালিক মিজানুর রহমান পিন্টুকে ৭২৫ পিস এ্যাটিভ্যান ট্যাবলেট, ১০টি মাইলাম ট্যাবলেট ও ৬টি ডার্মিকাম ট্যাবলেটসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিন্টু গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়, ভারত থেকে অবৈধ পথে বিভিন্ন ধরনের চেতনানাশক ওষুধ বাংলাদেশে এনে সক্রিয় অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের কাছে বিক্রি করে আসছিল। রাজধানীতে বেশ কয়েকটি অজ্ঞানপার্টির গ্রুপ তার কাছ থেকে ওষুধ কেনে। এদের মধ্যে ফকিরাপুলের শরীফুল গ্রুপের ৬ জন, গুলিস্তানের জাহিদ গ্রুপের ৫ জন, কমলাপুরের আবদুল জলিল ব্যাপরী গ্রুপের ৪ জন, মহাখালী বাসটার্মিনালের মাওলা গ্রুপের ৫ জন মিরপুরের কালসীর মামুন গ্রুপের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছে, তারা যাত্রীদের প্রথমে টার্গেট করে অথবা কৌশলে তাদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে। খাদ্যদ্রব্য বা পানির সাথে চেতনা নাশক মিশিয়ে খাইয়ে অজ্ঞান করে। তারপর তাদের সাথে থাকা মালামাল নিয়ে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, বাস টার্মিনাল, ট্রেনস্টেশন ও ফুটপাতে টং দোকান বসিয়ে তারা চা, বিস্কুট, কলা, সিগারেট, চানাচুর, মুড়ি, হালুয়া ও কোমল পানীয়র সাথে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের অজ্ঞান করে। এ কাজে পরিকল্পনা অনুয়ায়ী একেক সদস্য একক ধরনের দায়িত্ব পালন করে থাকে।
গ্রেপ্তারকৃতরা পূর্বে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। এদেরমধ্যে আবদুল জলিল ব্যাপারী ১১ বার, মিজানুর রহমান ৩ বার, মাওলা ৭ বার, ওলি ৩ বার, শরিফুল ৩ বার, জাহিদ ২ বার ও মনির ওরফে মনা ৫ বার গ্রেপ্তার হয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃত মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাকীদের ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দেয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল আহাদ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মহরম আলি, লুবনা জাহান, এস এমনাজমুল হক, মেনহাজ উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল আহাদ।