শিবিরময় ছাত্রলের নয়া কমিটি : সভাপতি অবরুদ্ধ, সংঘর্ষে আহত ১০

Chhatrodol Leaderসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ নগরীতে হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে ছাত্রদলের রাজনীতি। জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নব-গঠিত কমিটি নিয়ে এই অস্থিরতা, নতুন করে বিদ্রোহ। দীর্ঘ একযুগ পর হঠাৎ করে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয় বৃহস্পতিবার। কমিটি ঘোষণার খবর সিলেট ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পরলে তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে। নগরীর প্রতিটি পয়েন্টে-পয়েন্টে ছাত্রদলের গ্রুপ-উপগ্রুপ সকলেই এক হয়ে যায় নতুন কমিটি ঘোষনাকে কেন্দ্র করে। গতকাল দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, রাস্তাঘাটে ছাত্রদল কর্মীদের আতঙ্ক ছড়ানো ও বিএনপি নেতা ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীর বাসায় জেলা ছাত্রদল সভাপতিকে অবরুদ্ধ করে রাখাসহ নানা ঘটনার জন্ম দেয় ছাত্রদলের নব গঠিত এই কমিটি।
সূত্রমতে, সিলেট ছাত্রদলের বিভিন্ন গ্রুপের নিয়ন্ত্রন হচ্ছে দুটি বলয় থেকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন অনুসারী ও দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলী বলয়ের নেতারা এসব গ্রুপ নিয়ন্ত্রন করেন। সদ্য জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা নিয়ে সিলেটে বিএনপি ও ছাত্রদলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রনকারী দুই বলয়ের সিনিয়র নেতারাও হতাশ- এমন তথ্য দলীয় সূত্রের। সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল গফফার ছাত্রদলের কমিটি বিষয়ে মন্তব্য করতে অনিহা প্রকাশ করেন। সাবেক সংসদ সদস্য দলের সিনিয়র নেতা দিলদার হোসেন সেলিম বলেন, কমিটি কি হয়েছে তা সময়ই বলে দেবে। আমি এ মুহুর্তে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে কিছু বলতে চাইনা।
মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জিয়াউল গনি আরিফিন জিলু জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক তাদের শেষ সময়ে একটি অগ্রহণযোগ্য বানিজ্যিক কমিটি ঘোষণা করেছেন। নতুন কমিটিতে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি যাকে করা হয়েছে সে গত ২/৩ বছর থেকে কোর্টে আইন পেশায় জড়িত, সাধারন সম্পাদক যাকে দেওয়া হয়েছে সে গত ৩ বছর থেকে রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছে। তবে মহানগরের সভাপতি যোগ্য হলেও সব মিলিয়ে দুই কমিটিই গ্রহণ যোগ্য হয়নি।
সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব অনুমোদিত জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের ৮ সদস্য করে ১৬ সদস্যের পৃথক দুটি কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নাজমুল হাসান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়। কমিটি ঘোষণার খবরে রাতেই উত্তেজনা ছড়ায় ছাত্রদলে। কমিটিতে স্থান পাওয়া কয়েকজন ও পদবঞ্চিত নেতারা কমিটি প্রত্যাখ্যান করে রাজপথে নামেন। শতশত নেতাকর্মী রাত সাড়ে ৯টা থেকে জড় হন সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। কমিটি প্রত্যাখ্যান করে তারা মিছিল-সভা ও ককটেল বিষ্ফুরন ঘটায় নগরীতে। রাত ১২টা পর্যন্ত নগরীতে বিরাজ করে উত্তেজনা। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী, ছাত্রদল নেতা, রেজাউল করিম নাচন, আহমদ চৌধুরী ফয়েজ, শাকিল মুর্শেদ। এদের মধ্যে জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটির সহ-সভাপতি আহমদ চৌধুরী ফয়েজ ছিলেন।
