জগন্নাথপুরের ওসি আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আর অভিযোগ
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ক্ষমতাসীনদের তোষামোদ করার নানান অভিযোগ উঠেছে। দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্বে থাকা ওসি আসাদুজ্জামান প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলার প্রতিটি ঘটনায় নিয়মিত মামলা রেকর্ড করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। তিনি যোগদানের পর থেকে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, চাদাবাজি, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি খুনের ঘটনা ঘটলেও টাকা ছাড়া থানায় কোন মামলা রেকর্ড হয়না এটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া মদ, গাঁজা, হেরোইন ও পতিতা থেকে তিনি নিয়মিত মাসোহারা আদায় করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে দিন দিন আইন-শৃংখলার চরম অবনতি ঘটায় জনসাধারন হাঁপিয়ে উঠেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জগন্নাথপুর থানায় বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। এসব নামধারী আওয়ামী নেতাদের মাধ্যমে ওসি আসাদুজ্জামান লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। নিয়মিত মামলা কিংবা জিডি থেকেও বড় অংকের উৎকোচ আদায় করছেন দুর্নীতিবাজ ওসি আসাদুজ্জামান।
আসাদুজ্জামানের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। প্রধানমন্ত্রীর এলাকার লোক হওয়ায় তিনি দাপটের সাথে তার ঘুষ বানিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর তার সকল অপকর্মের সহযোগী এস আই লৎফুর রহমানও প্রকাশ্যে ঘুষ-দুর্নীতির মতো অপরাধ চালিয়ে গেলেও ওসির আস্থাভাজন হওয়ায় দিন দিন তার দুর্নীতির মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। টাকার বিনিময়ে নিরীহ লোকজনকে নির্যাতন, ফোনের মাধ্যমে প্রবাসীদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওসির জন্য উৎকোচ আদায় ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ।
প্রায় ২ বছর আগে জগন্নাথপুর থানায় যোগদানকৃত ওসি আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঝাড়– মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও পোষ্টারিং করে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে জগন্নাথপুরবাসী। এ প্রতিবাদ সভা এক পর্যায়ে গণজোয়ারে পরিণত হলে জগন্নাথপুর ছাড়তে বাধ্য হন আসাদুজ্জামান। প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলার টাকার মায়া ছাড়তে না পেরে পুনরায় এ উপজেলায় আসতে শুরু করেন ব্যাপক তোড়জোড়। অবশেষে পুলিশের কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের দালাল প্রকৃতি নেতাদের বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে পুনরায় জগন্নাথপুর উপজেলায় যোগদান করেন বিতর্কিত ওসি আসাদুজ্জামান।
এদিকে জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র, পৌর আওয়ামীলীগের সদস্য সচিব আবাব মিয়াকে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে এমন অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার ভোরে মামলা রেকর্ড করার মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় ওসির অনুগত আরেক দুর্নীতিবাজ এস আই লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধে একই গ্রামের আব্দুল জলিল নামের এক ব্যক্তি একটি মারামারি মামলা করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রহস্যজনক কারনে ঐ দিন রাতেই তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে রাতের আধারে মামলা রেকর্ড করে ১০মিনিটের মধ্যে গ্রেফতারে পুলিশের এমন আচরণে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
প্যানেল মেয়র আবাব মিয়ার স্বজনরা জানান, আবাব মিয়া সম্পূর্ন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তার বিরুদ্ধে জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলে আসছিল। মারামারি কিংবা কোন ঘটনা ছাড়াই প্রতিহিংসা মূলকভাবে তাকে আসামি করে রাতারাতি গ্রেফতার করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা রেকর্ড করে গ্রেফতার করায় দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের অপসারন দাবী করেন তারা।