পুলিশ ও জনতাকে কামড়ে সাড়ে সাত লক্ষাধিক টাকা নিয়ে চিত্রনায়িকা নদী পালিয়েছে
সুরমা টাইমস বিনোদনঃ এক সময় অশ্লীল ছবিতে অভিনয়ের জন্য বিতর্কিত নায়িকা নদী এফডিসিতে বহু আগেই নিষিদ্ধ হয়েছেন। এরপর থেকে নানা কৌশলে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন একটি প্রতারক চক্র। এই চক্রে বেশ কয়েকজন তরুণী ও যুবক রয়েছে। নিজেকে চিত্রনায়িকা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করাই এখন নদীর পেশা। চিত্রনায়িকা নদী সম্পর্কে জানা গেছে, চলচ্চিত্র অঙ্গনে তিনি মূলত অশ্লীল ছবির অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত। তবে চিত্রনায়ক সাকিব খানের সঙ্গে ‘ব্যাডম্যান’, আমিন খানের সঙ্গে ‘নগ্ন হামলা’ ও প্রয়াত মান্নার সঙ্গে ‘তেজিপুরুষ’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। তবে আপত্তিজনক বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অভিযোগে প্রায় ৪ বছর আগে তাকে এফডিসিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপর থেকে প্রতারণাই হয়ে উঠেছে নদীর প্রধান জীবিকা। প্রতারণার নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তেমনি একটি প্রতারণার ঘটনায় বেরিয়ে আসে নদীর প্রতারণার নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গত শনিবার দুপুরে উত্তেজক পোশাকে মহাখালীর গুলশান লিংক রোডে মাল্টিপ্ল্যান স্পোর্টস নামে বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রীর একটি শোরুমে গিয়ে হাজির হয় নদী। নিজেকে পরিচয় দেন ব্যস্ততম চিত্রনায়িকা হিসেবে। বেছে বেছে কেনেন ৭ লাখ টাকার পণ্য। তারপর সেগুলো গাড়িতে তোলেন। এর মধ্যে গাড়িও পাঠিয়ে দিয়েছেন বাসায়। দোকানিকে জানালেন, তার কাছে নগদ টাকা নেই, আছে অনেকগুলো ডলার। সেগুলো ভাঙিয়ে দাম পরিশোধ করতে হবে। এজন্য কারওয়ান বাজার অথবা গুলশানে যেতে হবে। ড্রাইভারকে ডেকে এনে পাঠিয়ে দেন ডলার ভাঙাতে।
ততক্ষণে একটি প্রাইভেট কার এসে থামে ওই দোকানের সামনে। তাতে লাগানো ‘প্রেস’ লেখা স্টিকার। পাশে সাঁটানো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘বাংলাভিশন’-এর লোগো। ওই গাড়ি থেকে দুই যুবক নেমে শোরুমে ঢুকে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলে, ‘ম্যাডাম একটু ঝামেলা হয়েছে। সাত রাস্তার মোড়ে আপনার গাড়ির চাকা পাংচার হয়েছে। ড্রাইভার টাকা নিয়ে আসতে পারছে না।’
নদী তখন দোকানের ব্যবস্থাপকের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাইলেন। ওই টাকা হাতে পেয়েই হঠাৎ শোরুম থেকে বেরিয়ে ‘প্রেস’ লেখা গাড়িতে ওঠে পড়েন নায়িকা। এরপর রং-সাইড দিয়েই দ্রুতগতিতে গাড়িটি পালানোর চেষ্টা করে। দোকানের কর্মচারীরা ছিনতাইকারী বলে চিৎকার করে ধাওয়া করেন। গুলশান-১ নম্বরে কর্মরত ছিলেন এসআই আবদুল বারেক ও এসআই আবদুল মান্নান। তারা গাড়িটি থামাতে সক্ষম হন।
অবস্থা বেগতিক দেখে নদী গাড়ি থেকে নেমে যান। এ সময় পুলিশ ও উপস্থিত জনতার মধ্যে কয়েকজন তার হাত ধরে আটকানোর চেষ্টা করেন। এ পরিস্থিতিতে নদী হঠাৎ করে যাকেই সামনে পাচ্ছিলেন তাকেই কামড়াতে শুরু করেন। কামড়ের ভয়ে পুলিশসহ অন্যরাও পিছু হটে যায়। সেই ফাঁকে অন্য একটি গাড়িতে উঠে পালিয়ে যান নদী। ভিড়ের মধ্যে সটকে পড়ে তার গাড়িচালকও। তবে পুলিশ টিভি চ্যানেলের লোগোসহ গাড়িটি আটক করে। আটক করা হয়েছে ‘ভুয়া সাংবাদিক’ পরিচয় দেয়া ওহিদুল ও ফারুককে।
গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার হওয়া দুই ব্যক্তি নিজেদের বাংলাভিশনের সাংবাদিক পরিচয় দিলেও কোনো পরিচয়পত্র দেখাতে পারেনি। পরে তারা বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন যে, এ দুজন ওই চ্যানেলের কর্মী নন। বাংলাভিশনের সংবাদ বিভাগের বেনজির আহমদ যুগান্তরকে জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে নিজেদের লোক পাঠিয়েছেন। যে নম্বরের গাড়ি উদ্ধার হয়েছে সেটি তাদের নয়। গ্রেফতার হওয়া দুজনের সঙ্গেও বাংলাভিশনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ওই লোগোটিও তাদের দেয়া হয়নি। পুরোটাই প্রতারণা।