গতকাল শুক্রবারও কমিটি নিয়ে রাত পর্যন্ত বিরাজ করে ব্যাপক উত্তেজনা। নবগঠিত কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম দিনই বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা অবরুদ্ধ করে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাঈদ আহমদকে। বেলা ২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীর বাসায় তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে ছাত্রদল, সাপ্লাই গ্রুপের নেতাকর্মীদের সহায়তায় তিনি শাহরিয়ারের বাসা থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা আবার সাপ্লাইয়ে পৌঁছলে সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন। গতকাল শুক্রবার জুম’আর নামাজ আদায় করে সাঈদ আহমদ বিএনপি নেতা ডা. শাহরিয়ার হোসেনের হাউজিং এস্টেটের বাসায় যান। সাঈদ আহমদ ডা. শাহরিয়ারের বাসায় আছেন, এমন খবর পেয়ে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাফেক মাহবুব, শাকিল মুর্শেদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম নাচনসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ডা. শাহরিয়ারের বাসা ঘেরাও করে রাখে। এসময় তারা বাসা থেকে সাঈদ আহমদকে বের করে দিতে ডা. শাহরিয়ারকে অনুরোধ করেন। কিন্তু এতে তিনি রাজি হননি। এসময় ডা. শাহরিয়ারের স্ত্রী বাসা ঘেরাও করে রাখা বিক্ষুব্দ নেতাকর্মীদেরকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা সেখান থেকে না গিয়ে সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। পরে তারা হাউজিং এস্টেট রাস্তার মুখে এসে অবস্থান নেয়। ওই সময় মহানগর যুবলীগ নেতা রিমাদ আহমদ রুবেলের মালিকানাধীন ট্রাকসহ ৩/৪টি গাড়ি হামলার শিকার হয়।
নতুন জেলা কমিটির সহ-সভাপতি আহমদ চৌধুরী ফয়েজ বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদল গঠনের জন্য প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছেন তার সাথে সিলেট ছাত্রদলের নতুন কমিটি সাংঘর্ষিক। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় যে কমিটি ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করেছেন তারা নিজেরাই মেয়াদ উর্ত্তীণ। তিনি বলেন, ২ টি কমিটিতে ছাত্র শিবির থেকে আশা নেতাদের স্থান দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ছাত্র শিবির ওই কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি তৃর্ণমূল ছাত্রদলের নেতাদের সাথে। তাদের দাবি কমিটি নতুনভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন কমিটি ঘোষণা দেওয়া হবে। ছাত্রদলের তৃণমূল নেতাকর্মীর মতে ছাত্রশিবির ছেড়ে ছাত্রদলে আসা শিবির নেতারা হচ্ছেন আবু সালেহ মোহাম্মদ লোকমান, চৌধুরী মোহাম্মদ সুহেল, আবদুর রকিব ও এমদাদুল হক স্বপন। এদের মধ্যে আবু সালেহ মোহাম্মদ লোকমান হয়েছেন সিলেট মহানগর ছাত্রদলের নব ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক, আবদুর রকিব সাংগঠনিক সম্পাদক ও এমদাদুল হক স্বপন হয়েছেন সহ সাধারণ সম্পাদক এবং চৌধুরী মোহাম্মদ সুহেল পেয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতির পদ।
এদের মধ্যে লোকমান ছিলেন ছাত্র শিবিরের সামনের সারির নেতা। তার নেতৃত্বে ছাত্রদলের ওপর একাধিক হামলা চালায় শিবির। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ছাত্রদলের মামলা রয়েছে।
ছাত্রদল নেতাদের দাবি, ছাত্রশিবির থেকে আসা মুশফিকুল ফজল আনসারির মাধ্যমেই শিবির নেতারা নব ঘোষিত জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি পেয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদলের দু’টি কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসা চার সাবেক শিবির নেতার তিনজনই বিবাহিত এবং সন্তানের জনক।
নব-গঠিত জেলা কমিটি যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মখসুদ আহমদ জানান, দলের দূর্দিনে দলের জন্য রাজপথে আন্দোলন সংগ্রম করেছি। আশা করেছিলাম আরো ভাল পদ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, দলের জন্য শ্রম দিয়েছেন এমন অনেক ত্যাগী নেতাকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। সবার সমন্নয়ে একটি কমিটি হলে ভাল হতো। কমিটি খুব ভাল হয়েছে বলে মনে করিনা যোগ করেন তিনি।