যে জাতি নিজের অবস্থা বদলায় না, আল্লাহ তাদের অবস্থা বদলান না

sadকুরআনে আল্লাহ সুবানাহু তায়ালা বলেছেন যে, যে জাতি বা যারা নিজের অবস্থা বদলায় না, আল্লাহ সে জাতির বা তাদের অবস্থা বদলান না। আসলে কুরআনকে বিশ্বাস করতে হবে।এটা একটা বাধ্যতা। তবে এটা হলো আল্লাহ-র দেয়া কোটি কোটি অসংখ্য বাস্তবতার মাঝে একটি বাস্তবতা। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাবিশ্ব এবং এর প্রতিটি নিয়ম বা বাস্তবতা তৈরী করেছেন। এই সব বাস্তবতার মাঝে একটি বাস্তবতা হলো যদি কিছু পেতে চাও তবে তা ধারণ করার যোগ্য হও। অর্থাৎ আগের নিজের ভিতরকে বদলাও, নিজের গুনকে বদলাও। তাহলে আল্লাহ-র নিয়ম হচ্ছে আল্লাহ তোমাকে তোমার প্রাপ্য দিবেন। এটা আল্লাহ-র নিয়ম। আল্লাহ এটাই এই বিশ্বের নিয়ম করে দিয়েছেন। যে যোগ্যতা অর্জন করে না, আল্লাহ তাকে দেন না। কারন যদি আল্লাহ তাকে দেন তবে যোগ্যতা না থাকার কারনে সে তা ধরে রাখতে পারবে না। ফলে আল্লাহ যদি তাকে দেনও তবে সে নিজের অবস্থা পাল্টাতে পারবে না। আর আল্লাহ-র নিয়ম হচ্ছে কেউ যদি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে তবে আল্লাহ-র সিস্টেম এমন যে, সে পেয়ে যাবে। কারন আল্লাহ-র নিয়ামত সর্বত্র ভরা এবং এর কোন শেষ নেই। একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ধরুন কোন একটি স্থানের মাটি সর্বত্র সমান। সেখানে যখন বৃষ্টি হয় তখন সব পানি গড়িয়ে নদী ও খালে চলে যায়। এখন ধরুন ঐ সমতল স্থানটিতে পুকুর বানানেরা উদ্দেশ্যে খুর্তে মোটামোটি বড় একটি স্থান গর্ত করা হলো। এখন ঐ এলাকায় যখনই বৃষ্টি হবে তখনই কোন সমতল স্থানে পানি জমবে না, কিন্তু ঐ গর্তে পানি জমে ভরে যাবে। এটাই আল্লাহ এই মহাবিশ্বে নিয়ম করে দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি কোন কিছু ধারণ করার জন্য উপযুক্ত গুণ অর্জন করে তখনই আল্লাহ-র নিয়ামত সেখানে চলে আসে। সময়ে একটু কম বেশী হলেও হতে পারে। তবে গুণ অর্জন করলে আল্লাহ-র নিয়ামত আসবেই। কারন আল্লাহ-র নিয়মত সর্বত্র বিরাজমান। শুধুমাত্র তা ধারণ করার জন্য উপযুক্ত কারণ, গুন বা যোগ্যতা তৈরী করতে পারলেই আল্লাহ-র নিয়ামত সে পেয়ে যায়।

