নবীগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড : চাঁদাবাজদের কবলে ফিল্ডের উন্নয়ন কাজ ব্যাহত

ফাইল ফটো
ফাইল ফটো

নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ শেভরন বাংলাদেশ পরিচালিতনবীগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের উন্নয়ন কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজ চক্র গড়ে উঠেছে। প্রায় ২৩টি শ্রমিক সংগঠন নামক এ চক্র বিবিয়ানা এলাকা নিয়ন্ত্রন করছে। জানা যায় এ সমস্ত সংগঠন সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধনকৃত। কিন্তুসমবায় নীতিমালা অনুযায়ী কোন প্রকার কর্মকান্ডে তাদের সম্পৃক্ততা এলাকায় নেই। এসব সংগঠনগুলো হচ্ছে,বিবিয়ানা জন কল্যাণ শ্রমিক সমবায় সমিতি। নিয়ন্ত্রন করছেন,অধির দাশ,ইউপি সদস্য সজলু মিয়া, ইউসুপ আলী,আসাদ মিয়া,ইলাশ উদ্দিন প্রমূখ। পিরিজপুর শ্রমজীবি সমবায় সমিতি। নেতৃবৃন্দ হচ্ছেন,আব্দুল করিম,লুকমান হোসেন,কনর উদ্দিন প্রমূখ।ভাই ভাই সংগঠনের নেপথ্যে রয়েছেন আলী এন্টার প্রাইজের আলী হোসেন। বিবিয়ানা শাহজালাল সমিতির প্রধান হচ্ছেন হোসেন,আজকের জাহান গ্রাম উন্নয়ন সমিতির আজিম উদ্দিন তুহেল। বক্তারপুর শ্রমজীবি সংগঠনের আল আমীন,আব্দুস ছুপান,শুকুর আলী,সোলেমান আলী প্রমূখ। বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিয়োগকৃত বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের উপর অবৈধ অত্যাচার নিপিড়ন করে যাচ্ছে এসব চাঁদাবাজ চক্র। কাজের প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্তি শ্রমিক নিয়োগ,উচ্চ মুল্যে দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহ,উচ্চ মুল্যে ভাড়ায় গাড়ী সরবারাহ,যেখানে সেখানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের জনবলসহ গাড়ী আটকে রাখাসহ এমন কোন অনৈতিক কর্মকান্ড নেই যা তারা করছেননা। এ সমস্ত শ্রমিক সংগঠন নামক চক্র ঠিকাদারী প্রতিষ্টানদেরকে বাধ্য করছে। সম্প্রতি পিল নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহবুব আহমেদ এর উমরপুরস্থ বাস ভবনে এ সমস্ত সংগঠনের চাঁদাবাজ চক্র রাতে উপস্থিত হয়ে প্রতি মাসে তাদেরকে এক লক্ষ টাকা করে চাঁদা দিবার প্রস্তাব দেয়। এ ঘটনায় মাহবুব আহমেদ এর প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম তাদের বিরোদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করলে ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির এস আই জাহাঙ্গীর আলম আলামীন নামক এক চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেন। পরবর্তীতে আরও একটি চাদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। দুটি মামলাই এফ আই আর করা হয়েছে। প্রথম অবস্থায় পুলিশ গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রাখলেও বর্তমানে অঞ্জাত কারনে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বর্তমানে আসামীরা জামিনে বেরিয়ে এসে শ্রমিক স্বার্থ নামক ব্যানারে মিটিং মিছিল করে মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছে। সরেজমিনে জানা গেছে এসব শ্রমিক সংগঠনগুলো পরিচালিত হয় চাঁদাবাজ দ্বারা। অনেকই ডাকাতি ও হত্যা মামলার আসামী। তারা স্থানীয়দের চাকুরী দিবার কথা বললেও টাকার বিনিময়ে অন্য জেলা থেকে লোক নিয়োগ দিয়ে থাকে এবং এসব শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা নেয়া হয় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। এলাকাবাসী জানান,বিবিয়ানা প্রকল্পে প্রায় ৭’শত জন স্থানীয় শ্রমিক গত দেড় বছর যাবত বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্টানে কর্মরত আছে এবং এদের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ শ্রমিক মাসিক চাদা দিতে হয় এসব শ্রমিক সংগঠনগুলোকে। যার ফলে একের পর এক শ্রমিক সংগঠনের জন্ম হচ্ছে। এলাকাবাসী আরও বলেন,অতি সম্প্রতি প্রশাসন কিছু প্রদক্ষেপ নিয়ে ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আবার ঝিমিয়ে পড়েছে। এই সুযোগে চাঁদাবাজ চক্র নিজেদের চাঁদাবাজি,রাজত্ব কায়েম রাখার জন্য তথাকথিত শ্রমিক স্বার্থ নামে মিছিল মিটিং করে বিবিয়ানা উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করছে। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে এলাকার বিশিষ্টজনরা বলেন,বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড সংশ্লিষ্ট এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ট জনগন। গ্যাস ফিল্ডে চাকুরীর সুযোগ,বাড়ী ভাড়া,ব্যবসা বানিজ্য ও শেভরন পরিচালিত সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রাপ্ত সহায়তা বিশেষ করে শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও জীবিকা উন্নয়নে ব্যাপক ভিত্তিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কিন্ত মুষ্ঠিমেয় কিছু সংখ্যক দূর্বৃত্তদের কারনে বিবিয়ানা এলাকায় কর্ম পরিবেশ এবং সামাজিক পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। তারা আশা করেন প্রশাসন দ্রুত কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং বিবিয়ানা এলাকায় কর্মময় পরিবেশ নিশ্চিত করবেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন,এলাকার লোকদের চাকুরী ও ব্যবসা বানিজ্য দাবী আদায়ের লক্ষ্যে কিছু সংখ্যক দূর্বৃত্ত শেভরন কর্মকর্তা ও অন্যান্য ঠিকাদারী প্রতিষ্টানকে নিয়ে অপপ্রচার ও বিভিন্ন হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ও অত্র এলাকায় ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের দাবীর নামে এলাকার জনগনকে সম্পৃক্ত করে উল্লেখিত চক্রটি বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের কর্মকান্ড ব্যাহত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের পায়তারা করে যাচ্ছে। দায়েরকৃত চাঁদাবাজির মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির এস আই জাহাঙ্গীর আলম বলেন,মামলার প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত অব্যাহত আছে। এক জনকে গ্রেফতার ও করা হয়েছে। পিল কোম্পানীর চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন,আমরা বিবিয়ানা এলাকায় এসেছি কাজ করতে। সে হিসাবে এলাকার সবাই আমাদের আপন জন। তাদেরকে অনেক সহযোগিতা করার পরও চাঁদা চাওয়াটা দুঃখ জনক। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও ইনাতগঞ্জ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শকদিল হোসেন বলেন,চাঁদাবাজ চক্র সমিতির নাম দিয়ে ব্যবসা বানিজ্য করার জন্য শেভরন ও পিলসহ বিভিন্ন কোম্পানীকে কোনটাসা করে চাঁদা দাবী করে আসছে। এলাকার কোন লোক এদেও বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনা। তিনি এসব চাঁদাবাজ চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানান।