মায়ের অনৈতিক সম্পর্কে বাধা দেয়ায়….
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ মায়ের অনৈতিক সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় রাজধানীর ডেমরায় ছেলে কামরুজ্জামানকে (৩০) হত্যা করা হয়। ঘাতক মা মরিয়ম বেগমের পরিকল্পনাতেই তার প্রেমিক আজিজুল হক ও তার সহযোগীরা তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, এক বছর আগে মোবাইল ফোনে মিসড কলের মাধ্যমে মরিয়ম বেগমের সঙ্গে আজিজুল হকের যোগাযোগ হয়। স্বামী মো. আশোক আলী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য থাকায় আজিজুল হকের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন মরিয়ম।
মনিরুল ইসলাম বলেন, পরকীয়ার জের ধরে ডেমরায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানেই মিলিত হতেন তারা। গত রোজায় মরিয়মের ছেলে কামরুজ্জামান বিষয়টি টের পাওয়ার পর মায়ের সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত মরিয়ম ছেলেকে মেরে ফেলার দায়িত্ব দেন কামরুজ্জামানকে। তার কথা মতই গত ১২ আগস্ট চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন আজিজুল ও তার দুই সহযোগী।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘাতক মা মরিয়ম বেগম (৪৪), প্রেমিক আজিজুল হক (৫০), দুই সহযোগী তাফাজ্জল হোসেন (৬৫) এবং মঞ্জুরুল ইসলামকে (৫২) গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
ডিএমপি যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, হত্যার পর কামরুজ্জামনের স্ত্রী নূরজাহানের ওপর এর দায়ভার চাপানোর চেষ্টা করেন মরিয়ম বেগম। নূরজাহানের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ছিল। এনিয়ে ছেলে কামরুজ্জামানের সঙ্গেও মরিয়মের মিল ছিল না বলে জানান তিনি।
যেভাবে হত্যা করা হয় :
১২ আগস্ট সন্ধ্যায় মা মরিয়ম বেগম ছেলে কামরুজ্জামনকে অসুস্থতার কথা বলেন। বিষয়টি জানার পর তাকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে প্রথমে মরিয়ম আজিজুল হককে মোবাইলে কামরুজ্জামান হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা করছে বলে জানায়। কামরুজ্জামানকে আজিজুল আগে থেকেই চিনতেন। যদিও কামরুজ্জামান আজিজুলকে আগে কখনো দেখেননি।
ঘাতকদের উদ্ধৃতি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনায় মনিরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমান পাথর ব্যবসায়ী কামরুজ্জামনকে আগ বাড়িয়ে পাথর কেনার বিষয়ে কথা বলতে চান আজিজুল।
এ বিষয়ে কথা বলতে পাশে পার্কিং করা আজিজের মাইক্রোবাসে বসে আলাপের কথা বলেন তিনি। দুজন গাড়িতে উঠলে কামরুজ্জামানকে কফি খাওয়ার আবদার করেন আজিজুল হক। এসময় কফি পান করে কামরুজ্জামান অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
এসময় কামরুজ্জামান ধরাধরি করে আজিজের সহযোগী তাফাজ্জাল ও মঞ্জুরুল হক গাড়িতে তোলে সিটবেল্ট দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
এরপর কামরুজ্জামানের লাশ ডেমরা-চট্টগ্রাম রোডের শুকুরশি এলাকায় ফেলে যায় বলে ব্রিফিংয়ে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
মনিরুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ডের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে মুঠোফোনে মরিয়ম বেগমকে নিশ্চিত করেন আজিজ। এরপর নিহত কামরুজ্জামানের মা মরিয়ম বেগম তাদের সঙ্গে দেখা করেন।
চুক্তি অনুযায়ী হত্যাকারীদের ১০ হাজার টাকাও পরিশোধ করেন তিনি।
১২ আগস্ট রাতে ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞাত হিসেবে কামরুজ্জামানের লাশটি উদ্ধার করে ডেমরা থানা পুলিশ। পরদিন নিহতের বাবা আশোক আলী থানায় লাশটি সনাক্ত করেন। এরপর একটি মামলাও দায়ের করেন তিনি।