যোগ্যতা অর্জন না করলে যে কেউ পেলেও ধরে রাখতে পারে না, এর একটি বাস্তব উদাহরণ দেখা যাক। ইংল্যান্ডে লটারিতে ১ মিলিয়ন পাউন্ড বা ১০ কোটি টাকা জিতেছে এমন ১০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। সাক্ষাৎকারে তাদের জিজ্ঞেস করা হয় যে লটারী জেতার পূর্বে আপনাদের অবস্থা কেমন ছিল এবং এখন কেমন ? তখন তারা বললো আগে যা ছিল এখনও তাই ( অর্থাৎ গরীব বা সাধারন)। শুধুমাত্র মাঝখানের কিছু সময় অনেক বড় বড় হোটেলে থেকেছি, খেয়েছি, আনন্দ-ফূর্তি করেছি। কেন ১০ কোটি টাকা পাওয়ার পূর্বে যা ছিল এবং বর্তমানে তাই হলো? কারণ তাদের মধ্যে এত টাকা ধারন করে তা ধরে রাখার যোগ্যতা ছিলনা। ফলে সব টাকা তাদের জীবনে সাময়িক সুখ এনেছে। কিন্তু তাদের অবস্থা আগে যা ছিল, পরে তাই হয়ে গেছে। যেমন বৃষ্টি সমতল ভূমিকে সাময়িক আদ্র করে। সমতল ভূমি আগে যা থাকে পরে তাই-ই হয়ে যায়। সব পানি গিয়ে জমা হয় গর্ত হওয়া পুকুরে , খালে ও নদীতে। এখন একটি প্রশ্ন হতে পারে কোন ভালো কিছু যেমনঃ সম্পদ বা সম্মান বা ক্ষমতা ধারণ করার যোগ্যতা কিভাবে কেউ অর্জন করবে? সমতল ভূমিকে পানি ধারণের যোগ্য করতে হলে যেমন খুড়তে হয় বা কষ্ট সহ্য করতে হয়। তেমনি সম্পদ বা সম্মান বা ক্ষমতা ধারনের যোগ্যতা অর্জন করতে হলে পরিশ্রম করতে হবে বা কষ্ট সহ্য করতে হবে। কষ্ট না করলে ধনী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করা আদরের সন্তান বিশাল ধন-সম্পদ পেয়েও ধরে রাখতে পারে না। বেশী ভাগ প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি তার প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর তাদের নিজেদের মাঝে বেশী দিন টেকে না। কারো কারো ক্ষেত্রে টেকে । তবে বেশী ভাগের ক্ষেত্রে কিছু দিনের মধ্যে তা অন্যের হয়ে যায় অথবা দু’এক জেনারেশনের মধ্যে তা হারিয়ে যায়। অন্যদিকে সাধারন মানুষরা কঠোর পরিশ্রম ও কষ্ট করে বিশাল বিশাল প্রতিষ্ঠান ধারণ করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন এবং যুগকে নেতৃত্ব দেয়া বিশাল বিশাল কোম্পানি তৈরী করেছেন। এক ব্যক্তি নিছক পেয়াজু বিক্রি করে ঢাকা শহরের প্রতিষ্ঠিত স্থানে বিশাল বাড়ির মালিক হয়েছেন। বিশ্বের সেরা সেরা ধনী ব্যক্তিদের অধিকাংশই উত্তরাধিকার নয় বরং খুব সাধারণ অবস্থা থেকে কষ্ট-পরিশ্রম করে যোগ্যতা সৃষ্টির মাধ্যমে বড় হয়েছেন। বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট, কার্লস স্লিমদের মত মানুষরা। আসলে এটা আল্লাহ-রই নিয়ম, এই বিশ্বে আল্লাহ এটাকে বাস্তবতা বানিয়েছেন যে, কোন ব্যক্তি বা জাতি যদি নিজের বা নিজেদের অবস্থা বা গুনকে পরিবর্তন করে তবে তাদের বাহ্যিক অবস্থাও পরিবর্তিত হয়ে যাবে। তাই আমরা যদি ধনী হতে চাই, দেশকে নেতৃত্ব দিতে চাই বা সকলের কাছে সম্মানের যোগ্য হতে চাই তবে আমাদের তা হওয়ার জন্য পূর্বে নিজেদেরকে তা ধারণ করার জন্য যোগ্য হতে হবে বা সেরকম হওয়ার গুণ অর্জন করতে হবে। যদি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা কাজ করে যাই, বিভিন্ন প্রতিকূলতা, বাধা, বিপত্তির সম্মুখীন হয়ে ধৈর্য্য ধারণ করি এবং কাজ অব্যাহত রাখি তবে আমাদের ভিতরটা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হবে বা প্রয়োজনীয় গুণ ও যোগ্যতা আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হতে থাকবে। আর যখন এর পূর্ণতা পাবে অর্থাৎ আমরা ধারণ করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠবো তখন আল্লাহ-র দেয়া বিধান অনুযায়ী আমাদের বাহ্যিক অবস্থার পরিবর্তন হয়ে যাবে। এটাই নিয়ম। আর বুঝাইতো গেল যে, ধারন করার যোগ্যতা বা গুণ ছাড়া যদি আল্লাহ-র নিয়ামত বা বৃষ্টি ধারা বর্ষিত হয় তবুও আমরা তা ধরে রাখতে পারবো না।

-মুহাম্মদ আবু শাহাদাৎ
01684858890