কিবরিয়া হত্যা : সম্পূরক অভিযোগপত্রে হারিছ, আরিফ ও আসামি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ নতুন ১১ জনকে যুক্ত করে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় তৃতীয় দফার সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। এ মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুল বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ সদর বিচারিক হাকিমের আদালতে এই অভিযোগপত্র দেন। তার দেওয়া অভিযোগপত্রে হারিছ চৌধুরী, আরিফুল ও হবিগঞ্জের মেয়র গোলাম কিবরিয়া গউস সহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে হারিছ চৌধুরী ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও আসামি। তাকে পলাতক দেখিয়েই এ দুটি মামলার বিচার চলছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিরও সদস্য। গত বছর নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি সিলেটের মেয়র নির্বাচিত হন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “শুনেছি চার্জশিটে আমার নাম এসেছে। আমি ওই ঘটনায় জড়িত নই। চার্জশিটের কপি না পাওয়া পর্যন্ত আমি কিছু বলব না।”
হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গোলাম কিবরিয়া গউস জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। গত দুই মেয়দ ধরে তিনি মেয়রের দায়িত্বে রয়েছেন। অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা নতুন ১১ জনের নাম উল্লেখ করলেও তিনজনকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। হারিছ চৌধুরী, আরিফুল হক ও গউসের সঙ্গে আসামি হিসাবে থাকছেন হাফেজ মো. ইয়াহিয়া, মওলানা শেখ আবদুস সালাম, আবদুল জলিল, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান ও দেলোয়ার হোসেন রিপন। এছাড়া অভিযোগপত্রে ইউসুফ বিন শরীফ, আবু বক্কর আব্দুল করিম ও আহছান উল্লাহর নাম দেওয়া হলেও প্রথম দুজনের ঠিকানা না পাওয়ায় এবং তৃতীয়জনের মৃত্যু হওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা
বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরের বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী এক জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলার শিকার হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ওই হামলায় আরো নিহত হন কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।
হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান ওই রাতেই হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন।
প্রথমে সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান মামলাটি তদন্ত করে ১০ জনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২০ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এই অভিযোগপত্রে জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল কাইউম, ও ব্যাংক কর্মকর্তা আয়াত আলী, কাজল মিয়া, সাবেক জেলা ছাত্রদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক সেলিম আহমেদ, জিয়া স্মৃতি গবেষণা পরিষদ জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী, বিএনপি কর্মী তাজুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন জালাল, ইউনিয়ন বিএনপির নেতা জমির আলী, জয়নাল আবেদীন মোমিন ও মহিবুর রহমানকে আসামি করা হয়।
এরপর মামলার বাদী আবদুল মজিদ খান ২০০৬ সালের ৩ মে সিলেট দ্রুত বিচার আদালতে নারাজি আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে। এরপর ১৪ মে তিনি হাই কোর্টে আপিল করেন।
আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট ‘কেন অধিকতর তদন্ত করা যাবে না’ মর্মে রুল জারি করে। এই রুলের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের ১৮ মে লিভ টু আপিল করে সরকার। আপিল বিভাগ সরকারের আপিল খারিজ করে।
এরপর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়, যার দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে।
তিনি ২০১১ সালের ২০ জুন আরও ১৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আগের আসামিদেরও এতে রাখা হয়।
এ অভিযোগপত্রে নতুন যোগ হয় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, লস্করই তৈয়বার সদস্য আব্দুল মজিদ কাশ্মিরি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, মহিউদ্দিন অভি, শাহেদুল আলম দিলু, সৈয়দ নাঈম আহমেদ আরিফ, ফজলূল আলম মিজান, মিজানুর রহমান মিঠু, মোহাম্মদ আব্দুল হাই, মোহাম্মদ আলী, মুফতি সফিকুর রহমান, বদরুল এনায়েত ওরফে মো. বদরুল, বদরুল আলম মিজানের নাম।
কিন্তুএরপর আবার ২০১১ সালের ২৮ জুন কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া অভিযোগপত্রে হবিগঞ্জের বিচারিক আদালতে নারাজি আবেদন করেন।
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি নারাজি আবেদন গ্রহণ করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক। এরপর তৃতীয়বারের মতো অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির এএসপি মেহেরুন নেছা।