নিশ্চুপ তথ্য মন্ত্রণালয়, নির্দ্বিধায় প্রচার হচ্ছে হিন্দি গান
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অবাধে প্রচার করছে ভারতীয় হিন্দি ছবির গান। বিশেষ করে ঈদকে কেন্দ্র করে এই প্রচার জমে উঠেছে। চ্যানেল নাইন, চ্যানেল সিক্সটিন, এশিয়ান টিভি ও গান বাংলা চ্যানেলের বিরুদ্ধে হিন্দি ছবির গান প্রচারের অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ সাংস্কৃতিক অঙ্গন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের কথায় এ অবস্থা চলতে থাকলে তা নিয়মে পরিণত হবে এবং অন্য চ্যানেলগুলোও তা অনুসরণ করে পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে। অথচ এ ব্যাপারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলো ভারতীয় চলচ্চিত্র, গান, অনুষ্ঠান প্রচার করে দেশীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তাদের কাছে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে বেআইনি এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। বিভিন্ন চ্যানেলে অবাধে নিয়মিত হিন্দি ছবির গান ও অংশবিশেষ প্রচার করা হয়। যা এ দেশের শিল্প, সংস্কৃতি ও সরকারি নীতিমালার পরিপন্থী। বেশিরভাগ চ্যানেলেই ভারতীয় অনুষ্ঠান সুকৌশলে প্রচার করা হয়। সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বরা বলছেন, দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও ভারত আমাদের টিভি চ্যানেল সেখানে প্রচার করছে না, উপরন্তু এদেশে তাদের চ্যানেল রপ্তানি করে আমাদের শিশু-কিশোর ও যুবসমাজের মধ্যে অবক্ষয় সৃষ্টি করছে। ফলে তারা ভিনদেশীয় সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হচ্ছে এবং দেশীয় সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। টিভি চ্যানেলগুলোর এই ভারতপ্রীতিতে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠেছে। তাদের আশঙ্কা শুরুতেই বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর এই অপতত্পরতা রোধ করতে না পারলে অবস্থার অবনতি ঘটবে এবং দেশীয় সংস্কৃতি বলতে আর কিছুই থাকবে না।
প্রখ্যাত গীতিকার ও চলচ্চিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, যদিও সংস্কৃতির নির্দিষ্ট কোনো গন্ডি নেই তারপরেও বলবো আমাদের বাংলা গানের ভান্ডার যেহেতু স্বয়ংসম্পূর্ণ সেহেতু চ্যানেলগুলো হিন্দি গান কেনো প্রচার করবে। ভিনদেশি সংস্কৃতি প্রচার না করে দেশিয় গান বা অনুষ্ঠানকে প্রাধান্য দিলে দেশ উপকৃত হবে। বিদেশে আমাদের সংস্কৃতির প্রসার ঘটবে এবং পরিচিতি আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সংস্কৃতির হাজার বছরের সমৃদ্ধ একটি ইতিহাস রয়েছে একে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। বিদেশি অনুষ্ঠান প্রচার করা যায়। তবে তা আদান প্রদানের মাধ্যমেই করা উচিত। একতরফা বিদেশি গান বা অনুষ্ঠান শুধু আমরা প্রচার করবো তা দেশপ্রেমিক জনগনের কাম্য হতে পারেনা। তাই বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর এই মানসিকতা পরিহার করা উচিত। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের অভিযোগ শুধু ঈদ নয়, প্রায় সময়েই বিনোদন মূলক অনুষ্ঠান প্রচারের নামে কিছু টিভি চ্যানেল বলিউডের গান, ছবির অংশ বিশেষ অহরহ প্রচার করে যাচ্ছে। অথচ টিভি চ্যানেলর লাইসেন্স প্রদানের সময় সরকার যে নীতিমালার আলোকে দেশিয় বাংলা চ্যানেলের জন্য অনুমতি দেয় তা লংঘন করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও সরকার এ ব্যপারে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এদিকে ক্যাবল অপারেটররাও চ্যানেল প্রচারের ক্ষেত্রে হিন্দি চ্যানেলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থার অবসান চায় এখন সবমহল। দর্শকরা ঈদ আয়োজনে হিন্দি গানের অনুষ্ঠান দেখে বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, আমরা বাংলাদেশি চ্যানেল দেখছি নাকি ভারতীয় চ্যানেল দেখছি? কর্তৃপক্ষের মনিটিরিং-এর অভাবের কারণেই এ ধরণের অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের মতামত।