মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন প্রসঙ্গে কিছু প্রস্তাব
মোঃ আব্দুল মালিকঃ বাঙ্গালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। আর সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে মহানমুক্তিযোদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্ভভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। এই মুক্তিযুদ্ধ একদিকে আমাদের গৌরবের অন্যদিকে খুবই দুঃখ ও বেদনার। আমাদের দুঃখ বেদনাও গৌরবের এই মহান মুক্তিযুদ্ধকে সম্প্রতি কলংকিত করেছে খোদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কতিপয় উধ্বর্তন কর্মকর্তা। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতের অন্ধকারে বাঙ্গালি জাতিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় পশ্চিম পাকিস্থানী শাসকগোষ্ঠী যখন বাঙ্গালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও বিশ্বের বিবেকবান অনেক রাষ্ট্র এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এসব বিদেশী বন্ধুদের অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বরণ ও তাঁদেরকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীনে বাংলাদেশ সরকার যে প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন সেই উদ্যোগকে ভেস্তে দিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গুটি কয়েক কর্মকর্তা ক্রেষ্ট জালিয়াতি করে। সম্প্রতি ঐ মন্ত্রাণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিব/যুগ্ম সচিব এমন কি দূর্ণীতি দমন কমিশনের উচ্চ পদমর্যাদার কয়েক জনের ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণ করে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জালিয়াতি ও ধরা পড়েছে। এই সনদ জালিয়াতি ধরা পড়ার পর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের বিদ্যমান তালিকা স্থগিত করে সঠিক নতুন তালিকা প্রণয়নের উদ্যেগ গ্রহণ করেছেন। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এবং ৬বার তালিকা প্রণয়ন করার পর আবার সঠিক তালিকা প্রণয়নের প্রয়োজন পড়া সত্যিই দুঃখজনক। সে যাই হউক ৪৩ বছর পরও যদি একটি সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করা যায় তাও মন্দের ভাল।
সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রাণালয় সভা করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের নিমিত্তে কিছু নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা গণ মাধ্যমের মাধ্যমে দেশীবাসী জেনেছেন। গত ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির গং এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। আলোচনায় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, যুদ্ধ শিশু ইত্যাদি বিষয় উঠে এসেছে। অদুর ভবিষ্যতে হয়ত সামনে আসবে মুক্তিযুদ্ধে তীর্ণমূল পর্যায়ের সংঘঠক, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, বৈধ্য ভূমি, রাজাকার, আলবদর, আল শামস, শান্তি কমিটির নেতা-কর্মী ইত্যাদির তালিকা প্রণয়নের। যা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষনের স্বার্থে খুবই প্রয়োজন। ইতিমধ্যে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান বা আঞ্চলিক পর্যায়ে এসব বিষয়ে কিছু কিছু কাজ হয়েছে কিন্তু সরকারী ভাবে জাতীয়ভিত্তিক কোন কাজ এখনো হয়নি। স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি বলে থাকেন ৩০ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এ সংখ্যা মানতে নারাজ। তারা এ সংখ্যা নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত। ফলে নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্ত। এমন কি একটি সংঘঠন নাকি হেফাজতের সভায় ৬১ জন মানুষ হত্যা ও লাশ গুম করার অধিকারের তথাকথিত কাহিনীর মত মুক্তিযুদ্ধে মাত্র ৩০,০০০ হাজার মানুষ মারা গেছেন বলে একটি গবেষনা ধর্মী বই রচনা করে রেখেছেন। যা সময় এবং সুযোগ অনুযায়ী প্রকাশ করবে বলে তাদের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে, অনেক স্বাধীনতা বিরোধী বোল পাল্টে মুক্তিযোদ্ধের সংঘঠক বা আওয়ামীলীগের নেতা হয়ে গেছে। বর্তমানে এমনও মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া যাবে যিনি স্বাধীনতা বিরোধী জামাতের সমর্থক। এছাড়াও একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে দুই বার গেজেট হয়েছে দুই তালিকায় তাঁর নাম আছে। যেমন একবার আছে ইপিআরে আরেকবার আছে সেনাবাহিনীতে। কারণ তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীতে চলে গিয়েছিলেন। এমন কি একজন মুক্তিযোদ্ধা বীর বিক্রম এবং বীর প্রতিক দুটি বীরত্ব সুচক খেতাব পেয়েছেন, এমনও আছে। এসব কারনে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধের মাঠ পর্যায়ের সঠিক ইতিহাস সংগ্রহ করা খুবই জরুরী।
১৭ অক্টোবরের টেলিভিশন আলোচনায় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন উপজেলা পর্যায়ে একটি যাচাই বাছাই কমিটি থাকবে। উক্ত কমিটির সামনে সকল মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত হবেন। সেখানে একজন মুক্তিযোদ্ধা আরেকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সনাক্ত করবেন। ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাকে চ্যালেঞ্জ করবেন। এভাবে নানা প্রশ্নের মাধ্যমে কে সঠিক, কে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তা বের হয়ে আসবে। আমার মতে এ পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক ও পূর্নাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ :- ১) বর্তমানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আর্থিক ও শারিরীকভাবে এত দূর্বল যে, তাঁদের পক্ষে উপজেলা সদরে যাওয়ার মত আর্থিক ও শারিরীক সার্মথ্য একেবারে নেই । ২) মুক্তিযোদ্ধারা বারবার তথ্য দিতে দিতে এতটা ত্যক্ত বিরক্ত যে তাঁরা আর কোন তথ্য দিতে নারাজ। ৩) অনেক মুক্তিযোদ্ধা ইতিমধ্যে পরলোকগমন করেছেন এবং তাঁদের নিকট আত্মীয়রা তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে অবগত নন। ৪) অনেক মুক্তিযোদ্ধা বলেন যুদ্ধে গিয়েছি দেশ স্বাধীনের জন্য তালিকায় নাম উঠানোর জন্য বা সনদ পাওয়ার জন্য নয়। যেমন বলেছিলেন ১৭ অক্টোবরের টেলিভিশন আলোচনায় শাহরিয়ার কবির। শাহরিয়ার কবির বা কাদের সিদ্দিকীকে সবাই মুক্তিযোদ্ধা নয় মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার হিসেবে জানেন কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের একজন হত দ্ররিদ্র শ্রমিক, চাষা, জেলেকে কে জানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে? আর কে তার নাম তালিকা ভূক্ত করাবে? ৫) অনেক মুক্তিযোদ্ধা এত অসচেতন যে তাঁর গৌরব গাঁথা মুক্তিযুদ্ধের অবদান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বই আকারে প্রকাশ করে ইতিহাস সংরক্ষণ করবে সে জন্য ও তাঁর মুক্তিযুদ্ধকালীন বিবরণ দিতে রাজী নয়। সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলা একটি অগ্রসর উপজেলা। উক্ত উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অমর কাহিনী সংগ্রহ করে বই আকারে প্রকাশ করার উদ্দ্যোগ নিয়েছিলেন সাংবাদিক সাত্তার আজাদ। সহযোগীতা নিয়েছিলেন বিয়ানীবাজার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খানের। তাও পূর্নাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি। এই প্রতিবেদক সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধার বীরত্ব গাঁথা সংগ্রহ করার মানসে উপজেলার বর্তমান ও সাবেক কমান্ডার, ডেপুটি কমান্ডার, ইউনিয়ন কমান্ডার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার ঘরে ঘরে একটি তথ্য ফরম পৌঁছাইয়া দেওয়ার পরও তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ৬) অনেক মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে স্বপরিবারে প্রবাসে আছেন। ৭) বর্তমানে জীবিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অনেক কম। যার জন্য একজন আরেকজনকে সনাক্ত করার জন্য হয়ত কাউকে পাওয়া যাবে না। যিনি ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা তিনি নিশ্চয়ই প্রভাবশালী। তাই তাকে ভূয়া জানা থাকা স্বত্বেও একজন দুর্বল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে নিরাপত্তার কারনে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব হবে না। যা আমরা দেখতি পাচ্ছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাক্ষীর ক্ষেত্রে। উধ্বর্তন কোন কর্মকর্তা বা প্রভাবশালী কোন নেতা বা তাদের আত্মীয় কোন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে প্রকাশ্যে কি কেউ মুখ খুলবে? আমার মনে হয় না। তাই ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে অভিযোগ নিতে হবে গোপনে আর তদন্ত করতে হবে প্রকাশ্যে শক্তিশালী কমিটির মাধ্যমে। ৯) রাজনৈতিক কারনে, শক্তির ভারসাম্যহীনতার কারনে প্রকৃত অনেক মুক্তিযোদ্ধা কমিটির সামনে উপস্থিত হতে পারবেন না বা তাঁকে অন্যায় ভাবে বঞ্চিত করা হতে পারে। আরো অনেক কারনে এ প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ ও সঠিক মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করা আমার মনে হয় সম্ভব হবে না। পূর্ণাঙ্গ এবং সঠিক তালিকা প্রণয়ন করতে হলে আমার প্রস্তাব কিছুটা সময় নিয়ে কিছুটা বেশি টাকা এক সাথে খরচ করে একটি তালিকা প্রণয়ন করা হলে তা হবে স্থায়ী। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধের পক্ষের সরকার। জাতির সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এই সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সরকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানে যথাসাধ্য কাজ করার চেষ্টা করছেন। তাই প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবার বর্তমানে কী অবস্থায় আছে তা সরেজমিনে জানা আবশ্যক। মাঠ পর্যায়ে আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযোদ্ধের যে গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে তার যেটুকু এখনো অবশিষ্ট আছে তা সংরক্ষণ ও যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধীদের চিহ্নিত করার প্রয়োজনে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নয় স্বাধীনতা বিরোধীদেরও তালিকা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধের মাঠ পর্যায়ের ইতিহাস সংরক্ষনের জন্য দেশব্যাপী আদম শুমারী, কৃষি শুমারী, ভূমি জরীপের মত একটি ব্যাপক ভিত্তিক জরীপ চালানোর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এ পদ্ধতিতে দেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিদ্যমান তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার ঘরে ঘরে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত সকল তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। ফলে একই সাথে আমরা সকল তথ্য পেয়ে যাব। অন্যদিকে বয়োবৃদ্ধ দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধারা হয়রানী থেকে মুক্তি পাবেন। আর এ কাজ করার জন্য প্রকৃত সময় এখনই। কারন বর্তমান মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর প্রতি দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। অতীতে তালিকা করা হয়েছে দলীয় দৃষ্টি কোন থেকে তাড়াহুড়া করে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ আছে অনেক। তাই তাড়াহুড়া করার কোন প্রয়োজন নাই। তাছাড়া বর্তমানে দেশের আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থাও অনেক ভালো।
সরকার এ পদ্ধতিতে তালিকা প্রনয়ণ করতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি আন্তমন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় কমিটি এবং বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, জেলায় জেলা প্রশাসক, উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে একটি করে কমিটি থাকবে। উপজেলা কমিটি যেকোন আবেদন বা অভিযোগ গ্রহণ যাচাই-বাছাই করে সিন্ধান্ত নিবে এবং এক কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি উর্ধ্বতন কমিটির নিকট আপীলের ব্যবস্থা থাকবে। তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিটি জেলা ও সিটি কর্পোরেশনের জন্য কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন দক্ষ অধ্যাপককে সমন্বয়কারী ও তাঁর অধিনে প্রতিটি উপজেলায় সহকারী অধ্যাপক বা সিনিয়র প্রভাষক একজনকে সহযোগী সমন্বয়কারী এবং প্রতিটি ইউনিয়ন ও উপজেলার পৌরসভার জন্য একজন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ের অনার্স মাস্টাসের ছাত্রকে তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। সংগ্রীহিত তথ্য কম্পিউটার কম্পোজ করে হার্ড ও সফ্ট কপি সংরক্ষণ করতে হবে। সংগ্রীহিত তথ্যের ভুল ভ্রান্তি নিরুপনের জন্য হার্ড কপি প্রতিটি এলাকায় সর্ব সাধারণের দেখার জন্য বাজার, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা ও মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হলে ভূল তথ্য সংশোধন সংযোজন সম্পর্কে কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে কমিটি পুনরায় যাচাই বাছাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে।
একজন মুক্তিযোদ্ধার যে সব তথ্য প্রয়োজন, যেসব তথ্য থাকলে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে সঠিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, বর্তমানে একজন মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আর্থ-সামাজিক দিক থেকে কি অবস্থায় আছেন ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য সম্বলিত একটি ছাপানো ফরম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে অনুরূপ কর্মকতার তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের মাধ্যমে প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার হাতে বা তাঁর স্থায়ী ঠিকানায় সপ্তাহ/দশদিন আগে পৌছে দিয়ে যদি বলা হয় এটা পূরণ করে রাখার জন্য, তাহলে তথ্য সংগ্রহকারীর তথ্য সংগ্রহ করা সহজ হবে। মুক্তিযোদ্ধ সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য যেমন মুক্তিযোদ্ধের সংঘঠক, সাহায্যকারী, শহীদ, বীরাঙ্গনা, যুদ্ধশিশু, বৈধ্য ভূমি, রাজাকার, শান্তি কমিটির নেতা-কর্মী ইত্যাদির জন্য আলাদা ফরম থাকবে। যা তাৎক্ষনিক ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি গণ্যমান্য বয়ষ্ক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করে তথ্য সংগ্রহকারী লিখবেন। যদি উপস্থিত সময় নিরাপত্তা জনিত কারনে জিজ্ঞাসা করা বা কারোপক্ষে তথ্য দেওয়া সম্ভব না হয় তবে তিনি বলে আসবেন গোপনে লিখে পৌঁছে দেয়ার জন্য। পরবর্তীতে অন্যান্য উৎস বা উপজেলা কমিটির মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করা যাবে, যে ভাবে যাচাই করেছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্রের লেখকরা
এভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হলে তৃর্ণমূল পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধের অনেক অজানা অধ্যায় জানা যাবে। তখন যারা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, শহিদ হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধের সংঘঠক বা আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী হওয়ার কারনে বা নিকটাত্মীয় মুক্তিযোদ্ধে যাওয়ার কারনে নির্যাতন, অগ্নি সংযোগ, লুটপাট, খুন ও সম্ভ্রমহানির শিকার হয়েছিলেন তাঁরা বা তাঁদের পরিবার পরিজন আজ কোন অবস্থায় আছে। আর যারা মুক্তিযোদ্ধের বিরোধীতা করেছিল তারা আজকে কোথায় কি ভাবে আছে? ফলে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস। এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য সংযুক্ত ছকটি অনুসরণ করা যেতে পারে।
প্রস্তাবিত মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা তথ্য ফরম ঃ-
১। মুক্তিযোদ্ধা/শহিদ মুক্তিযোদ্ধা/মৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম ২। পিতার নাম ৩। মাতার নাম ৪। জন্ম তারিখ ৫। স্থায়ী ঠিকানা ৬। বর্তমান ঠিকানা ৭। মুক্তিবার্তা/লাল বই নম্বর ৮। মুক্তিযোদ্ধা নম্বর ৯। কোন সালে প্রথম অর্ন্তভূক্তি ১০। মৃত ও শহিদের ক্ষেত্রে মৃত্যু ও শহিদ হওয়ার তারিখ ১১। শহিদ হওয়ার স্থান ১২। সমাহিতের স্থান ১৩। যুদ্ধে যাওয়ার সময় বয়স ১৪। যুদ্ধে যাওয়ার সময় পেশা ১৫। যুদ্ধে যাওয়ার সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা ১৬। বর্তমান শিক্ষাগত যোগ্যতা ১৭। বর্তমান পেশা ১৮। যুদ্ধে যাওয়ার বিবরণ ১৯। কোথায় কার অধিনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন ২০। কোন কোন যুদ্ধ/অপারেশনে অংশ গ্রহণ করেছেন ২১। যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ঘটনার বিবরণ ২২। সহযোদ্ধাদের নাম ২৩। সরকারী বে-সরকারী পর্যায় থেকে প্রাপ্ত সম্মাননা/ আর্থিক সহযোগিতার বিবরণ ২৪। সন্তানদের বিবরণ (যেমন ছেলে মেয়েদের নাম, কে কোথায় থাকে, কি করে) ২৫। দেশে-বিদেশে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের/ মুক্তিযোদ্ধে আর্থিক বা অন্যভাবে সাহায্য করেছেন জানা থাকলে তার বিবরণ ২৬। এমন কোন মুক্তিযোদ্ধার নাম যার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নেই জানা থাকলে তাদের নাম ২৭। আপনার জানা মতে মুক্তিযোদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্থদের বিবরণ (যেমন-খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নি সংযোগ, লুটপাটের শিকার) ২৮। জাতীয় পরিচয়পত্র ২৯। মুক্তিযোদ্ধা/পরিবারের কোন সদস্যের মোবাইল নম্বর ৩০। বিশেষ কোন বক্তব্য যদি থাকে তার বিবরণ ইত্যাদি।
মোঃ আব্দুল মালিক
শিক্ষক ও কলামিষ্ট
মোবাইল ঃ ০১৭১৮-৫০৮৫৬৮
তাং ২৭/১০/২০১৪ খ্রিঃ