ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের প্রেরিত সেবায় উপকৃত নবীগঞ্জ ৮ নং সদর ইউনিয়নবাসী
উত্তম কুমার পাল হিমেল,নবীগঞ্জ থেকেঃ অবাধ তথ্যপ্রবাহ জনগনের ক্ষমতায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। বিশেষ করে অনগ্রসর জনগনের মাঝে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের জীবন যাত্রার মানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়ন করা সম্ভব।তৃনমূল পর্যায়ে ব্যাপক জনগোষ্টীর মাঝে তথ্যসেবা পৌছে দিয়ে জনগনের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্টানের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র(ইউআইএসসি)স্থাপনের কার্যক্রম চালু করেছেন। ইউ আইএসসি হচ্ছে এমন একটির অত্যাধুনিক তথ্য সেন্টার(টেলি সেন্টার) যার মূল উদ্দেশ্য হলো তৃনমূল মানুষের দোরগোড়ায় তথ্যসেবা নিশ্চিত করা। এ সেবা চালুর শুরুতে তেমন একটা সাড়া না পাওয়া না গেলেও সময়ের সাথে সাথে দেশের প্রতিটি জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ই-তথ্য সেবা কেন্দ্র। সরকারের ডিজিটাল সেবা ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা নিয়ে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র চালু হয়। সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের মূল লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশের সকল মানুষের মাঝে উন্নত সেবা নিশ্চিত করা। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে বাংলাদেশকে আরো বেশী উন্নত আরো বেশী গতিশীল এবং আরো বেশী সংবেদনশীল করাই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য। বিষয় বা ব্যক্তি বিশেষে এর ব্যাখ্যাও ভিন্ন হতে পারে। একজন ছাত্রের কাছে তার উন্নত মানের শিক্ষা পাবার নিশ্চয়তা,একজন কৃষকের কাছে সহনশীল বাজারের নিশ্চয়তা,একজন রোগীর কাছে দীর্ঘ লাইনে না দাড়িয়ে সুচিকিৎসা না পাবার নিশ্চয়তা,একজন পেনশন ভোগী,একজন মুক্তিযোদ্ধা ও একজন বিধবার কাছে তাদের পেনশনের টাকাটা সময়মতো স্বচ্ছতার সাথে পাওয়ার নিশ্চয়তা অর্থ্যাৎ প্রতিটি মানুষের চাহিদামতো তার দোরগোড়ায় আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভাব্য সেবা পৌছে দেওয়ার সুযোগই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ।একেবারে গ্রামাঞ্চলের মানুষ যেন নাগরিক অধিকার ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিসেবা থেকে বঞ্চিত না হয় এ বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্যই সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ তথ্যেেসবা কেন্দ্র চালু করেছেন। বর্তমান যুগ মিডিয়া বিপ্লবের যুগ ,এখন মানুষ নিমিষেই দেশের যেকোন স্থানের যেকোন সংবাদ খুব দ্রুত জানতে পারে এ তথ্যসেবার মাধ্যমে। টেলিভিশন,রেডিও এবং ইন্টানেটের মাধ্যমে খুব দ্রুত আদান-প্রদান হচ্ছে সংবাদসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সকল তথ্য। এ সেবা থেকে যেন কোন নাগরিক বঞ্চিত না হয় এ উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে এসব তথ্যসেবা কেন্দ্র।
নবীগঞ্জ উপজেলার ৮ নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবাকেন্দ্র থেকে অনেকেই বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন।
সরজমিনে পরিদর্শনকালে এমন চিত্র দেখা গেছে। জনগনের খুব কাছাকাছি তথ্যসেবা নিশ্চিতকরতে এ ইউনিয়নে ২০১২ সালে চালু করা হয় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র। এখান থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষ অনায়াসেই বাড়ীর কাছে সুন্দর পরিবেশে জীবন জীবিকার সন্ধান ভিত্তিক অনেক তথ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা পেয়ে থাকেন। বিগত ২০১৩ সালে নবীগঞ্জ ৮ নং সদর ইউনিয়ন থেকে ১০৫৫ পুরুষ এবং ৫৫ জন মহিলা মালয়েশিয়া ও হংকং চাকুরীর জন্য আবেদন পাঠিয়েছেন। যদিও কারো চাকুরী পাবার কোন তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ ইউনিয়নে তথ্য সেবা কেন্দ্রের মধ্যে কম্পিউটার কম্পোজ,ই-মেইল,ইন্টানেট,কম্পিউটার প্রশিক্ষন,বিভিন্ন সরকারী ফরম পূরন,পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ,জমির খতিয়ানের জন্য আবেদন ও সরবরাহ,মোবাইল ব্যাংকিং,ফটোকপি,ভিডিও প্রদর্শনী,স্কুল,কলেজ মাদ্রাসার এমপিওভুক্তির তথ্য,সরকারের বিভিন্ন বিভাগের তালিকা ও কর্মপরিধি,ভিজিএফ,ভিজিডি প্রাপ্তদের তালিকা,পরিসংখ্যান বুরে্যা এবং বিভিন্ন জরিপ,জন্ম নিবন্ধন,ভোটার তালিকা হালনাগাদকরন,নাগরিকত্ব সনদপত্র প্রদানের কাজ অন্যতম। এসব কাজ করে এ ইউনিয়নের অনেকেই উপকৃত হয়েছেন।
এ ইউনিয়নের বাসিন্ধা হাফিজ উদ্দিন বলেন,এ ইউনিয়ন অফিসের তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে সহজেই মালয়েশিয়ার নিয়োগের আবেদন পূরন করেছি। ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু থাকলে অনেক লোক বিভিন্নভাবে উপকৃত।
সনজয় রায় জানান,এখনও এ ইউনিয়নের তথ্যসেবা কেন্দ্রে অনেক প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ঘাটতি রয়েছে। ছবি তোলার ক্যামেরা,রঙ্গিন ছাপা মেশিন,লেমোনেটিং মেশিনসহ আরো প্রয়োজনীয় সরঞ্জমাদি না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়।
ইউপি সচিব মোঃ আইনুল হক জানান, এ ইউনিয়নে যোগদান করার পর থেকে আন্তরিকভাবে মানুষকে সেবা প্রদানের চেষ্টা করছি। কিন্তু এ ইউনিয়নের অনেক লোকজন গরীব থাকায় সীমিত সাধ্যের মধ্যে প্রয়োজনের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হিমশিম খেতে হয়।
৮নং সদর ইউপি চেয়ারম্যান হাজ্বী আব্দুল মোক্তাদির চৌধুরী বলেন,ইউনিয়নবাসীকে যথাসাধ্য ত্বরিত গতিতে সেবা দেওয়া চেষ্টা করি। এ ইউনিয়নে সরকারী বরাদ্দ ও সাহায্য প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এর মধ্যে গরীব ও দিনমজুরের সংখ্যা বেশী হওয়ায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে সরকারী বরাদ্দ ও সহযোগীতা বৃদ্ধি করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।