তাহিরপুরে গ্রেফতার আতংকে দু’গ্রাম পুরুষ শুন্য
ফের সংঘর্ষের আশংকায় দু’প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সদরে দু’গ্রামবাসীর মধ্যে এক দফা সংঘর্ষের পর ফের সংঘর্ষের আশংকায় গত ৩দিন ধরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে পুলিশী গ্রেফতার আতংশে দু’গ্রাম পুরুষ শুণ্য হয়ে পড়েছে। উপজেলা সদর ইউনিয়নের বীরনগর ও জয়নগর গ্রামের দু’পক্ষের প্রভাবশালী লোকজনের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলা পাল্টা হামলা ও লুটপাঠের ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকায় চরম আতংক বিরাজ করছে। অতীতে এসব গ্রামের লোকজন কতৃক জলমহাল ও গ্রাম্য কোন্দলে একাধিক হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহত ছাড়াও একাধিক প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, উভয় পক্ষের লোকজন ফের সংঘর্ষ ঘটাতে নিজেদের বলয়ে বহিরাগত পেশাদার সন্ত্রাসীদের এনে জড়ো করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, উপজেলা সদর ইউনিয়নের বীরনগর ও জয়নগর গ্রামের লোকজনের মধ্যে বেশকিছু দিন পুর্বে পার্শ্ববর্তী হাওরে ছাই দিয়ে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে কথাকাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে বীরনগর গ্রামের আলকু মিয়া, নুরহোসেন, ছালাম পক্ষদ্বয়ের আজিজ মিয়ার ধানের মিল ঘর , প্রবাসী সাজিদুর রহমান সহ বেশ কয়েকটি পরিবারের ঘরবাড়িতে গিয়ে প্রতিপক্ষের স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল, রবিউল্লাহ ও মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে গত বৃহস্পতিবার ভোরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাঠ চালায়। হামলা করে ধান চাল ও ঘরের স্বর্ণালংকার লুটপাঠ করে নিয়ে যাওয়া ছাড়াও ব্যাপক ভাংচুর ও তান্ডব চালায়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হলে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। সংঘর্ষে গুরুতর আহত ১ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং অন্যান্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আনলেও বিকেলে এ ঘটনায় দু’গ্রামের লোকজন দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে ফের সংঘর্ষের জন্য দেশীয় অস্ত্র স্বশ্ব নিয়ে সংগঠিত হতে দেখে সুনামগঞ্জ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হলে পরিস্থিতি ফের কিছুটা শান্ত হয়। এদিকে এ নিয়ে ঘোলা পানিতে ফায়দা লুটতে একটি মহল সংঘর্ষ উস্কে দিতে সিলেটি – আবাদী সংঘর্ষের রুপ দিতে চাইলে শুক্রবার উপজেলা গণ মিলনায়তনে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হক, উপজেলার ৭ ইউপি চেয়ারম্যান, আ’লীগ বিএনপি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে পুলিশ আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রনের স্বার্থে এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ঘটনার জন্য প্রকৃত দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খাঁন, আতাউর রহমান, বোরহান উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, বিশ্বজিৎ সরকার, সবুজ আলম, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.আনিসুর রহমান খাঁন সহ আ’লীগ বিএনপি উভয় দলের নেতৃবৃন্ধ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বৈঠকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিলেটি-আবাদী গ্রুপের সংঘর্ষ নামে অহেতুক কোন নাঠক সাজানো থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহবান জানানো হয়। বৈঠকের পর পরই বীরনগর ও জয়নগর গ্রাম পুরুষ শুন্য হয়ে পড়ে। এ দুটি গ্রামে শ্রুক্রবার রাত থেকেই মহিলা ও শিশুরা ছাড়া কোন পুরুষ লোকের অস্থিত্য পাওয়া যায়নি। তবে সংঘর্ষ ঘটানোর অপচেষ্টায় উভয় পক্ষের লোকজন আশে পাশের গ্রাম গুলোতে নিকটআত্বীয়ের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষ ঘটাতে নিজেদের বলয়ে বহিরাগত পেশাদার সন্ত্রাসীদের এনে জড়ো করছে। যে কোন সময় চোরাগোপ্তা হামলার আংশকায় রয়েছে। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.আনিসুর রহমান খাঁন জানান, এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়াও কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, যে কোন ধরণের অপতৎপরতা, সংঘর্ষ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঠেকাতে দু’প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এছাড়া খারাপ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িতদের ধরিয়ে দিতে জনগণের সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে।