ওবামার সাথে ছবি নেই : প্রধানমন্ত্রীর সেন্ট্রাল পার্কের অনুষ্ঠান বাতিলের সম্ভাবনা
বাংলাদেশ মিশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মধ্যে টানা পোড়েন
নিউইয়র্ক থেকে এনা: নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্পর্কের টানাপোড়েনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেন্ট্রাল পার্কের অনুষ্ঠান বাতিলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রদূত ড. এ কে মোমেন এনাকে ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ( নিউইয়র্ক সময়) জানান, আমি এখনো সিউর না প্রধানমন্ত্রী সেন্ট্রাল পার্কে যাবেন কি যাবেন না। তিনি বলেন, আমি যতদূদর জানি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানো হয়েছে, সেন্ট্রাল পার্কের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের লোকজন যাবে না। কারণ তারা আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে থাকবেন। অন্যদিকে জামায়াত এবং বিএনপির লোকজন সেন্ট্রাল পার্কে যাবে এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করবে। এ চেয়েও ভয়ঙ্কর তথ্য প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া হয়েছে, আমেরিকান সিকিউরিটি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সিকিউরিটি দিতে পারবে না। এই সুযোগে প্রধানমন্ত্রীকে জামায়াত- বিএনপির লোকজন অপমান করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীকে এমন বুঝানো হয়েছে যে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং প্রেসিডেন্ট রিগ্যানকেও হত্যা করা হয়েছে, আমেরিকান সিকিউরিটি থাকার পরও। সুতরাং সেন্ট্রাল পার্কে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়া নিরাপদ নয়। ড. মোমেন এনাকে বলেন, এগুলো সব হাস্যকর অভিযোগ। কারণ সেন্ট্রাল পার্কের ঐ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টসহ ৯টি দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধানরা ভাষণ দেবেন। শত শত ভিআইপ থাকবেন। তাদের সিকিউরিটি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন নয় কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিকিউরিটি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি স্বার্থন্বেষী মহল জড়িত। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এটি ছিলো বিরাট সম্মানের কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠান নিয়ে জামায়াত বিএনপি বিরোধিতা করেছিলো। তারা আয়োজদের ই-মেইল করেছিলো। সেই ই-মেইলে তারা উল্লেখ করেছিলো শেখ হাসিনা গণতন্ত্র হত্যাকারী এবং স্বৈরাচারী- অবৈধ সরকার। সুতরাং তাকে সম্মান দেয়া যাবে না। এখন দেখা যাচ্ছে জামায়াত- বিএনপি এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মধ্যে এই অনুষ্ঠান নিয়ে অন্যরকম ঐক্য রয়েছে। তিনি আরো বলেন, অনুষ্ঠানটি আয়োজক প্রবাসী বাংলাদেশীরা নয়। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক হচ্ছে গ্লোবাল সিটিজেন প্রপার্টিজ। এই অনুষ্ঠানে প্রায় ৬০ হাজার লোক উপস্থিত হবার কথা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভিআইপিরা থাকবেন। সেই অনুষ্ঠানে সিকিউরিটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝানো হচ্ছে। এনার আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী জানেন। তিনি এখানো সিদ্ধান্ত নেননি। উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী ২৫ তারিখ রাতে জাতিসংঘের বিভিন্ন অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রদূত ড. এ কে মোমেনের বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৪০ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রীর বই প্রকাশনার যে অনুষ্ঠান ছিলো তাও না হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এই বইটি প্রকাশ করার কথা ছিলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিন্তু মন্ত্রণালয় তা প্রকাশ করেনি। যে কারণে বই প্রকাশনার অনুষ্ঠান না হতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সাথে সম্পর্কের টানা পোড়েনের কারণেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বইটি প্রকাশ করেনি বলে জানা গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব স্থায়ী মিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাকে বলেছেন, এত দিন যেভাবে মিশন চললে আগামী সেইভাবে চলবে না। মিশন আপনার মত চলবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্থায়ী মিশনের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের কারণে ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ফাস্ট লেডি মিশেল ওবামার নৈশ ভোজে অংশ নিয়েছিলেন। অন্যান্য বছর এই ছবিটি পাওয়া গেলেও এবার সেই ছবিটি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়ায় ২০১৩ সালে ছবিটি ছাপিয়ে দিয়েছে। ছবিটি যে ২০১৩ সালের সেই ক্যাপশনও একটি মিডিয়া ছাড়া কেউ লেখেনি। এ নিয়ে চাতুরতার সাথে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ বিভ্রান্তি সৃষ্টি কার স্বার্থে তা নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অন্য একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর তথ্য দিয়ে বাংলাদেশে কোন কোন মিডিয়ায় প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়কে স্মার্ট লাগছে বলে যে সংবাদ ছাপা হয়েছে তাও সত্য নয়। কারণ তিনিতো ঐ সময় প্রধানমন্ত্রীর একেবারে সাথে ছিলেন না। সূত্র জানায়, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুধুই কুশল বিনিময় হয়েছে।
এদিকে অন্য আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলীর কারণে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান দীপু মনিও পররাষ্ট্র বিষয়ক একটি অধিবেশে যোগ দিতে পারেননি।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী দুপুরে তার হোটেল সুইটে আমেরিকান চেম্বার ও আমেরিকান বিজনেস কাউন্সিলের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। তিনি আমেরিকান বিজনেসম্যানদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানান। এ ছাড়াও তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা এবং কুয়েতের আমীর শেখ তামিম বিন হামিদের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক করেছেন।