সুনামগঞ্জে ৩ বছরে নৌ-দুর্ঘটনায় ৯৪ জনের মৃত্যু
কামাল হোসেন, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : মানুষের ৫ টি মৌলিক চাহিদার সবকটি থেকে বঞ্চিত আর পিচিয়ে পড়া আমাদের এই সুনামগঞ্জ জেলা। নদী-নালা খাল-বিল ও হাওর বাওর বেষ্টিত আমাদের এই বাংলা দেশ। বর্ষায় নাও হেমন্তে পাও তাই এই প্রবাদটি সার বাংলা দেশের মানুষের জীবনের সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িত থাকলেও সুনামগঞ্জ জেলার সবকটি উপজেলার সাথে উৎপ্রতভাবে জড়িত। তাই ভাটির জনপথ ও হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলার সবকটি উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ না থাকার কারণে সারা বছর ওই নদী পথে এ অঞ্চলের মানুষ আর মালামাল পরিবহনের একমাত্র ভরসা। আর একারণেই হাওরাঞ্চলের হাওর ও নদী পথে বর্ষার মৌসুমসহ ও সারা বছরেই মানুষ ও মালামাল পরিবহনের একমাত্র ব্যবস্থা হিসাবে যুগযুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ইঞ্জিন চালিত বেশির ভাগ কাঠের তৈরি নৌকা। তবে নদী পথে সারা বছর এই সব কাঠের তৈরি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে সময় অসতর্কতা,অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও ত্র“টিযুক্ত ট্রলার চলাচলের কারনে ২ বছর ৯ মাসের মধ্যে ১৬টি নৌ দুর্ঘটনায় ৯৪জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য গরিব,অসহায় হাওরাঞ্চলের শ্রমিজীবি মানুষ। এই ১৬টি নৌ দুর্ঘটনা কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ঘটে নি। ঘটেছে অসতকর্তা,অতিরিক্ত যাত্রী বোঝায়,নিদিষ্ট নৌ যান আইন না মানা ও ত্রুটির্পূন ট্রলারের করনেই অধিকাংশ নৌ দুর্ঘটনা ঘঠেছে। হাওরাঞ্চলে রাতে নৌ চলাচল বন্দ্ব থাকার কথা থাকলেও সে আইন মানছে না নৌ যান চালক ও মালিক গন। সেই সাথে দেখছেন না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সড়ব না হয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছেন। রাতে নৌ যান চলাচল করার সময় সিগনাল লাইটও ব্যবহার করেন না নৌ শ্রমিকরা। দুর্ঘটনার পর জেলা ও উপজেলা প্রর্যায়ে উদ্বার কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় উদ্বার কাজ সুষ্টভাবে সম্পন্ন হয় না। আর উদ্বার কাজের যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় জনবল,সরঞ্জাম দূর্ঘটনা স্থলে আসার আগেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বেড়ে যায়। আর এই সব ভাঙ্গাচুরা ত্রুটিপূর্ন কাঠের তৈরি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝায় করে চলাচল করছে হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলা সহ বিভিন্ন উপজেলায় নদী পথে ও হাওরাঞ্চলে। এ সব বিষয় ও যাত্রীবাহী নৌ যান চলাচলে আইন মান্য হচেছ কি না তা বিআইডব্লিটি এর দেখার কথা থাকলেও তারা নিরব রয়েছে। এ দিকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিচেছ না কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও দিচেছন না কোন সু-দৃষ্টি। দূর্ঘটনা ঘটলেই কেবল শুরু হয় দৌড়যাপ আর উদ্বার তৎপরতা। যার ফলে হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলায় গঠে গেছে ১৬টি নৌ দূর্ঘটনা। জানাযায়,২০১২ সালের ৪ আগষ্ট র্ধমপাশা উপজেলার সোনা মড়ল হাওরে ট্রলার ডুবিতে ৪ যাত্রীর প্রান হানী ঘটে। একই বছর ১১ই জুন সুনামগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার উজান রামনগরে যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে ১ জনের মৃত্যু ঘটে। ১০ই ফ্রেরুয়ারী জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা ও ধর্মপাশা উপজেলার মাঝা মাঝি স্থানে ট্রলার ডুবে ৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১১ সালের ২৮ সেপ্টেম্ভরে জামালগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর গ্রামে ট্রলার ডুবে ৫ শিশুসহ ৮ যাত্রীর প্রানহানী ঘটে। একেই বছরের ২৬ জুন সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাট নদীতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝায় করে পাড়াপাড় করার সময় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর মৃত্যু ঘটে,আহত হয় আরো ৫ জন। ২০ জুলাই জেলার সুরমা নদী পাড়াপাড়ের সময় নৌকা ডুবে মারা যায় ছাতক উপজেলার এক ইউপি সদস্য। একেই বছরের ১৬ই সেপ্টেম্ভরে সুনামগঞ্জ জেলার কাঠরই নদীতে বর যাত্রী বাহী নৌকা ডুবে নববধু সহ ২ জনের মৃত্যু ঘটে, আরো আহত হয় ৫ জন। একেই বছরের ১৮ ডিসেম্ভর জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাকঁ ইউনিয়নের ধনু নদীতে বাল্কহেড ও ট্রলারের মুখোমুখি সংর্ঘষের ঘটনায় ৪০ জনের মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনায় আহত হয় ২৫ জন। ২০১৪ সালের ৩ ফ্রেরুয়ারী সুনামগঞ্জ জেলার সব চেয়ে ভয়াবহ মর্মন্তিক দূঘটনা গঠেছে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক ও দোয়ারা বাজার উপজেলার লক্ষীবাউর – দোহালিয়ায় সুরমা নদীতে নৌ অগ্নীকান্ডের ঘটনায় আগুনের পুড়ে নিহত হয়েছে শিশু সহ ১২জন। আহত হয়েছে ৪০ জন। চলতি বছরের ২০১৪ সালের ২৮ ফ্রেবরুয়ারী তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী পাঠলাই নদীতে খেয়া পারা পারের সময় ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছারাও তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে নৌকা ডুবে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২২ জুন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পাঁতারগাঁও সেতুর পাশে নৌকা ডুবিতে মা,ছেলে এবং নানী ৩ জন নিহত হয়েছে। ৭জুলাই সোমবার সুনামগঞ্জের মল্লিকপুরের সুরমা ব্রীজের নিচে নোঙ্গর করা অবস্থায় ভোর রাতে বালুভর্তি ভলগেট নৌকা ডুবে ৩জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২০জুলাই রবিবার জেলার মধ্য নগর থানার গোমাই নদীতে ট্রলার ও নৌকার মুখমুখী সংঘর্ষে এক স্কুল শিক্ষক পানিতে ডুবে নিহত হয়েছে। এবং গত ২২ জুলাই মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীতে বালুবাহী ভলগেট নৌকার দাক্কায় একটি যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে ২ জনের মৃত্যু সহ ছোট বড় ১৬ নৌ-দূর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন স্থানে যাতায়ত করে সেই সব ইঞ্জিন চালিত নৌকায় যেমন থাকে যাত্রী তেমনি থাকে বিভিন্ন প্রকার মালামাল ও পন্য সামগ্রী। এই সব পন্য সামগ্রী ও মাল বোঝাই থাকার কারনে যুকিপূর্ন হয়ে পরে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে যাতায়ত ব্যবস্থা। হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলায় বর্ষার মৌসুমে একমাত্র পরিবহন ব্যবস্থা ইঞ্জিন চালিত কাঠের নৌকা ও অল্প সংখ্যক ষ্টিলের নৌকা। ইঞ্জিন চালিত কাঠের ও ষ্টিলের নৌকা যাত্রীবাহী ট্রলার চলাচল বন্দ্ব করা যাবে না,তবে নৌ যান যান চলাচলের যে নিয়ম নীতি আছে তা মানার জন্য নৌ যান যাত্রী,মালিক,শ্রমিকদের কে সচেতনতার উদ্যোগ নেওয়া ও আইনের আওতায় এনে চলাচলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কারা দাবী জানান হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলাবাসী।