ছাতকের ওসির বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ

সাজানো চাঁদাবাজির মামলায় ১৬ বছরের কিশোরী সহ একই পরিবারের ৫ জন গ্রেফতার

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে বসত বাড়ি নিয়ে আদালতে পক্ষে বিপক্ষে বিচারাধীন মামলা থাকার পরও এক লন্ডন প্রবাসী পরিবার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পুলিশ একই পরিবারের ১৬ বছরের এক কিশোরী, তার মা-বাবা দুই ভাই সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। ওসির অশুভ ইঙ্গিতে গ্রেফতারের পর নতুন করে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে ৫ জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওসির ভুমিকা নিয়ে শিল্পনগরী ছাতকে নানা মুখরোচক সমালোচনার পাশাপাশী গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ সহ ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার জাউয়া বাজার ইউনিয়নের দেবেরগাঁও গ্রামের লন্ডন প্রবাসী পরিবারের মৃত আরব আলীর স্ত্রী মনোয়ারা বিবি নামের এক মহিলা শুক্রবার বিকেলে ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। পুলিশ বিকেলেই উপজেলার জাউয়া বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে দিয়ে দেবেরগাঁও গ্রামের মৃত মনা উল্লাহর ছেলে ঈমান আলী (৫০), তার স্ত্রী মেহেরুন বেগম (৪৩) , ছেলে আলী হোসেন (২৫) আক্তার হোসেন (২০) ও একমাত্র কিশোরী কন্যা পপি বেগম (১৬) কে গ্রেফতার করিয়ে থানায় নিয়ে আসে। গতকাল শনিবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, একই গ্রামের মনোয়ারা বিবির বাড়ির প্রতিবেশী ঈমান আলীর সঙ্গে বসত বাড়ির জায়গা নিয়ে দ্বীর্ঘ দিন ধরেই আদালতে বিচারাধীন মামলা রয়েছে। বাড়ির জায়গা নিজের দাবি করে মনোয়রা বিবি ও তার পরিবারের লোকজন সম্প্রতি ঈমান আলীকে তার পরিবার অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এতে কাজ না হওয়ায় বাড়ি ছাড়া করে বাড়ির দখল নিতেই মনোয়রা বেগম কৌশলে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে থানা পুলিশকে ব্যবহার করেন। মনোয়ারা বেগমের অভিযোগ বাড়িতে ঈমান আলীকে কেয়ারটেকার হিসাবে থাকতে দেয়া হয়েছিল বাড়ি ছেড়ে যেতে অপারগতা দেখিয়ে ঈমান আলী ৩ লাখ টাকা চাঁদা ও বাড়ির পাশের এক কেদার জমি দাবি করলে মনোয়ারা বেগম ঈমান আলী ও তার স্ত্রী, পুত্র-কন্যাসহ পবিারের ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে শুক্রবার থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, যে বসত বাড়ির জায়গা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে সেই জায়গাটি অর্পিত সম্পক্তি ছিল। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর পুর্বে লন্ডন প্রবাসী দুই পরিবার ও ঈমান আলী মিলে জায়গাটি দখলে নিয়ে পরবর্তীতে পৃথক পৃথক ভাবে জায়গাটি নিজেদের নামে বন্দোবস্ত আনেন। এরপর নিজেদের বাড়ির সীমানা পরিসর করতে ঈমান আলীকে কিছু টাকা দিয়ে ঈমান আলীর দখলে থাকা বাড়ির অংশটি ছেড়ে দেয়ার জন্য মনোয়রা বেগমের পরিবার প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে সাজানো চাঁদাবাজির মামলায় ওসি লন্ডন প্রবাসী পরিবার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শুক্রবার একই পরিবারের ১৬ বছরের কিশোরী কন্যা সহ ৫ জনকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানোর ঘটনায় উপজেলার রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজে ওসির বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্য সহ নানা মুখরোচক সমালোচনা বইছে। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রশীদ সরকারের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহজালাল মুন্সীর কাছে গতকাল শনিবার এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি লন্ডন প্রবাসী পরিবার দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এমনকি গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বললেন, কেয়ারটেকার হিসাবে থাকতে দেয়ার পর ঈমান আলী ও তার পরিবারের লোকজন বাড়ি ছেড়ে না যাওয়ায় উল্টো চাঁদাদাবি করার প্রেক্ষিতেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।