সিলেট বিভাগে ৬ নভেম্বর থেকে লাগাতার পরিবহন ধর্মঘট
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট বিভাগ পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগ্রাম কমিটি গঠন উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, সিলেট বিভাগের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কোনো অপশক্তির রক্তচক্ষুকে ভয় পায় না। অতীতের মতো ন্যায়সংগত দাবি আদায়ে আমরা অটল, আমরা অবিচল। আমাদের ৭ দফা দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত কোনো পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঘরে ফিরে যাবে না, ফিরে যেতে পারে না। ৭ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সিলেট বিভাগে আহুত অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট সফলের লক্ষ্যে বিভাগীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে কদমতলিস্থ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল প্রাঙ্গনে গতকাল সোমবার দুপুরে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট ‘সিলেট বিভাগ পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগ্রাম কমিটি’র আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি জমির আহমদের সভাপতিত্বে ও হবিগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সজিব আলীর পরিচালনায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক।
বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাবিব হোসেন চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চেয়ারম্যান, হবিগঞ্জ মটর মালিক গ্র“পের সভাপতি ফজলুর রহমান চৌধুরী, সহ-সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ময়না মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রশিদ উদ্দিন আহমদ, মৌলভীবাজার জেলা মিনিবাস মালিক গ্র“পের সদস্য সচিব আশুক আহমদ, সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি তেরা মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক রকিব উদ্দিন রফিক, সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম, হবিগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি কাজী মলাই মিয়া, সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহার উদ্দিন, সুনামগঞ্জ ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. নূর উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান ওদদু, লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট কোম্পানির চাকুরীচ্যুত পরিবহন শ্রমিক নেতা খালেদ আহমদ, শ্রমিক নেতা শামসুল হক মানিক প্রমুখ।
কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা ইমা-লেগুনা-হিউম্যান হুলার মালিক সভাপতির মামুনুর রশীদ ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন রুনু। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফেজ হেলাল আহমদ। সভার শুরুতে উপস্থাপক সজিব আলী ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢালাওভাবে সিএনজি ফোরস্ট্রোক ও ইমা-লেগুনার নতুন রোড পারমিট ইস্যু এবং অবৈধ ইমা, লেগুনা ও ফোরস্ট্রোক চলাচল বন্ধ, সামনের সিলেট যাত্রী না বসিয়ে বিধি অনুযায়ী সিলেটে চলাচলরত ফোরস্ট্রোকসমুহে নির্ধারিত মাত্রায় যাত্রী পরিবহন, গ্রিলের বেষ্টনি দিয়ে প্রতিটি ফোরস্ট্রোক চালকের নিরাপত্তা বিধান, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মহাসড়কে ত্রি-হুইলার এবং নছিমন, করিমুন, সেলু ইঞ্জিন চালিত ভটভটি ও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ইত্যাদি অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধ, বেআইনীভাবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের উপর পুলিশী নিযার্তন ও গাড়ি রিক্যুইজিশনের নামে অহেতুক হয়রানি বন্ধ, গত ১৮ ও ২১ অক্টোবর বিনাকারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের উপর পুলিশের গুলিবর্ষণকারী দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মো. মুরসালিনসহ দোষী পুলিশ সদস্যদের অপসারণ ও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সিলেট বিভাগের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া যত্রতত্র স্থাপিত অবৈধ গতিরোধক বাঁধ অপসারণ, প্রতিটি জেলার আঞ্চলিক পরিবহন কমিটিতে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্তকরণ, ছাতকের লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে অন্যায়ভাবে বরখাস্তকৃত পরিবহন শ্রমিকদের পুনর্বহাল, সিলেট বিভাগে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রিলার ও ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ এবং প্রতিটি জেলায় ১টি করে ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন।
উত্থাপিত দাবিসমুহের সাথে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ একমত পোষন করেন এবং এ দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ৬ নভেম্বর থেকে সিলেট বিভাগে লাগাতার পরিবহন ধর্মঘট শুরুর দাবি জানান।
সভা শেষে এ সব দাবি বাস্তবায়নের জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।