জৈন্তায় গনধর্ষন নিয়ে ওসি হারুনের বানিজ্য : সচেতন নাগরিকের মানববন্ধন
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সম্প্রতি ইন্টারনেটে প্রাপ্ত একটি ভিডিও ক্লিপ নিয়ে জৈন্তাপূরে তোলপাড় চলছে। এরই সুবাদে বেড়ে গেছে জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি হারুনের বানিজ্য। হয়রানির শিকার হচ্ছেন এলাকার ধনাট্য ব্যাক্তি বর্গের স্কুল কলেজে পড়ূয়া ছাত্র থেকে শুরু করে ব্যাবসায়ী, চাকরীজীবি ও এলাকার নিরীহ যুবকেরা। এই হয়রানি থেকে বাদ যাচ্ছেন না পুলিশ পরিবারের সদস্যরাও। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় চার মাস পূর্বে সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র শ্রীপুরের পাশ্ববর্তী চাবাগানের নির্জন স্থানে প্রেমিক জুটি সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে বাগানের ভিতরে ওৎ পেতে থাকা স্থানীয় কিছু বখাটে ও ছিনতাইকারীদের কবলে গনধর্ষনের শিকার হন এক যুবতি। তাদের কোন একজন এই ধর্ষনের ভিডিওচিত্রটি মোবাইলে ধারন করে এবং পরবর্তীতে এই ভিডিওচিত্রটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। যা এলাকার আবাল বৃদ্ধ থেকে শুরু করে জৈন্তাপুর থানার সর্বস্তরের মানুষের নজরে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় ভিডিওচিত্রটি আসে জৈন্তাপুর মডেল থানার এএসআই মশিউরের মোবাইলে। পরবর্তীতে ভিডিওচিত্রটি ওসি সহ পুলিশ প্রশাসনের প্রায় সবার নজরে আসে। জৈন্তাপুর থানায় শুরু হয় ওসি হারুন ও এএসআই মশিউরের গ্রেফতার বানিজ্য। ভিডিও’র সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় জৈন্তাপুর আদর্শগ্রামের মনুমিয়ার পুত্র শাহজাহানকে। ধর্ষনের মামলায় গ্রেফতার করা হলেও তাকে আদালতে প্রেরন করা হয় ৫৪ ধারায়। যার পুরো চেহারাই ভিডিওচিত্রে প্রস্ফুটিত ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় জৈন্তাপুর থানায় শুরু হয় ওসি হারুন ও এএসআই মশিউরের গ্রেফতার বানিজ্য। ঘটনার মূল আসামীদের গ্রেফতার না করে; ধৃত আসামীকে ৫৪ ধারায় চালান দিলে মূল আসামীরা গা ঢাকা দেয়। ইতোমধ্যে ওসি হারুন গ্রেফতার করেন দেলোয়ার নামের এক ব্যাবসায়ীকে। পরে থানার দালাল চক্রের মধ্যস্ততায় ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে দফারফা করে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর গ্রেফতার বানিজ্যের শিকার হন হক মোল্লা, হাবিব, পুলিশপুত্র ইমরান ও মইন উদ্দিন। ওদের কাছ থেকেও মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে দফারফা করা হয়। এই ঘটনটিকে কেন্দ্র করে জৈন্তাপুর থানায় এভাবেই প্রতিনিয়ত চলছে বানিজ্য। যদিও মামালাটির ভিকটিমকে উদ্ধারে প্রশাসনের কোন তৎপরতাই পরিলক্ষিত হয়নি। ভিকটিম জীবিত নাকি মৃত সেটিও সঠিকভাবে জানাতে পারেননি জৈন্তাপুর থানার ওসি হারুন। তবে মামলাটি নিয়ে বানিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেন ওসি হারুন। তাছাড়া যে বাগানে ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছিল, সেটিও একটি ভিআইপি এলাকা। জানা গেছে ঐ বাগানের মালিক সিলেট ৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, তাহলে কি ঐ এলাকাটিও অরক্ষিত? যে স্থানে রাত পোহালেই পর্যটন প্রেমিকদের আনাগোনা। তাছাড়া হঠাৎ করেই এজহার বিহীন একটি মামলা নিয়ে জৈন্তা থানার পুলিশ এত মরিয়া হয়ে উঠায় জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এব্যাপারে এএসআই মশিউর জানান, কোন অভিযোগ না থাকলেও তার কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমান থাকায় এ ঘটনার মূল ধর্ষনকারী প্রমানিত হিসেবে শাহজানকে আটক করি। তবে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এবং জৈন্তাপুর থানার ওসি হারুন কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এদিকে গত শনিবার সুরমা টাইমস প্রতিনিধি দল সরেজমিন তদন্তে জৈন্তাপুর সদরে যাওয়ায় ওসির হারুনের বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভে ফেটে পড়েন সচেতন নাগরিক। পর্যটন এলাকায় ধর্ষনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবীতে ও নিরিহ জনসাধারণকে পুলিশি হয়রানী বন্দের দাবীতে সচেতন নাগরিক সমাজ ও জৈন্তাপুর প্রেসকাবের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ জৈন্তাপুর প্রেসকাবের সভাপতি শাহেদ আহমদ এর সভাপতিত্বে ও সমাজসেবী ইলিয়াছ উদ্দিন লিপু’র পরিচালনায় বক্তব্য রাখনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব আলী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জয়মতি রানী, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক মানিক, আলমগীর হোসেন, কামাল আহমদ, সহকারী অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জৈন্তাপুরের ডেপুটি কমান্ডার হাজি আনোয়ার হোসেন, সিদ্দেক আলী, দেলোয়ার হোসেন দিলু, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল মান্নান মনাই, জালাল উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল হান্নান, আব্দুর রহমান, নজির আহমদ, ইমাম উদ্দিন, শওকত আলী, সাংবাদিক নুরুল ইসলাম, গোলাম সারওয়ার বেলাল, আব্দুল হালিম, শাহজাহান কবির খান, আবুল হোসেন মোঃ হানিফ, রেজওয়ান করিম সাব্বির, সেলিম আহমদ, সমাজসেবী কুতুব উদ্দিন, মাসুদ আহমদ, সুভাস দাস বাবলু, সোহেল আহমদ, নাছির উদ্দিন, শাপলা রানী দাস, ফারজানা আক্তার প্রমুখ। এছাড়া উপজেলা মানব বন্ধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয় সু-শাসন প্রোগ্রাম, এফআইবিডিবি, স্বপ্নিল কাব দর্জিহাটি, জৈন্তিয়াপুর ইলেক্ট্রিশিয়ান কল্যাণ সংস্থা, বৃহত্তর জৈন্তা পাথর শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, রিস্কা চালক সমাবায় সমিতি জৈন্তাপুর, সিএনজি চালক শ্রমিক ইউনিয়ন, টমটম চালক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ সহ কয়েক সহ্রসাধিক জনতা।
মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তরা বলেন আমাদের উপজেলার একমাত্র পর্যটন এলাকা শ্রীপুর পিকনিক সেন্টার, শ্রীপুর পাথর কোয়ারী ও শ্রীপুর চা-বাগান। এছাড়া সিলেটের একমাত্র পর্যটন এলাকা প্রকৃতিকন্যা খ্যাত জাফলং। দেশী-বিদেশী হাজার হাজার ভ্রমন পিপাসুরা জাফলং ঘুরতে আসেন। এই সুবাদে তারা শ্রীপুর পর্যটন এলাকায় নামেন। এই সুযোগে একটি চক্রবেশ কিছু দিন থেকে শ্রীপুর এলাকায় পর্যটকদের ধর্ষন সহ নানা কু-কর্ম করে আসছে। মাস খানেক পূর্বে ভাইয়ের সাথে বেড়াতে আসা পর্যটক তরুনীকে গণধর্ষন করে এবং ভিডিও ধারন করে এলাকার তরুন যুব সমাজের হাতে ছেড়ে দেয়। ১৮খন্ডের ভিডিও চিত্র থেকে দেখাযায় উপজেলা জৈন্তাপুর ইউনিয়নের আসামপাড়া নয়াবস্তি গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে শাহজাহান মিয়া(২৮), কেন্দ্রি গ্রামের তালেব আলীর ছেলে আব্বাছ আলী(৪০), ১নংলীপুর গ্রামের হরমুজ আলীর ছেলে হবি মিয়া(৩০), ২নংলীপুর গ্রামের ওহিদ পুলিশের ছেলে ইমরান(২২), একই গ্রামের সুলতান আহমদ এর ছেলে দিলদার হোসেন(২৫), আসামপাড়া গ্রামের করিম ড্রাইভারের ছেলে দিলু ড্রাইভার(২৫), একই গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে জয়নাল ড্রাইভার(২৮), মন্তাজ আলীর ছেলে সোহেল ড্রাইভার(২৫), বাচ্ছু মিয়ার ছেলে মঈন উদ্দিন ড্রাইভার(২৮), আসামপাড়া পানবাড়ী গ্রামের হানিফ মোল্লার ছেলে হক মোল্লা(৩৫)। ভিডিও চিত্রের সূত্রধরে জৈন্তাপুর মডেল থানার এ.এস.আই মশিউর রাহমান মাসুদ গত ১লা আগষ্ট রাত ৯টায় আসামপাড়া নয়াবস্তি গ্রাম থেকে ধর্ষক শাহজাহান মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ধর্ষক শাহজাহান আটকের সংবাদ উপজেলা জুড়ে প্রচার হওয়ার পরই আলোচনায় স্থান পায় তরুনী ধর্ষনের ঘটনাটি। এনিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সচেতন নাগরিক সমাজ ও জৈন্তাপুর প্রেসকাব নেতৃবৃন্ধ সোচ্ছার হন। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় ব্যক্তির ইশারায় পুলিশ সাধারণ জনগণকে হয়রানী করার অভিযোগ উঠে। জগন্যতম এঘটনার ঘটনার দায় এড়াতে, পর্যটন এলাকাকে ধর্ষনমুক্ত এবং সাধারণ জনগনকে পুলিশি হয়রানী বন্ধ করতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানব বন্ধন পালিত হয়। বক্তারা আরও বলেন অভিলম্বে ভিডিও চিত্রে ফুটেজে যাদেরকে দেখা যাচ্ছে তাদেকে অভিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যতায় জৈন্তাপুরকে কলঙ্ক মুক্ত করতে কঠোর থেকে কঠোরতম আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।