চাঞ্চল্যকর খালেদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী গ্রেফতার
তারেক আহমদ চৌধুরী: গোলাপগঞ্জ উপজেলার নিমাদল গ্রামের সালেহ আহমদ ছল্লুছ মিয়ার ছেলে ও সিলেট মেট্রপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র খালেদ আহমদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী ফুলবাড়ী গ্রামের আব্দুস সাত্তার ওরফে সতাইর ছেলে ফাহিম আহমদ (২৮) কে গ্রেফতার করেছে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। ফাহিম খালেদ হত্যা মামলার অন্যতাম এজাহার নামীয় পলাতক আসামী। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নুনু মিয়া, এএসআই শংকর, এএসআই সিরাজ অভিযান চালিয়ে ফহিমের নিজ বাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করেন। অপহরন ও হত্যাকান্ডে জড়িত কবিরের অন্যতম সহযোগী ফাহিম দীর্ঘদিন থেকে পলাতক ছিল। মামলার এক সপ্তাহ পর কবির আদালতে আত্মসমর্পন করলে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে লের হাজতে প্রেরন করেন বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে।
যেভাবে অপহরন ও হত্যা : নিহত খালেদ পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারনে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার দাড়ীপাতন পশ্চিম পাড়ায় তার খালার বাড়ীতে থেকে পড়াশুনা করত। সমবয়সী খালাতো ভাই জহির একই সাথে চলাফেরা করত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার কারনে সিলেট নগরীতে বাসা নিয়ে চলে যান তারা। গত ২১ জুলাই সিলেট নগরী থেকে খালেদ ও তার খালোতো ভাই বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের বাঘবাড়ী গ্রামের বদরুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে অপহরন করে একই উপজেলার কবির ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফাহিম এবং তাদের সহযোগীরা। ঘটনার দিন সিলেটের একটি পার্টি হলে তারা ইফতার মাহফিলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। খালেদের খালা জানিয়েছেন তার ছেলে জহির ভাগ্রক্রমে ফিরে এসে জানিয়েছে , গোলাপগঞ্জস্থ নূর ম্যানশন মার্কেটের স্পাইডার ইলেক্্রনিক্স নামক একটি দোকানের মালিক সাইব উদ্দিনের ছেলে কবির আহমদ (২৫) কম্পিউটার সার্ভিসিং করার সূত্রধরে পূর্ব পরিচত হওয়ায় একটি ইলেকট্রনিক্স পন্য ক্রয়ের কথা বলে তাদেরকে সিলেট শহর থেকে গোলাপগঞ্জে আসার কথা বলে। পরবর্তীতে তাদেরকে কৌশলে গোলাপগঞ্জ থেকে কবিরের গ্রামের বাড়ী বিয়ানীবাজার উপজেলার রামধা বাজার এলাকার চখ গ্রামে নিয়ে যায়। বাড়ীতে নেওয়ার পর দুজনকে নির্যাতন করে এবং জহিরের এটিএম কার্ড নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে এটিএম বুথ থেকে ৪০ হাজার টাকা তুলে আরো ১২ ল টাকা প্রস্তুত রাখার কথা বলে খালেদকে আটক রেখে জহিরকে ছেড়ে দেয়। জহির ফিরে আসার পর ঘটনা জানাজানি হয়। পরবতীর্তে গোলাপগঞ্জ উপজেলার লনাবন্দ ও লীপাশা ইউপি চেয়ারম্যান এবং বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান সহ কয়েক দফা বৈঠক করে অপহরনকারী হিসেবে অভিযুক্ত কবিরের বাবাকে চাপ প্রয়োগ করেন খালেদকে ফেরত পেতে। প্রথমে কবিরের বাবা অপহরনের ঘটনা অস্বীকার করে কবিরকে তাদের সামনে আনার ব্যাপারে রাজী হলেও পরবর্তীতে বিষয়টি ভিন্নখাতে নেওয়ার পায়তারা চালায়। এই ঘটনায় খালেদ ও জহিরের পরিবার মামলা দায়েরের করতে চাইলে সিলেট কতোয়ালী ও বিয়ানীবাজার থানার ঠেলাঠেলীতে মামলা নেয়নি কোন থানা। অবশেষে ঘটনার ৪দিন পর হতভাগা খালেদের লাশ পাওয়া যায়।
খালেদ হত্যায় সর্বত্র ােভ: মেধাবী ছাত্র খালেদকে অপহরন করে হত্যার ঘটনায় গোলাপগঞ্জ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। খালেদের সহপাঠী ও এলাকাবাসীরা অপহরনকারী কবির ও তার সহযোগীদের শ্বাস্তি দাবী করে অবরোধ কর্মসূচী পালন করেছে। দাড়ীপাতন পশ্চিম পাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী ইসলাম উদ্দিন জানান, খালেদ অত্যন্ত ভদ্র ও ৫ওয়াক্ত নামাজী ছিল। খালাতো ভাই জহির ও সে একত্রে চলাফেরা করতো। সেই ছেলের এরকম পরিনতি কেউ মেনে নিতে পারছেনা।