মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! একটু ভেবে দেখুন
আবু মালিহা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি ড. মাহবুব উল্লাহ সাহেবের উপর দুস্কৃতকারীদের অতর্কিত হামলা এবং তাকে নাজেহাল করা নিয়ে দেশের সর্বত্র ক্ষোভ এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তার অপরাধ ছিল ব্যারিষ্টার মওদুদ সাহেবের একটি বইয়ের প্রকাশনা উপলে অনুষ্ঠান স্থলে হাজির হয়ে বইটি সম্পর্কে তার মন্তব্য এবং বক্তব্য পেশ করেছিলেন। হতে পারে কোন রাজনৈতিক পরিভাষা ব্যবহার দোষণ দোষে দুষ্ট ছিল, তবে বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্ত ভাষণ বা চর্চা অহিতকর বলে কোন বিদ্বেষ সুলভ প্রতিক্রিয়ায় সন্ত্রাসী আচরণ কোন সভ্য জাতির ভাষা হতে পারেনা। আমরা সভ্যতার দাবিদার বলে বিশ্বময় চেঁচিয়ে বেড়াচ্ছি যখন তখন। এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চা বা গণতন্ত্রের লেবাস পরে গণতন্ত্রকে সমুন্নত করার সবক দিচ্ছি বিশ্বকে। এমন প্রচার প্রচারণা প্রতিনিয়তই খয়ের খাঁ চ্যানেল গুলোর মাধ্যমে বিরামহীন প্রচারণার খই ফুটিয়ে তুলছি। এবং পরমত সহিষ্ণুতার দেদার ছবক দিচ্ছি যত্রতত্র। অথচ আমার দলের বিরুদ্ধে বা আমার ব্যক্তিগত বা দলের প্রসঙ্গে কোন বিছুর সমালোচনা শুনলেই পিত্ত জ্বলে যায় এবং তৎণাত ডাইনী ছুরতে প্রতিপরে উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। এহেন আচরণ তো জংলী হিংস্র পশু সম। কোথায় গণতন্ত্র, কোথায় মানবাধিকার! সবই যেন ফক্কিকার! নিজের নামে সবই দুরস্ত! বাকি সব গরল ভেল। আমরা বাংলাদেশীরা আর কত দিন বিশ্বের কাছে নিজেদের রাজনৈতিক শিস্টাচার ধরে রাখতে পারব, তা সময়ই বলে দেবে। এ আশংকা যেন দূর হয় তাই কামনা করি। কিন্তু যে ভাবে রাজনৈতিক আবহাওয়া দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে, তাতে মনে হয় যেন… অন্ধকার গহবর হাতছানি দিয়ে ডাকছে! কথায় বলে, ‘রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট, প্রজা কষ্ট পায়’- আমরা যেন সেই অন্ধকার প্রহরেই দ্রুত ধাবমান হচ্ছি। এক ব্যক্তির ইচ্ছের কাছে সবই বলি হচ্ছে। আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি, গণতন্ত্র, অর্থনীতি, সমাজনীতি, পরিবেশ নীতি এনকি সর্বেেত্র একজনের ব্যক্তিগত খায়েশের নীতিমালা চালু করা বা তাই প্রতিষ্ঠা করা যেন দুর্দমনীয় স্বৈরাচারের ভূমিকাকে স্পষ্ট করে দিচ্ছে দিনে দিনে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্বাসনে পাঠিয়ে অস্থিতিশীল রাজনীতি পরিচালনা প্রতিপরে রাজনীতি ঘায়েলের একটা মওকা সব সময়ই নিজের দুরাচারী চিন্তা চেতনার প্রভাব জারি রাখতে রাজনীতির অপকৌশলকেই হাতিয়ার হিসেবে নিজেকে মতা ধরে রাখার চিন্তায় বুঁদ হয়ে আছে। দেশের ষোল কোটি জনগণ না চাইলেও আমাকেই থাকতে হবে মতার মসনদে। কেননা গোটা দেশের আমিই একমাত্র ধনন্তরী ‘গণতন্ত্রের মানস কন্যা’- অতএব আমি ছাড়া এ দেশের আর কেউ জাগীরদার নয়।
প্রসঙ্গটি তুলে ধরেছিলাম ড. মাহবুব উল্লাহ সাহেবের বিষয়ে। শুধু মাহবুব উল্লাহ কেন, অনেক সুস্থ্য ধারার বুদ্ধিজীবীদের নিয়েও তারা এরকম আচরণই করে। বিশেষ করে ইসলামপন্থী মানুষদের বেলাও তো তারা খড়গ হস্ত। কেউ যদি কোরআন সুন্নাহর মর্মবাণী তুলে ধরে রাজনীতির অঙ্গনে সুস্থ্য ধারার রাজনীতি এবং ইসলামী মূল্যবোধের রাজনীতির প্রভাব বলয় সৃষ্টিতে কোন নৈতিকতা পূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরা হয় তখনই সেখানে তথাকথিত ‘জঙ্গী’ খোঁজার অপচেষ্টা করা হয়। মনে হয় যেন মস্তিষ্ক বৈকল্যতার মত এক ধরনের ব্যধি। কোনক্রমেই ইসলামী চেতনা ধারণ করার হৃদয় মন উপযুক্ততা থাকেনা। এমন আচরণ তো হেদায়াতহীন মানুষের বেলায় যুক্তিযুক্ত। কোন ইসলাম প্রিয় মানুষের মানসিক অবস্থা এমন হবার কথা নয়। দেশের ৯০ শতাংশ জনগণের ইসলামী চিন্তা চেতনা বিদ্যমান। ধর্মীয় পরিবেশ এবং ধর্মানুকুল্যে জীবন যাপন করা তাদের মৌলিক চেতনা। সেই চেতনাকে ধ্বংস করার হীন অপচেষ্টা যে কোন প থেকেই করা হোকনা কেন তা কেউ বরদাশত করবেনা। কিন্তু হালে আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় যারা আছেন তাদের গতিবিধি যেন এমনতরো ভাব পরিলতি হয়। তাদের অসাম্প্রদায়িক লেবাসের আড়ালে ধর্মহীন পরিবেশ সৃষ্টিতে সদাই তৎপর থাকতে দেখা যায়। বিশেষ করে সরকারী মহলের এমন কিছু লোক বা মন্ত্রী-মিনিষ্টার আছেন যারা নিজেদেরকে এ ব্যাপারে অগ্রসর ভূমিকায় প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত থাকেন। হালে এমনি ধরনের বক্তব্য দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছেন মন্ত্রি আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। গোটা মুসলিম বিশ্বের জনগণের হৃদয়ে আঘাত দিয়েছেন ‘হজ্বের’ বিরুদ্ধে ব ক্তব্য দিয়ে। ইসলামে পাঁচটি রুকনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘হজ্ব’। সুস্থ্য সামর্থবান ঈমানদার ব্যক্তির হজ্বব্রত পালন করা অবশ্য কর্তব্য বা ফরজ। এহেন হজ্বকে অস্বীকার করে নিজেকে ‘মুরতাদের’ কাতারে শামিল করেছেন বলে উলামা মাশায়েখরা তীব্র প্রতিবাদে বক্তব্য দিয়েছেন। এতে সারা বিশ্ব ফুঁসে উঠেছে তার এহেন বক্তব্যের জন্য। এত কিছু ঘটনার পরও শেখ হাসিনার সরকার তার বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। মনে হচ্ছে যেন এ আর এমন কি! এটা তার বাক স্বাধীনতা! কেন জানি মনে হয়, এ ধরনের কুলাঙ্গার শ্রেণীর মানুষ দিয়ে বর্তমান সরকারের মন্ত্রীসভা গঠন করা হয়েছে, যাতে ইসলামের বিরুদ্ধে এ সমস্ত আ চরণ স্বাভাবিকভাবে করার জন্যই। কেননা তারা তো মনে করে ‘ধর্ম একটি আফিম’- তাদের ওস্তাদদের বলে দেয়া তথ্যকেই তারা নিজেদের জীবনের কর্মকানড পরিচালনার জন্য দীা নিয়েছে। দেশ হতে হবে ধর্মমুক্ত আর জাতি হতে হবে অসম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ। পাশাপাশি ধর্মনিরপেতার ধ্বজাধারী। কিন্তু যত কিছুই করুন না কেন এদেশের জনগণ সময়মত ঠিকই জবাব দিবে বর্তমান সরকারকে। তারা ‘ব্যালট’ এর পরিবর্তে ‘বুলেট’ দিয়ে দেশ শাসন করছেন, এ সুযোগ সব সময় থাকবেনা। নমরুদ, ফেরাউন, হাম্মাদ এর মত বহু দুর্ধর্ষ স্বৈরাচারী জালিমদেরও পতন ঘটেছে। শেখ হাসিনা তো নস্যি! এ আর তেমন কি। দেশের জনগণের যখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে তখন বুলেটের ভয় আর থাকেনা নিজেদের অস্তিত্ব রায় সর্বস্তরের জনগণ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়বে। ধীরে ধীরে জনগণের ক্রোধ ও ােভ বঙ্গপোসাগরের জলোচ্ছ্বাসের মত যখন ধেয়ে আসবে তখন আর কেউ রা করতে পারবেনা। মহান আল্লাহ এ জাতিকে সবর ধরার তৌফিক দিচ্ছেন মহাকালের প্রত্যাশায়। যখন সমস্ত জুলুমবাজদের আস্তানা হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। নিদর্শন হয়ে থাকবে যুগ যুগ কাল ধরে। ইসলামের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কালেই কোন আল্লাহদ্রোহী টিকে থাকতে পারে নাই। বাংলাদেশের জমিনেও সে সমস্ত খোদাদ্রোহী গোষ্ঠী টিকে থাকতে পারবেনা। আমরা বিশ্বাস করি দেশের জনগণ খুবই শান্তশিষ্ট এবং আইন শৃংখলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সহজ সরল জীবন বোধের এ সমস্ত জনগণকে কষ্ট দিয়ে জাতির ভাগ্য উন্নয়ন করা যায় না। আপনারা জাতির সাথে দেয়া ওয়াদা খেলাপ করে স্বৈরাচার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, যা জাতির জন্য অনাকাঙ্খিত হুঁশ বদ্ধি থাকতে জাতির কাছে মা চেয়ে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে শিখুন। আর জাতির চাপা কান্না ও ােভ বুঝতে চেষ্টা করুন, নইলে ভবিষ্যত পরিণতির জন্য নিজেরাই দায়ি থাকবেন। তখন আফসোস করে কুল-কিনারাও পাবেন না। এদেশের বুদ্ধিজীবি সহ সকল পেশা শ্রেণীর মানুষকে সম্মান দেখাবার চেষ্টা করুন এবং দেশ জাতির স্বার্থ রায় আত্মনিয়োগ করুন। কেননা ইতোমধ্যেই দেশের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন। এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে দুর্নীতির ‘সুনামী’ ঘটে নাই। সরকারী আমলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পর্যন্ত আপনারা দলীয়করণের মাধ্যমে নজীর বিহীন স্বেচ্ছাচারিতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। গণতন্ত্র ও স্বাধীন নির্বাচন এখন যন্ত্রণার কারাগারে বন্দী। তাকে অবমুক্ত করার দায়িত্ব আপনাদেরই। আজ আপনারা দেশের এমন সব রাজনীতিক ও আলেম ওলামা সহ যাদের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত তাদেরকে কারারুদ্ধ করে যে জুলুম নির্যাতনের ষ্টিম রোলার চালাচ্ছেন এবং নিরপরাধ ব্যক্তিদের জেল জুলুম দিয়ে অমানবিক ও দেশদ্রোহী আচরণ করছেন, সে সমস্ত বন্ধ করে এদের মুক্ত করে দিন। হয়তো বা এদেশের উপর আল্লাহর রহমত ফিরে আসতে পারে। যদি তা না করেন তবে অবশ্যই অপো করতে হবে সেই ঘোর দুর্দিনের যা ইতিহাস স্ব্যা হয়ে থাকবে।
অতএব তা আসার আগেই আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এ কামনা গোটা দেশবাসীর। দেশের জনগণের ভালবাসা ও সম্মান নিয়ে দেশ পরিচালনার জন্য স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করুন। দেখবেন জাতি আপনাদের মাথায় তুলে রাখবে। যেমন রেখেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট বিচারপতি শাহাব উদ্দিন আহমদ। যাকে পরবর্তীতে আপনি বিশ্বাসঘাতক বলেছিলেন। আসলে তিনি বিশ্বাসঘাতক ছিলেন না। তিনি ছিলেন সমস্ত জনগণের বিশ্বাসভাজন এবং শ্রদ্ধার পাত্র।
পরিশেষে বলতে চাই, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে। আপনাদের বোলচাল তারা আর আগের মত গ্রহণ করে না। সরকারীভাবে মতায় থাকলে সবাই স্তুতি বাক্য প্রেরণ করে। কিন্তু পা পিছলে পড়ে গেলেই তখন সবাই যার যার মত আচরণ করে। আপনার পিতাও মতার দর্পে জনগণকে তোয়াক্কা না করে যা ভুল করেছিলেন, তার খেসারতের স্বাী আপনি নিজেও। অতএব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই বলতে চাই, জাতির কান্না বুঝতে চেষ্টা করুন, ইসলামপ্রিয় জনগণের আবেগকে বুঝতে চেষ্টা করুন এবং নাস্তিক মুরতাদদের সঙ্গ ছাড়ুন, দেখবেন জাতি আপনাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করবে এবং আন্তরিকতা ও ভালবাসা পুনঃনির্বাচিত করবে। সবচেয়ে বড় কথা আল্লাহকে ভয় করুন এবং জাতির ইসলামী সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করুন, হয়তোবা আমরা সবাই আল্লাহর গজব থেকে রেহাই পাব ইনশাআল্লাহ। আমার সব শেষ আবেদন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশ জাতির স্বার্থে একটু ভেবে দেখুন।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিষ্ট। মোবা: ০১৭১৬৮৯৫৮২২