আর কতোকাল ভাসবো…
জুবের সরদার দিগন্ত, দিরাই-শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ ভানের জলে ভেসে এসেছি কচুরিপানার মতো, কোথা থেকে এসেছি তাও মনে নেই। কচুরিপানার মতো ভেসে ভেসে জীবন ধারন করছি, নেই নিজের একটু জমি মাথা গুজার জন্য, পরের জায়গায় খরকুটর তৈরী ঘর বানিয়ে ছেলেটাকে নিয়ে কোনো মতে রাত কাটিয়েছি, সারাদিন কেটে যায় পরের বাড়িতে কাজ করে। প্রায় ৪০ বছর আগে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসা জাহেরা বেগম তার জীবন যাপনের বর্ণনা দেন এভাবেই। তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে সৎ মায়ের অত্যাচারে বড় বোন জায়েদার হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম একটু ভালো থাকার আশায়, কিন্তু আল্লাহ আমাদেরকে সে শুভাগ্য দেননি। বাড়ি থেকে পালিয়ে বেশি দুর যেতে পারিনি, বোন জায়েদাকে আমি হারিয়ে ফেলি, তখন থেকে আজ পর্যন্ত তার সাথে আমার আর দেখা হয়নি। সে কোথায় আছে কেমন আছে, বেছে আছে নাকি মরে গেছে তাও জানিনা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ৫০ বয়সী জাহেরা এখন তার পরিবারের কাছে ফিরে যেথে চান। কিন্তু কিভাবে যাবেন ? নিজের টিকানা তিনি ভুলে গেছেন। পিতা-মাতা ও ভাইয়ের নামসহ এক মামার নাম বলতে পারছেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবার নাম ইয়াকুর মিয়া ও মায়ের নাম হামিদা বেগম, ভাই হানিফ মিয়া এবং মামা মংলা মিয়া। টিকানা বলতে শুধু চৌমহনী বলতে পারছেন এটি গ্রাম, ইউনিয়ন নাকি উপজেলা তাও বলতে পারছেন না। তিনি বলেন, পত্রিকায় আমার নাম দেখে যাদি আমার কোনো আত্মীয় আমাকে নিয়ে যায়, জীবনের শেষ বেলা কিছুটা শান্তি পেয়ে মরতে পারবো। কচুরিপানার মতো ভাসতে ভাসতে আমি ক্লান্ত, আর কতোকাল এভাবে ভাসবো।
এখানে কি করে আসলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক দিন আগের কথা তা আমার মনে নেই, বড় হয়েছি দিরাই উপজেলার জারলিয়া গ্রামের মনির মেম্বর (আমার পালিত বাবা) এর কাছে। তিনি আমাকে বিয়েও দিয়েছিলেন। জজমিয়া নামক এক লোকের সাথে সে আমার সাথে খকনও ভালো ব্যাবহার করতো না, এমন কি আমার গর্বে তার ওয়রস জাত সন্তান রেখে সে নিরুদ্ধেস হয়ে যায়, আজ পর্যন্ত তার কোনো খোজ পাইনি। তার পর বাবার (পালিত বাবা) সাথে রাগ করে চলে আসি একই উপজেলার করিমপুর ইউনয়িনের রজনীগঞ্জ বাজারে, স্থানীয়দের সহযোগীতায় সরকারী একটি পরিতেক্ত বিল্ডিংয়ে ছেলেটাকে নিয়ে বাস করছি। ছেলেটা আমার এখন কলেজে পড়ে, এখানকার লোকজনের সহায়তায় ছেলেটাকে কলেজ পর্যন্ত নিয়ে গেছি। ছেলে এতো বড় হয়ে গেল তার বাবা এক বারও এসে দেখে গেল না। সে বেছে আছে কি নাই তাও জানিনা। এসব কথা বলতে বলতে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আপনি আমার জীবনের কাহীনি লিখে শেষ করতে পারবেন না। আপনি আমার মা-বাবা আর ভাইয়ের নাম দিয়ে একটা খবর ছাপিয়ে দেন, লেখাটা তাদের চোখে পড়লে আমার মনে হয় তারা আমাকে নিতে আসবে। যোগাযোগের জন্য ফোন নাম্বার ০১৭১৩-৮৬১১৩০।